আর মাত্র তিন দিন পরে আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এর মধ্যেই 'আর্লি ভোট'-এর সুবিধা নিয়ে ৪ কোটি ৮০ লক্ষ আমেরিকান তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে ফেলেছেন। জনমত সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, অর্ধেকের বেশি মানুষ (৫৪ শতাংশ) ভোটের দিন অর্থাৎ আগামী মঙ্গলবারের আগেই ভোট দেওয়ার পালা চুকিয়ে ফেলতে চান।
জনমত সমীক্ষা আরও বলছে, দুই প্রখর রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে টক্কর হবে সমানে সমানে। চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে দু'জনেই জোরদার প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই প্রার্থীই এই ভোট ময়দানে প্রভূত পরিমাণ অর্থ ঢেলে দিচ্ছেন। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, সবার দৃষ্টি গিয়ে পড়ছে আটটি গুরুত্বপূর্ণ 'সুইং স্টেট'-এর দিকে, যে প্রদেশগুলো সম্ভবত এই দৌড়ের ফলাফল নির্ধারণ করবে। প্রথম অশ্বেতাঙ্গ মহিলা ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এর আগেই ইতিহাস গড়েছেন কমলা হ্যারিস। এখন সবার মনে একটাই প্রশ্ন, আগামী মঙ্গলবার ভোটে জিতে কি দেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী?
ট্রাম্পের তাসভোটের বিতর্কে আধিপত্য বজায় রেখেছে অর্থনীতি। মূল্যবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক বৈষম্য- এবার ভোটারদের কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সেটাই তার প্রচারে তুরুপের তাস করেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। অতিমারির পরে আমেরিকার ধ্বংস অর্থনীতির দায় তিনি সম্পূর্ণ চাপিয়ে দিয়েছেন জো বাইডেন সরকারের ওপরে। তার যুক্তি দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য কর কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন। প্রথম থেকেই স্পষ্ট ট্রাম্প তার 'আমেরিকা প্রথম' এবং 'আমেরিকাকে ফের শ্রেষ্ঠ করে তোলো'- এই ধরনের পুরনো প্রতিশ্রম্নতি দিয়েই হোয়াইট হাউসে ফিরে আসতে চান। প্রত্যাশা মতোই চীন, অভিবাসন ও বাণিজ্য চুক্তির বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন তিনি। আশ্বাস দিয়েছেন রাশিয়া-ইউক্রেন
\হযুদ্ধের অবসানেও সচেষ্ট হবেন। সরে আসবেন বাইডেন প্রশাসনের ইসরাইল নীতি থেকে। শক্ত হাতে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করার পক্ষে বারবার সওয়াল করছেন তিনি। বলেছেন, ক্ষমতায় এলেই বেআইনি অভিবাসীদের দেশ থেকে 'ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে' দেবেন।
অর্থাৎ, ২০১৬ সালে যে কৌশল অবলম্বন করে বিজয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প, এবারও সেটাই আঁকড়ে ধরেছেন তিনি। শক্তপোক্ত অর্থনীতি, জোরদার জাতীয়তাবাদ ও কড়া অভিবাসন আইনের প্রতিশ্রম্নতি তাকে ফের মসনদে বসাবে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট।
কমলা হ্যারিসের হাতিয়ার ডেমোক্র্যাট দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রথম থেকেই স্বাস্থ্য পরিষেবা ও শিক্ষার ওপরে গুরুত্ব দিচ্ছেন। জলবায়ু পরিবর্তন রুখতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার ওপরেও জোর দিচ্ছেন তিনি। তাছাড়া বেকারত্ব কমাতে এবং বিভিন্ন পরিকাঠামোয় বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জো বাইডেন সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন, নিজের প্রচারে বারবার সেসব তুলে ধরেছেন কমলা।
হ্যারিস একদিকে যেমন বাইডেন প্রশাসনের কাজের দিকগুলো তুলে ধরেছেন, তেমনই আবার তার দৃষ্টিভঙ্গি যে জো বাইডেনের থেকে স্বতন্ত্র, সেটাও বারবার বলছেন। গর্ভপাতের অধিকার ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে মহিলা ভোটার ও তরুণ প্রজন্মকে পাশে পেতে চান ৬০ বছর বয়সি হ্যারিস।
ব্যক্তিস্বাধীনতাকে গুরুত্ব দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে এক নতুন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন তিনি।