'চিকিৎসা পাচ্ছেন না' বলে অভিযোগ তুলে রাজধানীর শ্যামলীর শিশু মেলা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ আটকে বিক্ষোভ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সৃষ্ট সহিংসতায় আহতরা ব্যক্তিরা। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, 'সামান্য চিকিৎসা দিয়ে সাড়ে তিন মাস ধইরা ওরা আমাগো ঘুরাইতেছে। সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা করতাছে না। উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত আমরা রাস্তা ছাড়ুম না।'
বুধবার দুপুরের পর থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিক্ষোভ চলছিল। এ সময় আন্দোলনকারীরা উপদেষ্টাদের হাজির হওয়ার জন্য আল্টিমেটাম দেন। তারা বলেন, রাত ১০টার মধ্যে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, তথ্য উপদেষ্টা, যুব উপদেষ্টা, সমাজ কল্যাণ উপদেষ্টাকে পঙ্গু হাসপাতালের সামনে উপস্থিত হতে হবে। এ ঘটনায় রাজধানীর মিরপুর রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ভোগান্তিতে পড়েন অসংখ্য মানুষ। পাশাপাশি অন্তত ছয়টি সরকারি হাসপাতাল থাকায় রোগীদের অনবরত আসা যাওয়া বেগ পেতে হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে যেতে দেন বিক্ষোভকারীরা।
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে এদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে 'জুলাই শহীদ ফাউন্ডেশন' এর পক্ষ থেকে আন্দোলনে নিহত মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। তিনি আহতদের সুচিকিৎসা ও প্রয়োজনে বিদেশে নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে বিক্ষোভকারীদের হৈচৈ এর মুখে স্নিগ্ধ কথা শেষ করতে পারেননি। বারবারই তাকে থেমে যেতে হয়।
আন্দোলনকারীরা স্নিগ্ধকে তাদের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আন্দোলনে অংশ নিতে অনুরোধ করেন।
রাস্তা আটকে এ বিক্ষোভের শুরু হয়েছিল বুধবার দুপুরে। দুপুর বেলায় সরকার পতনের আন্দোলনের সময় আহতদের দেখতে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান-নিটোরে (পঙ্গু হাসপাতাল) আসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অনেক আহতকে তিনি না দেখেই চলে যাচ্ছেন এমন অভিযোগ তুলে দুপুর থেকে রাস্তা আটকে দেয় আন্দোলনে আহত কয়েকজন ও তাদের সহযোগীরা। এ সময় অনেকে তার গাড়ির সামনে বসে পড়েন,
অনেকে আবার গাড়ির ওপরে উঠে দাঁড়িয়ে স্স্নোগান দিতে থাকেন।
উপদেষ্টা চলে যাওয়ার পর তারা পঙ্গু হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ফটক বরাবর রাস্তাটির দুই পাশ আটকে দেয়। রাস্তার উপর হুইল চেয়ার ক্রাচ হাতে কয়েকজন আহতকে বসে থাকতে দেখা যায়।
একাধিকবার তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও তারা উপদেষ্টারা না আসা পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও কথা বলবেন না বলে জানিয়ে দেন। তাদের দাবির বিষয়েও তারা বিবৃতি দেবেন না বলে জানান। দুই একজন এদিক-ওদিক দাঁড়িয়ে সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে মূল জমায়াতে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়।
খায়রুল নামে একজন বলেন, 'আমাদের চিকিৎসা হচ্ছে না। এ কারণে আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।'
খায়রুলের পায়ের গোড়ালির উপরে গুলি লেগেছিল বলে জানানি তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর এখনও তিনি ভালো করে হাঁটতে পারছেন না। আরও ভালো চিকিৎসা প্রয়োজন বলে দাবি তার।
সড়কে তাদের অবস্থানের মধ্যে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের এডিসি জিয়াউল হকের নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক দল সেখানে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কিছু উৎসাহী রিকশাচালক ও আশপাশের বস্তির শিশু-কিশোররাও যোগ দিয়েছেন। তারা কোনো গাড়ি রাস্তা দিয়ে যেতে দেননি।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা বলছিলেন, 'আমরা সাড়ে তিন মাস ধরে কষ্ট করতাছি। আমাগো চিকিৎসার ব্যবস্থা করতেছে না। উপদেষ্টা আইসা আমাগো না দেইখা চইলা যায়। আমরা গুলি খাইছি অথচ তিন মাস যাইতে না যাইতেই আমাগো কোনো দাম নাই। আমরা কষ্ট করতাছি আপনারাও একটু কষ্ট করেন।'
আরও অনেককে একইভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু যানজটে নাকাল মানুষ কোনো দিকে যেতে না পেরে বিরক্তি প্রকাশ করে বিকল্প পথ খোঁজে চলে যায়।