এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ ফলাফলে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। ফলাফলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে এক হাজার ৩৩০ শিক্ষার্থীর জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে ৮৪৬ জনের। কুমিলস্না বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ৩৩১ জনের। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩৬ জন শিক্ষার্থী। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন আলিম পরীক্ষায় ৩৬ জনের ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ঢাকা বোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছেন ১৩৭ জন। নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২০০ জন। আর ফেল থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছেন একজন শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, 'গত ১৬ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জমা নেওয়া হয়। এবার ঢাকা বোর্ডে ৫৯ হাজার ৬৭৮ জন শিক্ষার্থী উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। অনেকে একাধিক বিষয় ও পত্রের উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করেন। সেই হিসাবে মোট এক লাখ ৮০ হাজার ৬০টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণ
করা হয়। তাতে এক হাজার ৩৩০ শিক্ষার্থীর ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে।'
গত ১৫ অক্টোবর এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। প্রথম প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ। এ বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ১৯০ জন।
ফল প্রকাশের পরদিন ১৬ অক্টোবর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন জমা নেওয়া হয়। তাতে ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ও মাদ্রাসা বোর্ড মিলিয়ে এক লাখ ৯২ হাজার ৪৮০ জন পরীক্ষার্থী পাঁচ লাখ এক হাজার ২৯৪টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন।
সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়ে ঢাকা বোর্ডে। আর সবচেয়ে আবেদন কম পড়ে মাদ্রাসা বোর্ডে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এক লাখ ৮৯ হাজার ৭৬৬ শিক্ষার্থী চার লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন। আর মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষার সাত হাজার ৮১৪টি খাতা পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেন দুই হাজার ৭১৪ জন।
শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, ফল পুনঃনিরীক্ষণে একজন শিক্ষার্থীর লেখা খাতা নতুন করে আবার মূল্যায়ন করা হয় না। চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করলে উত্তরপত্রের চারটি বিষয় দেখা হয়।
সেগুলো হলো- উত্তরপত্রে সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা ঠিক হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে তোলা হয়েছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে কি না। এ চার জায়গায় কোনো ভুল হলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়।
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসএসসি পরীক্ষার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণে এক হাজার ৮৪৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এরমধ্যে অনুত্তীর্ণ ১০১ পরীক্ষার্থী পাস করেছে, গ্রেড পরিবর্তন হয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে আরও ৬১ পরীক্ষার্থী। এ বোর্ডে পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন ২২ হাজার ৩২৪ জন পরীক্ষার্থী।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, 'এইচএসএসসিতে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ শেষে প্রাপ্ত নম্বর পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৮৪৬ জন পরীক্ষার্থীর। আর ফেল থেকে পাস করেছেন ১০১ জন। তবে এবার ফেল থেকে জিপিএ ৫ কেউ পায়নি।'
উত্তরপত্র পুনঃনীরিক্ষণে নম্বর বেড়েছে, তবু কৃতকার্য হতে পারেনি ৭১ শিক্ষার্থী। এছাড়া নম্বর বেড়েছে কিন্তু গ্রেড পয়েন্ট বাড়েনি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ২০৮ জন। গ্রেড পয়েন্ট বেড়েছে এমন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫৫৭ জন। গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু জিপিএ পরিবর্তন হয়নি এমন সংখ্যা ১২৯ জন। আর জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে এমন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২৮ জন।
এদিকে, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফলে দেখা গেছে, এতে ফেল থেকে পাস করেছেন ১০ শিক্ষার্থী। আর নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ছয় জন।
পুনঃনিরীক্ষণের ফলাফল অনুযায়ী, পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দুই হাজার ৭১৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেন। তারা সাত হাজার ৭৩৮টি পত্রের ফল চ্যালেঞ্জ করেন। এতে ৩৬ জনের ফলাফলে পরিবর্তন এসেছে। তার মধ্যে নতুন করে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ছয় জন। ফেল থেকে পাস করেছেন ১০ জন। এছাড়া জিপিএ পরিবর্তন হয়েছে আরও ১৩ জনের।