বাজারে বিরূপ প্রভাব
মুরগির এক দিনের বাচ্চা ৫৮ থেকে ৮৫ টাকা
প্রকাশ | ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
আলতাব হোসেন
বাজারে মাছ ও সবজির দাম চড়া থাকায় অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে মুরগির বাচ্চার দাম। অক্টোবর থেকে দাম বৃদ্ধি শুরু হয়। চলতি সপ্তাহে ডিলার পর্যায়ে একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ডিলারদের কাছ থেকে ৮০ টাকায় কেনা মুরগির বাচ্চা এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা খুচরা বাজারে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি করছে। দেশের কোথাও কোথাও ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। ডিসেম্বরের মধ্যে এই দাম ১২০ টাকা ছাড়াতে পারে বলে আশংকা করছেন খামারিরা।
এদিকে মুরগি ও ডিমের উচ্চ মূল্য নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মানুষ। এর মধ্যে বাচ্চার দাম বৃদ্ধিকে নতুন কারসাজি হিসেবে দেখছেন ক্ষুদ্র খামারিরা। একদিনের বাচ্চার আকাশছোঁয়া দামের কারণে ক্ষুদ্র খামারিরা পথে বসতে শুরু করেছেন। উচ্চমূল্যের কারণে অনেকে খামারে বাচ্চা ওঠানো বন্ধ করে দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাচ্চার অস্বাভাবিক দামের কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দেশের এক লাখের বিশে পোলট্রি খামারের মধ্যে বর্তমানে ৬৫ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে। একদিন বয়সি বাচ্চার দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে মুরগির বাজারে। বাড়বে ব্রয়লার মুরগির দাম। রমজানে মুরগির দাম মগডালে উঠতে পারে বলে আশংকা করছেন ক্রেতারা।
একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চার দাম বৃদ্ধি নিয়ে ব্রিডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, আমরা একদিন বয়সি মরগির বাচ্চা ডিলার পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৫৮ টাকায় বিক্রি করছি। এতে ডিলারদের জন্য বাচ্চাপ্রতি তিন টাকা লাভ
ধরা হয়েছে। আমরা বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো ডিলারদের অনুরোধ করছি, তারা যেন নির্ধারিত দামে চেয়ে বেশি দামে বাচ্চা বিক্রি না করে। এরপরও কোথাও কোথাও বাড়তি দামে বাচ্চা বিক্রির অভিযোগ উঠছে। তাই আমরা সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ভোক্তা অধিকারকে ডিলায় পর্যায়ে তদারকি ও বাড়তি দামে বিক্রেতাদের শাস্তি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
নরসিংদীর প্রান্তিক খামারি কামরুল হক জানান, একদিনের একটি ব্রয়লার বাচ্চা উৎপাদনের খরচ কোনোভাইে ২৮ টাকার বেশি নয়। অথচ বিক্রি হচ্ছে তিনগুণেরও বেশি দামে। ২০১০ সালের ২০ অক্টোবর সব ধরনের ব্যয় সমন্বয় করে একদিনের বাচ্চার উৎপাদন মূল্য ২২ টাকা নির্ধারণ করে সরকার। ওই সময় 'লাভ' ধরে ৩০ টাকায় বাচ্চা বিক্রির প্রতিশ্রম্নতি দেন বাচ্চা উৎপাদনকারী ব্যবসায়ীরা। নির্ধারিত দামে বিক্রি না করে হাইকোর্টে রিট করে নিজেদের পক্ষে রায় নেন হ্যাচারি ব্যবসায়ীরা। তারা সরকারের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইচ্ছামতো দাম আদায় করতে থাকেন। যার ধারাবাহিকতা এখনো অব্যাহত আছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসীন বলেন, বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো বাচ্চা বিক্রির রশিদ না দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন। ফলে ক্ষুদ্র খামারিরা প্রতিবাদ করতে পারছেন না। তারা অনেকটা জিম্মি হ্যাচারি কোম্পানিগুলোর কাছে। এ কারণে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চা। কোথাও কোথাও ৮৫ টাকা, আবার কোথাও ৯০ টাকা, এমনকি অনেক এলাকায় ১০০ টাকায় বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে। ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাজীপুর, কুমিলস্না, সিলেট, বগুড়া, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় একদিনের বাচ্চা ৯০ থেকে ১০০ টাকায় কিনছেন খামারিরা। আবার এত দামে বাচ্চা তুলছেন না অনেকেই। দেশের প্রায় এক লাখের বেশি খামারের মধ্যে বর্তমানে ৬৫ হাজার খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
গাজীপুরের শ্রীপুরের দমদমা গ্রামের খামারি শরিফুল মিয়া বলেন, ৯০ টাকা দিয়ে বাচ্চা আনছি। তারা কোনো রিসিট দেয়নি। এত দামে বাচ্চা তুলে মুরগির খাবারের দাম বেশি, বিদু্যৎ বিল বেশি দিয়ে লোকসান হবে মনে হচ্ছে।
ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী দেশে মুরগির বাচ্চা উৎপাদনকারী কোম্পানি আছে ৩৯টি, মুরগির মাংসের দৈনিক চাহিদা প্রায় ২ হাজার ২০০ টন। প্রতিদিন ডিমের চাহিদা প্রায় আড়াই কোটি। একদিন বয়সি মুরগির বাচ্চার সাপ্তাহিক চাহিদা প্রায় দেড় কোটি।