আলোচিত 'লিফটকান্ড'র সেই ১৪ লিফট নিয়ে বিপাকে যবিপ্রবি

১৪টির মধ্যে অকেজো ও বন্ধ রয়েছে ১০টি বারবার অকেজো হওয়ায় দুর্ঘটনার শঙ্কা শর্ত লঙ্ঘন ও দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক

প্রকাশ | ২৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) আলোচিত 'লিফটকান্ড'র সেই ১৪টি লিফট নিয়ে বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ১০টি লিফট অকেজো ও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। লিফট সচল করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে স্থাপন করা লিফটগুলো নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশে দুদক ও ইউজিসি 'অনিয়ম ও দুর্নীতির' বিষয়টি তদন্ত করছে। প্রায় ১০ কোটি টাকার এই কাজে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, শিক্ষার্থীরা বলছেন, শর্ত লঙ্ঘন করে সরবরাহ করা লিফট বারবার অকেজো হয়ে পড়ছে। ফলে ঝুঁকি নিয়ে এগুলো চালু করলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায় কে নেবে; এ প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২২ সালের শুরুতে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) চারটি ভবনের (জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন, মুন্সি মেহেরুলস্নাহ হল, তারামন বিবি হল ও টিএসসি ভবন) জন্য ১৪টি লিফট স্থাপনের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। ৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ১৪টি লিফটের মালামাল সরবরাহ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড। তখন অভিযোগ ওঠে, দরপত্রের স্পেসিফিকেশন পরিবর্তন করে ১৪টি লিফটের এই মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল- 'মেশিনরুম টাইপ'এর পরিবর্তে 'মেশিনরুম লেস টাইপ' এবং 'ডোর সাইজ' ও 'মোটর পাওয়ার' কম। এর মাধ্যমে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, যবিপ্রবি'র আলোচিত এই 'লিফটকান্ড' নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং হাইকোর্টে রিট হলে উচ্চ আদালত 'লিফটকান্ড' তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) নির্দেশ প্রদান করে। দুদক যশোর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আল-আমিন বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশের আগেই যবিপ্রবি'র আলোচিত 'লিফটকান্ড' নিয়ে দুদক অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। দ্রম্নতই এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। এদিকে, যবিপ্রবি'র এই ১০টি লিফটের ১০টিই অকেজো ও বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। লিফট সচল করতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডকে একাধিকবার বলা হলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। সূত্র জানিয়েছে, জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের চারটি লিফটের মধ্যে দুটি সচল রয়েছে, মুন্সি মেহেরুলস্নাহ হলের চারটি লিফটের সবগুলোর বন্ধ রয়েছে, তারামন বিবি হলের চারটি লিফটের মধ্যে একটি মাত্র লিফট পাঁচতলা পর্যন্ত ওঠানামা করছে, বাকিগুলো বন্ধ রয়েছে এবং টিএসসি ভবনের দুটি লিফটের একটি সচল রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, যবিপ্রবি'র লিফটকান্ডে পরতে পরতে অনিয়ম হয়েছে। শর্ত লঙ্ঘন করে দুর্নীতির মাধ্যমে এই লিফটগুলো স্থাপন করা হয়েছে। বারবার চলতে চলতে এগুলো অকেজো হয়েছে। এখন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। নিম্নমানের এই লিফট যদি যেনতেন করে চালু করা হয় এবং এতে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে এর দায় কে নেবে। কারণ, এখানে লিফটে দুর্ঘটনার অতীত নজির রয়েছে। যবিপ্রবি'র নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, এই ১৪টি লিফটের মধ্যে এখন আটটি বন্ধ রয়েছে। যথাযথ মেইনটেন্যান্স ও পরিচালনা না করায় লিফটগুলো অচল অবস্থায় রয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী, তিন বছর এগুলো প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা। কিন্তু তারা তা করেনি। তাদের বারবার বলা হলেও তারা কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার মঈনুল ইসলাম বলেন, লিফট সরবরাহের তিন কোটি টাকার বেশি বকেয়া রয়েছে। আমরা বারবার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বলেছি, বিল পরিশোধ করলে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে লিফট চালু করে দেওয়া হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল পলিটিক্সের শিকার। দরপত্রের শর্ত লঙ্ঘনের ব্যাপারে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকগুলো কমিটি রয়েছে। তারা যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে মালামাল বুঝে নিয়েছে এবং তার স্থাপন করা হয়েছে। তারা কিন্তু সে সময় কোনো আপত্তি জানায়নি। এ ব্যাপারে যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মজিদ বলেন, লিফটগুলো বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এ জন্য বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিং করেছি। সেখানে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। তাদের বলা হয়েছিল, লিফট চালু করে দেওয়ার পর উচ্চ আদালতের মাধ্যমে বিল পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তারা বিষয়টি আমলে নিলেও পরে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মজিদ আরও বলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়েছেন এক মাস আগে। আর লিফট নিয়ে এসব ঘটনা অনেক আগের। এখন সবার সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।