শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১

ছাত্রদের দাবিতে সরকারের সমর্থন আছে কিনা, সে প্রশ্ন বিভিন্ন দলের নেতাদের

যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী -ফোকাস বাংলা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নতুন নতুন দাবি হাজির করছে। তাদের প্রতিনিধিরা সরকারেও আছেন। তাই তাদের এসব দাবির প্রতি সরকারেরও সমর্থন আছে কিনা, এ প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। ঢাকায় এক আলোচনা সভায় তারা বলেছেন, কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অর্জন বিসর্জনে পরিণত হতে পারে।

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে 'অন্তর্র্বর্তী সরকারের ৮০ দিন : গতিমুখ ও চ্যালেঞ্জসমূহ' শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতারা এই আলোচনায় অংশ নেন।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবির প্রতি ইঙ্গিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সংস্কারের জন্য ১০টি কমিশন করা হয়েছে। ৯০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন আসবে। কিন্তু কমিশনগুলোর কার্যকালীন আবার নতুন নতুন দাবি উত্থাপন করা হচ্ছে। এই দাবির সঙ্গে সংস্কার কমিশন, অন্তর্র্বর্তী সরকারের কোনো সমর্থন বা সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা, তা জানা নেই। এই জিনিসগুলো পরিষ্কার করতে হবে। এ বিষয়গুলো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে।

ঐকমত্যের বিষয়ে আমীর খসরু বলেন, কিছু বিষয়ে ঐকমত্য আছে। এর বাইরেও দাবি এসেছে, কোনো আলোচনা, কথাবার্তা ছাড়া। তাহলে

\হঐকমত্য কি সিলেক্টিভলি (বেছে বেছে) করা হচ্ছে-এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, সিলেক্টিভলি ঐকমত্য করলে হবে না।

আমীর খসরু বলেন, সংস্কারের দাবি নতুন কিছু নয়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য হবে, সেগুলো বাস্তবায়ন করা যায়। যে বিষয়গুলোতে হবে না, সেগুলো নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে ঐকমত্য হয়ে আছে। জনগণ ভোট দিতে চায়। এতে কোনো দ্বিমত নেই।

আলোচনার শুরুতে সূচনা বক্তব্যে সরকারের ৮০ দিন নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সেখানে বলা হয়, অন্তর্র্বর্তী সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি না থাকলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা, শ্লথগতি, সরকার পরিচালনায় অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। গত ৮০ দিনে তাদের নানা বেফাঁস ও আবেগপ্রবণ কথাবার্তায় তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে জনমনে বিভ্রান্তির সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাদের কিছু পদক্ষেপ ও ঘোষণাও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

সাইফুল হক বলেন, সরকারের গঠন করা ১০টি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে মতৈক্যের ভিত্তিতে করণীয় নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল থেকে নতুন নতুন ইসু্য সামনে নিয়ে আসায় গোটা সংস্কার এজেন্ডা এই মুহূর্তে অনেকটা পেছনে পড়ে গেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন। সে কারণে তাদের তোলা ইসু্যর পেছনে সরকারের সম্মতি বা সমর্থন আছে কিনা, এই প্রশ্ন জোরালোভাবে দেখা দিয়েছে।

সমাপনী বক্তব্যে সাইফুল হক বলেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য আছে, সেগুলো অন্তর্র্বর্তী সরকার করবে। বাকি যেগুলোতে দ্বিমত থাকবে, সেগুলোর বিষয়ে নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এখন নতুন নতুন দাবিতে বিভাজন বাড়ছে। সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের দানা বাঁধছে। কোনো কিছু চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে অর্জন বিসর্জনে পরিণত হতে পারে।

সাইফুল হক বলেন, কোনো নির্বাহী সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়ায় গেলে তা হিতেবিপরীত হয়। ট্রাইবু্যনাল হয়েছে, সেখানে যার যা শাস্তি, তা নিশ্চিত হবে।

৮০ দিনে সরকারের তিনটি অর্জন দেখতে পাচ্ছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। সেগুলো হলো- উন্নয়ন সহযোগীরা বড় অর্থ সহায়তা দেবেন বলেছেন, দুই মাসে রিজার্ভে হাত না দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ঋণ শোধ করেছেন এবং আরব-আমিরাতে বন্দি ৫৭ জনকে মুক্ত করা। তিনি বলেন, সরকার গত ৮০ দিনে এই তিনটি ভালো কাজ করেছে। এর বাইরে সরকারের উলেস্নখযোগ্য কোনো কাজ দেখা যায় না। জনগণের কল্যাণে তারা কোনো সংস্কার করেছে, এর প্রমাণ নেই।

অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত নির্বাচন- এমন মন্তব্য করে মাহমুদুর রহমান বলেন, এ জন্য যা যা করা দরকার এবং যত সময় দরকার, তা সবার দেওয়া উচিত।

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন ঘেরাও কর্মসূচির সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলনে, এটি ভালো বার্তা দেয়নি। তারা (আন্দোলনকারীরা) সরকারে থেকেই সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। তিনি বলেন, পথ একটাই নূ্যনতম ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। এই সরকার যেন বুঝে, এজেন্ডার বাইরে যেন তারা না যায়।

একটি জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন উলেস্নখ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ঐক্যের প্রক্রিয়ায় সব সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। এর বিকল্প নেই। তিনি বলেন, কেউ দাবি নিয়ে রাস্তায় নামলে আওয়ামী লীগ অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। এটা না করে দেখতে হবে, দাবির ন্যায্যতা আছে কিনা।

জুনায়েদ সাকি বলেন, ৫ আগস্ট অন্তর্র্বর্তী সরকার গঠন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেউ যদি বলে থাকেন, সেখানে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তাহলে সেটি ঠিক নয়।

এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, তিন মাস আগে সবার মধ্যে যে ঐক্য ছিল, এতে এখন ক্ষয়িষ্ণু ভাব দেখা যাচ্ছে। সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিকভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে গেছে, এটাই বড় অর্জন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি নিজেই বিতর্ক তৈরি করেছেন।

অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, এলডিপির সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ, গণ-অধিকার পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে