সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপাজয়ী বাংলাদেশের নারী খেলোয়াড়দের স্বপ্ন ও রোজকার সংগ্রামের কথা শোনার পাশাপাশি তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দাবির কথা আলাদাভাবে লিখে সরকারপ্রধানের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেছেন, 'আপনারা যা কিছু লিখতে চান, দ্বিধা করবেন না। আমরা আপনাদের চাহিদাগুলো পূরণের চেষ্টা করব। যা খুশি লিখতে দ্বিধা করবেন না। আমরা আপনাদের দাবি পূরণের চেষ্টা করব। এখনই যদি কিছু সমাধান করা যায়, আমরা এখনই তা করব।'
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাফজয়ীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'এই সাফল্যের জন্য পুরো জাতির পক্ষ থেকে আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। জাতি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ সাফল্য চায়, আপনারা আমাদের সেই সাফল্য এনে দিয়েছেন।'
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গত বুধবার স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ।
পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে দেশে ফেরার পর বাংলাদেশ দলকে ছাদখোলা বাসে করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) নিয়ে যাওয়া হয়।
সরকারপ্রধানের তরফে শনিবার সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ডাকায় তাকে ধন্যবাদ জানান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
তিনি বলেন, 'অনেক বাধা অতিক্রম করে আমরা এই পর্যায়ে এসেছি। শুধু নারী ফুটবল দলই নয়, সাধারণভাবে বাংলাদেশের নারীরা অনেক সংগ্রামের মুখোমুখি হন।'
২০০৯ সালে ফুটবল ক্যারিয়ার
\হশুরু করা সাবিনা যেমন তার আগের প্রজন্মের অবদান স্মরণ করেন, তেমনই তাদের আর্থিক সংকটের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'তাদের মধ্যে অনেকেই সাধারণ পটভূমি থেকে এসেছেন এবং পরিবারকে সমর্থন করা দরকার। আমাদের বেতন আমাদের খুব একটা সহায়তা করতে দেয় না, কারণ আমরা খুব বেশি পাই না।'
মারিয়া মান্ডার মতো তার কয়েকজন সতীর্থের সংগ্রামের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
নারী ফুটবলারদের 'আঁতুড়ঘর' হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম থেকে আসা মারিয়া শৈশবে বাবাকে হারিয়েছেন। মা সংগ্রাম করে তাকে বেড়ে তুলেছেন।
সীমান্তবর্তী ধোবাউড়া উপজেলার গ্রামটি থেকে সাফজয়ী দলেই আছেন ছয়জন খেলোয়াড়।
উইঙ্গার কৃষ্ণা রাণী সরকার ঢাকায় তাদের আবাসন সমস্যার কথা তুলে ধরেন। তিনি বার্সেলোনার বিপক্ষে প্রীতিম্যাচ আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ জানান।
কোচ পিটার বাটলার, ব্যবস্থাপক মাহমুদা আক্তার, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ, সুপ্রদীপ চাকমা, বিধান চন্দ্র রায় ও নূরজাহান বেগম অনুষ্ঠানে ছিলেন।
'সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা'
এদিকে দেশের নারী ফুটবলারদের বেতন কাঠামো, অনুশীলন এবং আবাসন নিয়ে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ব্যক্তিগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি ফুটবলারদের কাছে এসব সমস্যা লিখিত আকারে চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
সংবর্ধনা শেষে নারী ফুটবল দল বেরিয়ে যাওয়ার পর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, 'নারী ফুটবল দলের সদস্যরা আবাসন সমস্যা, অনুশীলন, বেতন কাঠামোর বিষয়ে কথা বলেছেন। প্রধান উপদেষ্টা খুব ধৈর্য সহকারে নারী ফুটবল দলের প্রত্যেকের কথা শুনেছেন। এখানে আলোচনা খুব খোলামেলা হয়েছে। আলোচনার সবকিছুই আমরা অ্যাড্রেস করব। তাই সবাইকে সমস্যা আরও সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত আকারে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তারা দুই-তিনদিনের মধ্যে সেটা দেবেন বলে জানিয়েছেন। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে সেটা পৌঁছে দেব।'
কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে গত বুধবার স্বাগতিক নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ উইমেনস চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ। বাফুফে ভবনে দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হাতে এক কোটি টাকার পুরস্কারের চেক তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
উপদেষ্টা সজীব সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, নারী ফুটবলাররা বলেছেন, সারাবছর ধরে ক্যাম্প চালানো হয়েছে বলেই সাফল্য ধরা দিয়েছে। তাই বছরজুড়ে ক্যাম্প চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ ফুটবলাররা করেছেন বলে জানান আসিফ।
নারী ফুটবল দলের অনেকেই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে এসেছেন বলে জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, 'তাদের পরিবারের অনেক বিষয় আছে, রাস্তাঘাটের বিষয় আছে। যেখানে সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ জড়িত। তারা সেটা সমাধানের জন্য কাজ করবে।
'প্রধান উপদেষ্টা খেলোয়াড়দের উৎসাহিত করেছেন। যাতে করে আমাদের বিজয়ের ধারা অব্যাহত থাকে। বাফুফের নতুন কমিটির সঙ্গে মিলে নারী ফুটবল দল ও ফুটবলে সমস্যাগুলো সমাধান করা হবে বলেও জানিয়েছেন ক্রীড়া উপদেষ্টা।