সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামি মহাসম্মেলন

সাদপন্থীদের নিষিদ্ধ করাসহ ওলামা-মাশায়েখদের ৯ দাবি

প্রকাশ | ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঙ্গলবার ওলামা-মাশায়েখদের মহাসম্মেলনে জনতার ঢল -নাজমুল ইসলাম
রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে করাসহ ৯ দফা দাবি জানিয়েছে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা। মঙ্গলবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ওলামা-মাশায়েখ বাংলাদেশের উদ্যোগে 'তাবলিগ, কওমি মাদ্রাসা ও দ্বীন রক্ষার্থে' এক মহাসম্মেলনে ঘোষণাপত্রে এ দাবিগুলো তুলে ধরা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাওলানা মাহফুজুল হক। ৯ দফা দাবিগুলো হলো- দেশে কওমি মাদ্রাসাগুলো দারুল উলুম দেওবন্দের অনুকরণে শতাব্দীকাল ধরে দ্বীন শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসন এবং সরকারদলীয় লোকজন নানাভাবে হয়রানি ও হস্তক্ষেপ করেছিল। তারা লক্ষ্য করেছেন ৫ আগস্ট গণ-অভু্যত্থানের পরও কওমি মাদ্রাসাগুলোর ওপর ফ্যাসিস্ট সরকারের ঘাপটি মেরে থাকা একটি বিশেষ মহল সুকৌশলে হস্তক্ষেপের পাঁয়তারা করে চলছে। মহাসম্মেলন থেকে তারা এ জাতীয় সব হয়রানি ও হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছেন। সাধারণ শিক্ষা সিলেবাসের সর্বস্তরে ধর্মশিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে মজলুম আলেম-ওলামা ও তৌহিদী জনতার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে রাতের আঁধারে সারাদেশ থেকে আগত নবীপ্রেমিক নিরীহ ছাত্র-জনতা ও মুসলিস্নদের ওপর বর্বরোচিত ও নৃশংস গণহত্যার দোষীদের অবিলম্বে শাস্তির আওতায় এনে বিচার কার্যকর করতে হবে। সারাদেশের আলেম, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও সাধারণ জনতার ওপর দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। এছাড়া ২০১৮ সালের পহেলা ডিসেম্বর টঙ্গী ময়দানের জোড়ের প্রস্তুতিমূলক কাজে অংশগ্রহণকারী মাদ্রাসার নিরীহ ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ তাবলিগ সাথীদের ওপর সাদপন্থীরা পুলিশ প্রশাসনের গুটিকয়েক অফিসারের সহযোগিতায় নৃশংস হামলা চালায়, এ মহাসম্মেলন থেকে উক্ত হামলাকারী ও তাদের সহযোগীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানানো হয়। সমাবেশে বলা হয়, স্বঘোষিত আমির মাওলানা সাদ সাহেব কোরআন-সুন্নাহর অপব্যাখ্যা, নবী-রাসুল ও সাহাবায়ে কেরামের সমালোচনা এবং আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাস বিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে বাধা প্রদান করেছে বিধায় বর্তমান সরকারের কাছে মহাসম্মেলন থেকে জোর দাবি জানানো হয় যে, কোনো অবস্থাতেই মাওলানা সাদ সাহেবকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না। ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেযামে পরিচালিত বিশ্ব ইজতেমা এক পর্বে আয়োজন করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার তাই আগামী বিশ্ব ইজতেমা দুই পর্বেই অর্থাৎ প্রথম পর্ব ৩১ জানুয়ারি, ১ ও ২ ফেব্রম্নয়ারি এবং দ্বিতীয় পর্ব ৭, ৮ ও ৯ ফেব্রম্নয়ারি আজকের এ মহাসম্মেলন থেকে ঘোষণা করা হলো। এ ব্যাপারে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা হয়। কাকরাইল মসজিদ ও টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমার ময়দানের যাবতীয় কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেযামে পরিচালিত হবে, উক্ত স্থানে সাদপন্থীদের কোনো কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। বর্তমান