বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২
প্রেমিকা গ্রেপ্তার, হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি-পোশাক উদ্ধার

পূর্বাচল লেকে সাত টুকরো দেহটি ব্যবসায়ী জসিমের

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
  ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
পূর্বাচল লেকে সাত টুকরো দেহটি ব্যবসায়ী জসিমের
জসিমউদ্দিন মাসুম

নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের পূর্বাচল লেক থেকে উদ্ধার হওয়া পলিথিনে মোড়ানো ৭ টুকরা মরদেহটি নিখোঁজ থাকা ব্যবসায়ী জসিমউদ্দিন মাসুমের বলে নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মাসুম হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে রুমা আক্তার নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হ্যাকস বেস্নড ও নিহতের পরিধেয় সাফারি সু্যট উদ্ধার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য উলেস্নখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রতু্যষ কুমার মজুমদার জানান, গ্রেপ্তার রুমা আক্তার ময়মনসিংহের গৌরীপুরের তারাকান্দা এলাকার নজর আলীর মেয়ে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুমা এই হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে মাসুমের মরদেহের অন্যান্য অংশও খুঁজে পাওয়া গেছে।

পুলিশ সুপার বলেন, 'রুমার সঙ্গে শিল্পপতি মাসুমের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর মিরপুর শেওড়াপাড়া রুমার ভাড়া বাসায় মাসুমকে প্রথমে দুধের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়। এরপর তার মরদেহ চাপাতি ও হ্যাকস বেস্নড দিয়ে খন্ড খন্ড করে পাঠাওয়ের গাড়িযোগে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন রুমা।'

এর আগে বুধবার দুপুরে রূপগঞ্জে কুড়িল-কাঞ্চন সড়কের উত্তর পাশে পূর্বাচলের ৫ নম্বর সেক্টর থেকে ৭ টুকরা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের

পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল মর্গে লাশের পরিচয় শনাক্ত করেন।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ (অপরাধ) আব্দুলস্নাহ আল মাসুদ জানান, ৫৯ বছর বয়সি মাসুমের মালিকানায় নারায়ণগঞ্জের ফতুলস্নায় চাঁদ ডাইং নামে দুটি কারখানা রয়েছে। তিনি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন।

জসিমের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর বিকালে জসিম গাড়ি নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান যান। এরপর ব্যক্তিগত গাড়ি চালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন, অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় তার বড় ছেলে জিডি করেন।

নিহত জসিমের বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু বলেন, 'দাড়ি, নখ ও বাম পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকাল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। ফতুলস্নার কাঠেরপুল এলাকায় অবস্থিত চাঁদ ডাইং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রম্নতা আছে বলে জানা নেই।'

তিনি জানান, সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি তার মায়ের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। তবে রাতে তিনি বাসায় ফেরেননি। পরের দিন সকালে তার দুটি মুঠোফোন নম্বরে কল দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। কোথাও খোঁজ না পেয়ে রাতে গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তারা। পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে এসে তারা জসিমের মরদেহ শনাক্ত করেন।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লিয়াকত আলী বলেন, 'স্থানীয়রা সকালে লেকের পাড়ে তিনটি কালো পলিথিন ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে এক এক করে পলিথিনের ব্যাগগুলো খুললে একজন পুরুষের শরীরের মাথা, দুটি হাত, শরীরের পেছনের অংশ, নাড়ি-ভুঁড়ি, বাম পা, বাম উরুর কাটা অংশ বেরিয়ে আসে। তখন মরদেহের খন্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করা হয়।'

তখন ওসি লিয়াকত বলেন, 'ওই ব্যক্তি অন্তত তিন দিন আগে মারা গেছেন বলে ধারণা করছি। হত্যার পর তার দেহের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরা করে পলিথিন ব্যাগে ভরে লেকে ফেলে দেওয়া হয়।'

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতেও বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে