বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
সেমিনারে তারেক রহমান

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হতে পারবেন না

যাযাদি রিপোর্ট
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হতে পারবেন না
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা : ৩১ দফার আলোকে সংস্কার' শীর্ষক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন -যাযাদি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, 'তার দল ক্ষমতায় গেলে আগামীর বাংলাদেশে আর কোনো ব্যক্তি, এমনকি প্রধানমন্ত্রীও স্বেচ্ছাচারী হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারবেন না। কেউ জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে না, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না- এ বিষয়টি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে সরকারের প্রতিটি পর্যায়ে নিশ্চিত করা হবে।'

বৃহস্পতিবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে 'রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা : ৩১ দফার আলোকে সংস্কার' শীর্ষক অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে প্রথমে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের রূপরেখার পটভূমি তুলে ধরেন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিহউলস্নাহ।

তারেক রহমান বলেন, 'শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদের সময় আমরা তথাকথিত উন্নয়নের রাজনীতি দেখেছি। কিন্তু পতিত সেই রাজনীতির ভিত্তি ছিল দুর্নীতি, দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়ন। অন্যদিকে জনগণের ভোটে বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, আপনারা দেখতে পাবেন, আমাদের ৩১ দফার আলোকে, জনগণের ক্ষমতায়ন ও অংশীদারিত্বের রাজনীতি। আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি হবে আইনের অনুশাসন, মানবাধিকার এবং বাক স্বাধীনতা।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'আমরা যদি একটি নীতিভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো নিয়ে আসতে পারি, সারা পৃথিবী থেকে বেসরকারি বিনিয়োগ ও বেসরকারি মূলধন নিজ গতিতেই বাংলাদেশে আসবে। আমাদের পাবলিক সেক্টরের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে; দেশের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে।'

বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দল-মত নির্বিশেষে নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেন তিনি। তারেক রহমান বলেন, 'ঠিক যেভাবে আজ থেকে দুই দশক আগে,

\হবিএনপি সরকারের সময়, বাংলাদেশে মিডিয়া নির্ভয়ে সরকারের সমালোচনা করতে পারত, কার্টুন আঁকতে পারত। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে- আমাকে নিয়ে এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে, মিডিয়ার একাংশ ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করেছিল; মিডিয়া ট্রায়াল ও অপপ্রচার করেছিল। কিন্তু আমরা তার প্রতিদানে কোনো মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করিনি, কাউকে হেনস্তা করিনি, কোনো সম্পাদককে জেলে পাঠাইনি।'

আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন তুলে ধরে তিনি বলেন, 'গত ১৬ বছরে তার নিজের, বিএনপির এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তি তথা অনেকের ফ্রিডম অফ স্পিচ, ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন এবং ফ্রিডম অফ অ্যাসোসিয়েশন সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছে। সেই উপলব্ধিকে ধারণ করে, আমরা সব নাগরিক, বিশেষত মানবাধিকারকর্মী, সংবাদকর্মী ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সারদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করব।'

গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের সর্বোচ্চ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা উলেস্নখ করে তারেক রহমান বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য এমন একটি রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তোলা যেখানে ইউটিউব, ফেসবুক এবং তাদের অনলাইন পস্ন্যাটফর্মে নিজের ভাবনা প্রকাশের কারণে কিংবা প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির বিষয়ে মন্তব্যের দায়ে কাউকে যেন হেনস্তা করা না হয়। সত্য গোপন করতে মূলধারার ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেন বাধ্য না হয়। এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে সেটি প্রচারেও সরকার কাউকে চাপ দেবে না। তবে দেশ গঠনের দায়িত্ব সবার। আমরা গণমাধ্যমের নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা প্রত্যাশা করি।'

গত ১৬ বছরে গুম ও খুনের মাধ্যমে দেশে ভয়ের যে সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে তা বিএনপি নির্মূল করবে বলেও অঙ্গীকার করেন তারেক রহমান। তিনি স্পষ্টভাষায় বলেন, 'বাংলাদেশে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটি নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায় যাতে কেউ পরপরের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হতে পারে। আমরা আইন-বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে চাই। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রবর্তন করতে চাই।'

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য তরুণ বেকারদের কর্মসংস্থান। আর কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত যোগ্যতা অনুযায়ী বেকার ভাতা প্রবর্তন। আমরা নিশ্চিত করতে চাই সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ, তৃণমূলের ক্ষমতায়ন এবং আবারো ঐতিহাসিক খাল কাটা কর্মসূচি বাস্তবায়ন।' স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, শিক্ষা, জ্বালানি খাতে আমূল পরিবর্তন করে 'দক্ষ জনশক্তি, রপ্তানিমুখী শিল্প বৃদ্ধি এবং জাতীয় রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দলের পরিকল্পনাও তুলে ধরেন তিনি।'

তারেক রহমান বলেন, 'সব আলোচিত সংস্কার ৩১ দফায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি যে সংস্কারের মাধ্যমে সংবিধানের কয়েকটি বাক্যের পরিবর্তন নয় শুধু মাত্র, বরং মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। একজন মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা হবে এবং তার ও তার পরিবারের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি- যা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও পুরুষের বেকারত্বের সমস্যার সমাধান করবে। যে সংস্কার নারীদের সম্মান, স্বাধীনতা, ক্ষমতায় নিশ্চিত করবে, যে সংস্কার সব মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে, যে সংস্কার দেশের সন্তানদের আধুনিক শিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধ গঠন করবে, যে সংস্কার মানুষকে কাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্যসেবা দেবে, যে সংস্কার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম স্থিতিশীল রাখবে। আমি সংস্কার বলতে সেটিই বুঝি যা কৃষক-শ্রমিকসহ সব কর্মজীবী মেহনতী মানুষের ন্যায্য ও প্রাপ্য নিশ্চিত করবে।'

বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর সমন্বয়ের প্রণীত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে সবমত ও পথের সমন্বয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক-বৈষম্যহীন-সম্প্রীতিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ দুই টার্মে নির্ধারণ, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন, সুপ্রিম কোর্টের জন্য আলাদা সচিবালয়, ন্যায়পাল নিয়োগসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে কমিশন গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে।

গত বছরের ১৩ জুলাই সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা ঘোষণা করে বিএনপি। এর আগের বছর ২০২২ সালের ১৯ ডিসেম্বর তারেক রহমান রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ঘোষণা করেন।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় নেত্রী শামা ওবায়েদ ও ফারজানা শারমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জামায়াতে ইসলামীর রফিকুল ইসলাম খান, বাংলাদেশের বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, এনডিএমের ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, এলডিপির রেদোয়ান আহমেদ, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মাহবুব উলস্নাহ, অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান ও অ্যাডভোকেটে এলিনা খান বক্তব্য রাখেন।

সেমিনারে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নরওয়ে, পাকিস্তান, ভারত, জাপান, সৌদি আরব, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকসহ দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে