ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন মাস পূর্তি উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীতে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচির মধ্যে ছিল আহত ও শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যদের সঙ্গে সশরীরে যোগাযোগ করা, তাদের সার্বিক খোঁজখবর নেওয়া, আর্থিক সহায়তা বা চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ সংগ্রহ করা, রাষ্ট্রসংস্কারে মতামত ও পরামর্শ সংগ্রহ করা, জুলাই বিপস্নবের দুর্বিষহ স্মৃতি সংরক্ষণ করা, শহীদদের কবর জিয়ারত ও দোয়ার আয়োজন। এছাড়া এইদিনে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন পৃথক কর্মসূচির আয়োজন করে।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রায়েরবাজার কবরস্থানে জুলাই বিপস্নবের গণকবর জিয়ারত ও পরিদর্শন করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে এই বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে অন্তত ১২৭ জনকে গণকবর দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। তবে এই মরদেহগুলো কবে কীভাবে শনাক্ত করা হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি। এ ব্যাপারে সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা। সমন্বয়ক রিফাত রশীদ অভিযোগ করেন, 'রাজনৈতিক দলগুলো আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, 'এখনো অনেক পরিবার হারানো স্বজনদের খুঁজে পায়নি। যে গণহত্যা চালিয়েছে, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। গণকবর শনাক্তে সরকারের পক্ষ থেকে পরিষ্কার কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ডিএনএ টেস্টসহ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরিচয় শনাক্ত করে তালিকা তৈরি করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি তোলেন তিনি।'
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য-সচিব আরিফ সোহেল বলেন, 'শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করবেন না। রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। মুজিববাদকে ধারণ করছে। এখনো বিশ্বাস করতে চাই, রাজনৈতিক দলগুলো জনআকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করবে।'
দোসররা আ'লীগকে রক্ষার চেষ্টা চালাচ্ছে : জাতীয় নাগরিক কমিটি
এদিকে রাষ্ট্রের বিভিন্ন কাঠামোতে আওয়ামী লীগের দোসররা বহাল তবিয়তে থেকে দলকে রক্ষা করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা। শুক্রবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই বিপস্নবের ১০০তম দিনে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে নেতারা এই কথা বলেন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, 'রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রশাসনিক জায়গায় বিভিন্ন পোস্ট রয়েছে, সেখানে ফ্যাসিবাদে দোসররা বিরাজমান। তারা ভেতর থেকে আওয়ামী লীগকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অতি দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে বু্যরোক্রেসি, আর্মি,র্ যাব, পুলিশ ও আমলাতন্ত্র যেখানে ফ্যাসিবাদের দোসর এখনো বিরাজমান, তাদের বিদায় করতে হবে।'
তিনি বলেন, 'যদি এমন ধারণা হয় যে, আমলাতন্ত্রে যারা সিনিয়র রয়েছেন, যারা খুনের নির্দেশ দিয়েছেন, তাদেরকে যদি প্রাধান্য দেওয়া হয় তাহলে হয়তো আরও একটি যুদ্ধে নামতে হবে। আগামী দিনে ছাত্ররা প্রশাসন চালাবে, সচিবালয় চালাবে। সেই জায়গাগুলো থেকে জনগণের শক্তির যে কেন্দ্রবিন্দু আছে সেই কেন্দ্রবিন্দুতে আমরা আবারও ব্যাক করতে বাধ্য হব।'
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন রাজনৈতিক দল টাকার বিনিময়ে, মামলার বিনিময়ে যেভাবেই হোক একটা পলিটিক্যাল সেটেলমেন্টে গিয়েছেন। সেগুলো সমাজের কাছে স্পষ্ট। বিপস্নবের মাধ্যমে ছাত্র-জনতার রাষ্ট্র রূপান্তরে আপনারা যদি বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তাহলে আগামী নির্বাচনে গণ-অভু্যত্থানের মতো তরুণদের একটি ব্যালট বিপস্নব হবে।'
জুলাই বিপস্নব নিয়ে তিনি বলেন, 'আহতদের নিয়ে কোনো রাজনীতি করা চলবে না। শহীদদের নিয়ে কোনো রাজনীতি চলবে না।'
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য মশিউর রহমান বলেন, 'শেখ হাসিনার পতন হলেও তার পা ছুঁয়ে সালাম করা রাষ্ট্রপতিকে আমরা পদত্যাগ করাতে পারিনি। বাকশালের মূলনীতি আর সংবিধানের মূলনীতি এক। সেই সংবিধান দিয়ে কী রাষ্ট্র চলবে? ছাত্ররা যখন বলছে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ করতে হবে, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলছে রাষ্ট্রপতিকে চাপ দিয়ে কাজ করানো যাবে, উনি থাক। তারা নির্বাচন দিয়ে দ্রম্নত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসতে চায়।'
জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য আকরাম হুসেইন বলেন, 'আওয়ামী লীগকে যারা ফ্যাসিস্ট বলতে ভয় পায়, তাদের বাংলাদেশের মাটিতে রাজনীতি করার অধিকার নেই। আওয়ামী লীগ ফ্যাসিবাদকে দেশ থেকে চির নির্মূল করা না পর্যন্ত আমাদের লড়াই সংগ্রাম চলবে।'
জামায়াতের মিছিল
এদিকে, ঢাকা মহানগরী উত্তর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রূপনগর থানা ফ্যাসিবাদ পতনের ১০০ দিন উপলক্ষে ঢাকার রূপনগরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে।
থানা জামায়াতের সেক্রেটারি মোশাররফ হোসেন ভূঁঁইয়ার পরিচালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী রূপনগর থানার আমির মো. আবু হানিফ। এছাড়া পলস্নবী দক্ষিণ থানা আমির মো. আশরাফুল আলম, পলস্নবী মধ্য থানা আমির আবুল কালাম পাঠানসহ থানা কর্মপরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম, হাসান মো. ইউসুফ, হাসানুল বান্না চপল, ইঞ্জি. মো. মিজানুর রহমান, দেওয়ান মো. শাহজাহান, সাইফুল ইসলাম, নুরুন্নবী মানিক, লতিফুল খাবিরসহ থানার সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথি বলেন, 'সহস্রাধিক শহীদ ও হাজার হাজার আহতের বিনিময়ে অর্জিত ২য় স্বাধীনতা রক্ষায় ছাত্র-জনতা নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে। সমাজের সব স্তর থেকে ফ্যাসিবাদের বীজ উপড়ে ইসলামী সুমাহান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।'
তিনি আরও বলেন, 'ফ্যাসিবাদ আমলের চাঁদাবাজি প্রথা বিলুপ্ত করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের সিন্ডিকেট ভেঙে সব পণ্য সর্বসাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে।'
রূপনগর থানার ঘরোয়া মোড় থেকে শুরু করে মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে রূপনগর চলন্তিকা মোড়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।