রক্তচাপের বিভিন্ন সাধারণ ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বাড়তে পারে বিষণ্নতার ঝুঁকি- এমনই তথ্য ওঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়। 'উপসালা ইউনিভার্সিটি'র নতুন এক সমীক্ষায় গবেষকরা বলছেন, হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের 'বিটা বস্নকার' নামের যে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে তা কেবল যে স্বাভাবিক হার্টওয়ালা ব্যক্তিদের জন্য অপ্রয়োজনীয়, তাই নয় বরং তাদের বিষণ্নতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
গবেষকদের মতে, বিটা বস্নকার বা-বস্নকার হচ্ছে এমন এক ধরনের ওষুধ, যা হার্টের অস্বাভাবিক স্পন্দন নিয়ন্ত্রণে ও প্রথমবার হার্ট অ্যাটাকের পর হার্টকে পুনরায় অ্যাটাকের ঝুঁকি থেকে রক্ষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসাতেও ব্যবহার হয় এই ওষুধ। হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের সাধারণত বিটা বস্নকার ওষুধ দেওয়ার কারণ, তাদের হার্টের ওপর অ্যাড্রিনালিন হরমোনের বিভিন্ন প্রভাব বস্নক করতে সাহায্য করে এটি, যা সহায়তা করে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে ও রক্তচাপ কমাতে।
তবে হার্ট অ্যাটাকের পরেও যাদের হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক আছে এমন রোগীদের ক্ষেত্রে এ ওষুধের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সাম্প্রতিক এই গবেষণায়।
ভবিষ্যতে তাদের বেঁচে থাকা বা পুনরায় হার্ট অ্যাটাক ঠেকানোর ক্ষেত্রে এই চিকিৎসা পদ্ধতি কার্যকর নয় বলেও প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।
গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল 'ইউরোপিয়ান হার্ট জার্নাল : অ্যাকিউট কার্ডিওভাসকুলার কেয়ার'-এ।
গবেষণায় দেখা গেছে, হার্ট ফেইলিওর নেই এমন রোগীদের বিটা বস্নকার ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা দিলে তাদের বিষণ্ন্নতার বিভিন্ন লক্ষণ খানিকটা বেড়ে যেতে পারে। স্বাভাবিক হৃদস্পন্দন ও হার্ট অ্যাটাকের রোগীদের জীবন বাঁচাতে কার্যকর নয় এ ধরনের ওষুধ, বলেছেন 'উপসালা ইউনিভার্সিটি'র কার্ডিয়াক সাইকোলজি বিভাগের পিএইচডি শিক্ষার্থী ও গবেষণার প্রধান লেখক ফিলিপ লেইসনার।
তিনি বলেন, 'এর বদলে, হৃদরোগে আক্রান্তদের মেজাজ পরিবর্তন ও বিষণ্নতা'সহ অপ্রয়োজনীয় নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বিটা বস্নকার।'
আগের বিভিন্ন গবেষণা ও ক্লিনিকাল অভিজ্ঞতায় ইঙ্গিত মিলেছে, বিষণ্নতা, ঘুমের স্বল্পতা ও দুঃস্বপ্নের মতো নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বিভিন্ন বিটা বস্নকার।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে সুইডেনে হওয়া গবেষণায় দেখা গেছে, রোগীদের মধ্যে পুনরায় হার্ট অ্যাটাক ঠেকাতে ও মৃতু্যর আশংকা কমানোয় 'সাহায্য করে না' বিটা বস্নকার। তাই এ ওষুধের বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে আরও গবেষণা করেছেন 'উপসালা ইউনিভার্সিটি'র গবেষণা দলটি।
গবেষকরা ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রয়েছে এমন ৮০৬ জন হার্ট অ্যাটাকের রোগীকে নিয়ে পরীক্ষা চালান। তাদের মধ্যে অর্ধেক রোগীকে বিটা বস্নকার ওষুধ দিলেও বাকি অর্ধেককে এ ওষুধ দেননি চিকিৎসকরা।
গবেষণায় ওঠে এসেছে, যেসব রোগীরা বিটা বস্নকার ওষুধ নেন তাদের মধ্যে বিষণ্নতার বিভিন্ন লক্ষণ আরও তীব্র ও জোরালো।
লেইসনার বলেন, 'এ ধরনের ক্ষেত্রে হার্টের সরাসরি কোনো উপকার না করলেও বিষণ্নতার ঝুঁকি বাড়ানো'সহ দেহে নানা অপ্রয়োজনীয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে বিটা বস্নকার।'