গণ-অভু্যত্থানে আহতদের নিয়ে সচিবালয়ে বৈঠক
৫ কর্মদিবসে চিকিৎসার রূপরেখা
প্রকাশ | ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গণ-অভু্যত্থানে আহতদের চিকিৎসায় আর কোনো ঘাটতি থাকবে না, অবহেলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো ৫ দিনের মধ্যে প্রকাশের সিদ্ধান্ত এসেছে সুচিকিৎসার দাবিতে বিক্ষোভে নামা ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনায়।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে আহতদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এসব তথ্য তুলে ধরেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসা বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে জুলাই-আগস্ট গণ-অভু্যত্থানে আহতদের পাশে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, আহতদের কার কোন দেশে চিকিৎসা নিলে ভালো উপশম আসবে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে দ্রম্নত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, 'আহতদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যে প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হলো তা আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিত আকারে প্রকাশ করা হবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি উদ্যোগগুলো দৃশ্যমান হবে। আমলাতান্ত্রিক স্থবিরতা থাকবে না। এ বিষয়ে কোনো গাফিলতি সহ্য করা হবে না। চিকিৎসাসেবা কিংবা অর্থপ্রাপ্তি যেকোনো ক্ষেত্রে গাফিলতির অভিযোগ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হবে, জড়িত ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।'
এ সময় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আহতদের মধ্যে এক ধরনের ট্রমা আছে, অনাস্থা আছে। কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেকগুলো সমস্যা এক সাথে মোকাবিলা করতে হয়েছে। এখন যেসব প্রতিশ্রম্নতি দেওয়া হয়েছে এগুলো আগেই ঠিক করা হয়েছিল। এগুলো দ্রম্নত বাস্তবায়ন করা হবে।'
আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে আহতদের চিকিৎসায় একটা রূপরেখা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
চিকিৎসা নিয়ে অবহেলা ও অন্যান্য ক্ষোভ জানাতে বুধবার দুপুর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালের সামনে শ্যামলী-আগারগাঁও সড়ক অবরোধ করে রাখে কোটা সংস্কার ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় আন্দোলনে আহতরা।
তারা সমন্বয়ক থেকে অন্তর্র্বর্তী সরকারে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদের সাক্ষাৎ না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
পরে গভীর রাতে সরকারের পাঁচজন উপদেষ্টা বিক্ষোভ স্থলে গিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা
\হতুলে ধরে তাদের শান্ত করে হাসপাতালে ফিরিয়ে আনেন।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আহতদের দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয় যা সাড়ে ৫টায় শেষ হয়।
বৈঠক শেষে জাতীয় কর্তব্য পালনে কেউ অবহেলা করবে না এমন আশা প্রকাশ করে উপদেষ্টা নাহিদ বলেন, 'আহত ও শহীদরা কোনো সরকারের সাথে সম্পর্কিত নয়, তারা রাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত। তাদের শ্রদ্ধা করা, সম্মান করা দেশের সব নাগরিকের দায়িত্ব। বর্তমান সরকারের জায়গা থেকে সেটা সব সময় দেখানো হচ্ছে। কিন্তু রাজনৈতিক আলাপে, মিডিয়াতে তাদের বিষয়ে কম উঠে আসছে।'
তিনি বলেন, 'এটা সরকারের নির্দেশনার বিষয় ছিল না, মিডিয়াগুলো তাদের নিজস্ব জায়গা থেকেই এটা করার কথা ছিল। জাতীয় কর্তব্য পালনে আমরা কেউ যেন অবহেলা না করি। শহীদ পরিবার ও আহতদের নিয়ে সরকারের ওপর দায় চাপিয়ে বাকিরা সবাই নির্বাচন নিয়ে আলাপ করতেছে।'
এদিন দুপুর ২টার কিছু সময় পর পূর্ব নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসেন ঢাকার পঙ্গু হাসপাতাল ও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আহতরা। এর বাইরে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া আহতরাও চলে আসায় তাতে বাদ সাধেন আগের রাতের বিক্ষুব্ধরা।
সভায় ক্ষোভ ও অনুযোগ জানাতে সচিবালয়ে এসে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত হয়ে পড়েন তারা।
বিকাল ৪টায় দেখা যায়, একপক্ষ বিক্ষুব্ধ হয়ে হলরুম ত্যাগ করেছেন। সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ ও সারজিস আলম বারবার চেষ্টা করেও তাদের শান্ত করতে পারছেন না।
আলোচনায় উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, শারমিন এস মুরশিদ, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুলস্নাহ এবং সমন্বয়ক ও জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম উপস্থিত ছিলেন।
আহতদের ৭ দফা দাবি
এ সময় আহতরা সাত দফা দাবি তুলে ধরেন। তাদের দাবিগুলো হলো-
গণ-অভু্যত্থানে আহত যোদ্ধাদের অতিদ্রম্নত মন্ত্রী বা উপদেষ্টারা আহত হলে যে মানের চিকিৎসা দেওয়া হতো সে মানের চিকিৎসা দিতে হবে।
গণ-অভু্যত্থানে যারা আহত হয়ে নিজ খরচে চিকিৎসা নিয়েছেন তাদের চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করতে হবে।
গণ-অভু্যত্থানে শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের সম্মাননা কার্ডের মাধ্যমে একটি প্রজন্ম পর্যন্ত মাসিক ভাতা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
গণ-অভু্যত্থানে শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের স্মৃতি ফাউন্ডেশন নামে জাদুঘর নির্মাণ করে প্রতি বছর ১ জুলাই হতে ৫ আগস্ট পর্যন্ত শহীদদের স্মরণে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে।
গণ-অভু্যত্থানে শহীদ হয়েছেন ও আহত হয়ে যারা অঙ্গ হারিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের মেডিকেল ফাইল তদন্ত করে কোনো ডাক্তার বা মেডিকেলের অবহেলার কারণ খুঁজে পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।
দ্রম্নত সময়ের মধ্যে গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগীদের বিচারের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করে সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
আগামীতে রাষ্ট্র সংস্কারে ২৪-এর গণ-অভু্যত্থানে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহত যোদ্ধাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।