আদানির বকেয়া পরিশোধে কৃষি ব্যাংককে অনুমোদন

বিদু্যৎ সরবরাহ নেমেছে ৪৭ মেগাওয়াটে মাসে ১০০ মিলিয়ন করে মোট ৭৩২ মিলিয়ন ডলার পরিশোধের উদ্যোগ

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রেজা মাহমুদ
কয়েক মাস ধরেই আদানি পাওয়ারের বিদু্যৎ সরবরাহ নিম্নমুখী। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া জমায় ধারাবাহিকভাবে সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত ২ দিনে সরবরাহ নেমেছে ৫০ মেগাওয়াটের নিচে। তাই পরিস্থিতি উন্নয়নে আদানির বকেয়া ৭৩২ মিলিয়ন পরিশোধে কৃষি ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বিপিডিবির সূত্র মতে, মাসে অন্তত ১০০ মিলিয়ন ডলার হারে এই বকেয়া পরিশোধ করা হবে। এছাড়া দেওয়া হয়েছে আমদানিতে এক বছরের ব্যাংক গ্যারেন্টিও। চলতি সপ্তাহে বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে এই সংক্রান্ত একটি চুক্তি হয়েছে। ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি ব্যাংককে এই পাওনা পরিশোধের অনুমোদন দিয়ে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে আদানি পাওয়ারকে ১২ নভেম্বর থেকে বকেয়া পরিশোধ শুরু করতে বলা হয়েছে। আদানিকে ডলার পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে সরকারের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ও বিদু্যৎ বিভাগ থেকে অনুমোদন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে। একই সঙ্গে পেমেন্টের আগে আদানির কাছ থেকে পাওয়া পেমেন্ট ইনভয়েসগুলো বিপিডিবি থেকে অনুমোদিত হতে হবে। এর আগে বিপিডিবি এই পাওনা পরিশোধ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে সোনালী ব্যাংক পেমেন্ট করতে না পারায় কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এই চুক্তি করেছে। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বকেয়া বিদু্যৎ বিল পরিশোধ এবং আগামী বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিদু্যৎ আমদানিতে আর্থিক গ্যারান্টি দেওয়া হবে এই অর্থের মাধ্যমে। জানা গেছে আদানির বকেয়া পরিশোধে দেরি হওয়ায় বিদু্যতের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় চুক্তি অনুযায়ী পূর্ণ সক্ষমতার বিদু্যৎ সরবরাহ পেতে এই নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, আদানি পাওয়ার (ঝাড়খন্ড) লিমিটেডের পূর্ণ সক্ষমতা ১,৪৯৬ মেগাওয়াট হলেও ৯ নভেম্বর তারা মাত্র ১১০ মেগাওয়াট এবং পরদিন ১০ নভেম্বর মাত্র ৪৭ মেগাওয়াট বিদু্যৎ সরবরাহ করেছে। বিপিডিবি ও কৃষি ব্যাংক উভয়ই এই অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যা বাংলাদেশে বর্তমান বিদু্যৎ সরবরাহের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে। বিপিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, 'সোনালী ব্যাংক আমাদের চাহিদামতো ডলার জোগান দিতে না পারায় আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে এই পেমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ (মঙ্গলবার) থেকেই আমরা কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আদানিকে তাদের ওভারডিউ পেমেন্ট পাঠানো শুরু করব। তবে এই পেমেন্ট ধাপে ধাপে করা হবে। এত বড় পেমেন্ট একবারে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এখন থেকে পেমেন্টের কিস্তি বাড়িয়ে দেওয়া হবে।' তিনি জানান, 'আদানিকে এতদিন প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২৫ মিলিয়ন ডলার পেমেন্ট করা হয়েছে। তবে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে নভেম্বর মাস থেকে প্রতি মাসে ১০০ মিলিয়ন ডলার বা তারও বেশি পেমেন্ট করার। দেখা যাক পরিস্থিতি আমাদের কতটুকু পারমিট করে।' এদিকে বিদু্যৎ ও জ্বালানি খাতে সরকারের বকেয়া বেড়ে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে গত বছরের আগস্ট থেকে এ বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিদু্যৎ খাতে বকেয়ার পরিমাণই প্রায় ৪৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা এ খাতে চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দের চেয়েও ৩০ শতাংশ বেশি বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রতি মাসে বিদু্যৎ খাতে সরকারের বকেয়া হিসাবে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা নতুন করে যুক্ত হচ্ছে। কিন্তু রাজস্ব আহরণ কম হওয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে পরিশোধ করতে পারছে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকা। এদিকে কৃষি বাংকের ডলার পরিস্থিতি কেমন এবং তারা এই বিপুল ডলারের জোগান দিতে কতটুকু সক্ষম তা জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় বাংকের কর্মকর্তারা বলেন, গত সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে কৃষি ব্যাংক গড়ে ১১০ থেকে ১২০ মিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স পেয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে পেমেন্ট করতে সমস্যা হবে না। যেহেতু কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে রপ্তানি খুব কম হয় তাই রেমিট্যান্স ছাড়া ব্যাংকটির ডলার সংগ্রহের আরেকটি মাধ্যম হচ্ছে আন্তঃব্যাংক লেনদেন। চাই কৃষি ব্যাংক এই উপায়ে ডলার সংগ্রহ বাড়াতে পারে বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।