সরকারকে ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন অভিশপ্ত কাদিয়ানীদের অবিলম্বে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে এবং সেই সঙ্গে কাদিয়ানীদের ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার নিষিদ্ধ করারও জোর দাবি জানাচ্ছে আজকের এ মহাসম্মেলন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আলস্নামা মুফতি খলিল আহমদ কাসেমী বলেন, 'টঙ্গী ময়দান ওলামায়ে কেরামদের হাতে থাকবে। কাকরাইল মসজিদ ওলামায়ে কেরামদের তত্ত্বাবধানে চলবে। যারা ওলামায়ে কেরামদের কথা মানে তাদেরই এখানে আসতে দেওয়া হবে। যারা বিরোধিতা করবে তাদের এখানে আসতে দেওয়া হবে না। বরদাস্ত করা হবে না।' সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আলস্নামা শাহ্‌ মহিবুলস্নাহ বাবুনগরীর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। মহিবুলস্নাহ বাবুনগরী বলেন, 'দিলিস্নর নিজামুদ্দিন মারকাজের বর্তমান মুরব্বী মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় কোরআন, হাদিস, ইসলাম, নবী-রাসুল, নবুয়ত, সাহাবায়ে কেরাম এবং শরয়ী মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্যগুলো কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী যা মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেন, 'দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে তার চিন্তাগত বিচু্যতি ও বিচ্ছিন্নতা এবং অনেক বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও জুমহুরের মুত্তাফাকা তথা ঐকমত্য সমর্থিত মাশাআলস্নাহ ও মাযহাবের খেলাফ করার কারণে শরিয়ত মতে তার এতায়াত জায়েজ নেই। তার এসব আপত্তিকর মন্তব্যের জন্য দারুল উলুম দেওবন্দসহ বিশ্ব আলেমদের কাছে তিনি চরম বিতর্কিত হয়েছেন। আলেমরা দায়িত্ব নিয়ে তাকে সংশোধন করার চেষ্টা করেছেন। তিনি আলেমদের পরামর্শ গ্রহণ করে নিজের বক্তব্য সংশোধন করতে রাজি হননি।' মহিবুলস্নাহ বাবুনগরী বলেন, 'সরকারের প্রতি আমার দাবি হলো, যতদিন মাওলানা সাদ তার গোমরাহী বক্তব্য থেকে তাওবা না করবে, ততদিন তাকে বাংলাদেশে আসতে দেওয়া যাবে না। টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা আলেমদের তত্ত্বাবধানে শুরায়ী নেজামে পরিচালিত হবে। কাকরাইল মারকাজের কার্যক্রম ওলামায়ে কেরামে জিম্মাদারিত্বে চালু রাখতে হবে। ব্যক্তি মাওলানা সাদের কারণে ছাত্র-জনতা ও আলেম-ওলামাদের কোরবানির বদৌলতে অর্জিত স্বাধীন নতুন এই বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি হোক এবং অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বেকায়দায় পড়ুক আমরা চাই না। আমি আশা করি সার্বিক বিবেচনায় সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।' সকাল ৯টা থেকে সম্মেলন শুরু হয়। এই সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অংশে বিপুলসংখ্যক আলেম-ওলামারা জমায়েত হন। এসব এলাকায় বড় আকারে ট্রাফিক জ্যাম দেখা দেয়। এতে বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মাদ্রাসা শিক্ষার্থী অংশ নেন। সরেজমিন দেখা গেছে, ফজরের নামাজের পর থেকেই তাবলিগ জামাতের লোকজন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। এরপর উদ্যানের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন আলেম-ওলামারা। আমির আলস্নামা শাহ্‌ মহিবুলস্নাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে মাওলানা আবদুল হামিদ, মাওলানা সালাহউদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা সাজেদুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।