কোটি টাকা পুরস্কার
ভালোবাসায় সিক্ত সাফজয়ী কন্যারা
ছাদখোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর 'বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন' স্স্নোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানান উচ্ছ্বসিত জনতা
প্রকাশ | ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
টানা দুইবার সাফ শিরোপা জয়ী বাংলাদেশ ফুটবল দলের কন্যারা দেশে ফেরার পর তাদের নিয়ে উৎসব-আনন্দে মেতেছে মানুষ। বিমান বন্দরে তাদের বরণ করে নেওয়ার পর ছাদখোলা বাসে করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ভবনে, সেখানে তাদের আরেকবার বরণ করে নেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। এ সময় ক্রীড়া উপদেষ্টা দলকে এক কোটি টাকা পুরস্কারের ডামি চেক তুলে দেন। তবে শনিবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজ বাসভবনে ফুটবলারদের দাওয়াত দিয়েছেন। সেখানে তাদের সংবর্ধনা দেবেন তিনি।
এর আগে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা নেপাল থেকে ফিরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ২টায়। সেখানে তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। বিকাল ৪টার দিকে তারা ছাদখোলা বাসে করে বিমানবন্দরের টার্মিনাল থেকে বের হওয়ার পর 'বাংলাদেশ, বাংলাদেশ; চ্যাম্পিয়ন, চ্যাম্পিয়ন' স্স্নোগান দিয়ে তাদের স্বাগত জানায় উচ্ছ্বসিত জনতা।
বিজয়ী মেয়েদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরের সামনের সড়কে জড়ো হয়েছিলেন কয়েকশ মানুষ। হাত নেড়ে তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে থাকেন। কেউ কেউ ছবিও তোলেন।
সমর্থকরা লাল আর সবুজ রঙ ছুড়ে হলস্না করেন। নিচ থেকে ছুড়ে দেন ফুল। ছাদখোলা বাস থেকে ঋতুপর্ণা, সাবিনা, মনিকারাও পতাকা নেড়ে সাড়া দেন।
বিমানবন্দরে তাদের বরণ করে নিতে এসেছিল 'আল্ট্রাস' নামে একটি সংগঠন। ফুটবল অন্তঃপ্রাণ কয়েকজন তরুণের সংগঠন এটি।
সেখানে থাকা আবু তালহা সামি নামে একজন বলেন, "সাফ থেকে নারীদল চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছে। এটা দেশের গর্ব, দশের গর্ব। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। এখান (বিমানবন্দর) থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত আমরা নারী দলকে নিয়ে উলস্নাস করতে-করতে যাব।"
নয়ন সর্দার নামে আরেকজন বলেন, "নারীরা সাফ জিতে এলো। এটা আনন্দের সংবাদ। আমরা তাদের বরণ করে নিতে এসেছি। পরপর দুইবারের চ্যাম্পিয়ন তারা।'
মেহেদী হাসান নামে আরেকজন বলেন, "নারী দল পরপর দুইবার চ্যাম্পিয়ন হলো। আমরা খুশি, আনন্দিত। আগামী দিনে আমরা চাইব পুরুষ দলও এমন অর্জন এনে দেবে। আমরা তাদের নিয়েও উলস্নাস করতে চাই। দেশের ফুটবলের সঙ্গে আমরা আছি।"
বিমানবন্দরের সামনের সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন দলটির কর্মী-সমর্থকরা। সেখানে আসা তামজিদ হোসেন নামের একজন বলেন, "আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাতে এসেছি। নারী দলের এই বিজয়ে আমরা তথা পুরোদেশ গর্বিত।"
নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে বুধবার স্বাগতিক নেপালের ভক্ত-সমর্থকদের কাঁদিয়ে ২-১ গোলে তাদের হারায় বাংলাদেশ দল। দুই বছর আগে গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরে এ মাঠেই নেপালকে ৩-১ ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম এই ট্রফির স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।
এবার ছাদখোলা বাসে ছিল শুধুই চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের ছবি। বাসের পোস্টারে চ্যাম্পিয়ন ট্রফির সঙ্গে অফিসিয়াল ফটোসেশনের সবাইকে রাখা হয়েছে। শুরুর একাদশে থাকা দলের ছবিও আছে সেখানে।
একপাশে আছে এ বছর টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে গোল্ডেন বল জেতা ঋতুপর্ণা চাকমার ট্রফি গ্রহণের ছবিও।
ঋতুপর্ণা চাকমার ছবির উপরে রয়েছে স্পন্সরদের লোগো। নারী ফুটবলে দীর্ঘদিনের স্পন্সর ঢাকা ব্যাংক। সেই ২০১৬ সাল থেকে নারী ফুটবলের সঙ্গে এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে। উৎসবের এই উপলক্ষে বাফুফে স্মরণ রেখেছে তাদেরও।
এছাড়া দলের বেভারেজ পার্টনার পুষ্টি, ট্যাকনিক্যাল পার্টনার আমরাও বছরব্যাপী বাফুফেকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তাই তাদের লোগোও আছে বিশেষ এই স্থানে।
বিকাল সাড়ে ৪টায় বিমানবন্দর থেকে চ্যাম্পিয়ন মেয়েদের বাসটি বের হয়ে যায়। এরপর তাদের নিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠে ছাদখোলা বাসটি। এফডিসি মোড়ে নেমে সাত রাস্তার মোড় হয়ে মগবাজার ফ্লাইওভার দিয়ে কাকরাইল হয়ে যায় পল্টনে। এরপর নটরডেম কলেজর সামনে দিয়ে শাপলা চত্বর পার হয়ে সাবিনা-ঋতুপর্ণারা সন্ধ্যায় পৌঁছান বাফুফে ভবনে।
১ কোটি টাকা পুরস্কার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে ১ কোটি টাকা পুরস্কার দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। বৃহস্পতিবার দলটি বাফুফে ভবনে পৌঁছালে সেখানে অধিনায়ক সাবিনা খাতুনের হাতে পুরস্কারের ডামি চেক তুলে দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ।
এ সময় উপদেষ্টা জানান, শনিবার অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাসভবন যমুনায় সাফজয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনা দেবেন।