সারাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় ঐতিহাসিক জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবস পালন করেছে বিএনপি। এই দিবসে আধিপত্যবাদকে রুখে দেওয়ার শপথ নিয়েছে দলটি। পাশাপাশি যৌক্তিক সময় অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন দেবে- এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের কার্যালয়গুলোতে দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু করে বিএনপি। এ ছাড়া দলের প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও এফডিসির সামনে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন-জাসাসের উদ্যোগে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজার প্রাঙ্গণে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন হলে 'জাতির সামনে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার উপযুক্ত সময় নির্বাচন দিতে সক্ষম হবে বলেও প্রত্যাশা করেন।'
সরকারের তিন মাস অতিক্রান্ত হয়েছে- তারা কোনো কার্যকর ভূমিকা রেখেছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'অবশ্যই রাখছে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অনেকগুলো কাজ
করেছে, কাজ করছে। আমরা বিশ্বাস করি, তাদের যদি আমরা সবাই সহযোগিতা করি এবং উপযুক্ত সময় একটা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে তারা নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়, তাহলে এই জাতির সামনে যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।' মির্জা ফখরুল বলেন, 'বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য সব সময় ষড়যন্ত্র করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে। এই আওয়ামী লীগ প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। প্রায় ৭০০ মানুষকে গুম করেছে। তারা হাজার হাজার মানুষকে গুম করে ও খুন করে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে, একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে।'
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, '৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো আধিপত্যবাদকে পরাজিত করা হয়, ফ্যাসিস্টদের পরাজিত করা হয়। তিনি বলেন, 'আজকে আমরা শপথ নিয়েছি, আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আধিপত্যবাদকে রুখে দেব। এর জন্য প্রয়োজনে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলব।'
এ সময় বিএনপি মহাসচিব দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে জিয়া উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতার মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর দোয়া ও মোনাজাত করেন। মাজার জিয়ারতে আরও উপস্থিত ছিলেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র নেতা শামসুজ্জামান দুদু, আমান উলস্নাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, আমিনুল হক, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাইফুল আলম নিরব, তানভীর আহমেদ রবিনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। এরপর আমিনুল হক, রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবিন, মোস্তফা জামানের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর, দক্ষিণসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে নেতারা শহীদ নেতার মাজারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।
আজ রাজধানীতে শোভাযাত্রা
ঐতিহাসিক জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা করবে বিএনপি। ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থান পরবর্তী নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে এই কর্মসূচি ঘিরে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এ জন্য দফায় দফায় বৈঠক করে দেওয়া হয়েছে নানান দিকনির্দেশনা। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মী ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এদিন কর্মসূচি সফল করতে সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখতে বলা হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মসূচি পালনের সব আয়োজনে কোনো ঘাটতি রাখেননি নেতারা। ঢাকার আশপাশের জেলা থেকেও নেতাকর্মীদের ঢল নামানোর প্রস্ততি রয়েছে দলটির। দেশ-বিদেশে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে ও দ্রম্নত সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বড় শোডাউন করবে দলটি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ৫ আগস্টের পর বড় দুটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীতে। এই সমাবেশ থেকে নেতাকর্মীদের বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এবারের শোভাযাত্রার কর্মসূচি অনেকটা ভিন্ন প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব বহন করবে। এর মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে ক্ষমতাসীন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দীর্ঘদিন দাবি জানিয়ে আসছে দলটি। তবে সেই দাবি এখনো পূরণ না হওয়ায় বিক্ষুব্ধ দলের হাইকমান্ড। সে ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মী ছাড়াও সরকারের উদ্দেশে বার্তা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করা হলে রাজপথে নামার ইঙ্গিত থাকবে নেতাদের কণ্ঠে। এমনটাই মনে করছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, ঐতিহাসিক জাতীয় বিপস্নব ও সংহতি দিবসটিতে এবার অফিস খোলার দিন হওয়ায় জনসম্পৃক্ততার কর্মসূচি এক দিন পিছিয়ে ছুটির দিন আয়োজন করা হয়েছে। যাতে সাধারণ মানুষের তেমন ভোগান্তি না হয়। দুপুর আড়াইটায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এই শোভাযাত্রা শুরু হবে। এরপরর্ যালিটি কাকরাইল মোড়-কাকরাইল মসজিদ-মৎস্য ভবন-ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট-শাহবাগ-হোটেল শেরাটন-বাংলামোটর-কারওয়ান বাজার-ফার্মগেট হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হবে। শোভাযাত্রা শুরুর পূর্বে নয়াপল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, এইর্ যালি হবে দেশের ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা। দীর্ঘ ১৭ বছরের দুঃশাসন থেকে মুক্তির পর নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত নেতাকর্মীরা বিজয়-উলস্নাস করার সুযোগ পাবেন।
সাবির্ক প্রস্তুতি বিষয়ে দুই মহানগরের নেতারা জানান, তারা ইতোমধ্যে প্রত্যেক ইউনিটকে বার্তা দিয়েছেন। এদিন প্রত্যেককে কর্মসূচিতে অংশ নিতে হবে। ঢাক-ঢোল আর সাজসজ্জা নিয়ে ওই কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে। সার্বিক প্রস্তুতি হিসেবে তারা প্রতিদিনই থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন, নির্দেশনা দিচ্ছেন। এমনকি দায়িত্বও বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। একইভাবে অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদেরও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তারাও নিজেদের মতো করে উপস্থিতি নিশ্চিত করছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক বলেন, 'এদেশের সবচেয়ে বড় জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হচ্ছে বিএনপি। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে যখন দলের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চলেছে- তখনো ঘোষিত কর্মসূচিতে নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের ঢল নামতো। আর এখনতো এ দেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়ে মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন, স্বস্তি পাচ্ছেন। এ অবস্থায় বিএনপির ঘোষিত কর্মসূচিতে সমর্থক শ্রেণি ছাড়াও একেবারে সাধারণ মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হবে।