প্রধান কোচ পদে রদবদল ঘটে গেছে। চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বিদায় করে বিসিবি নতুন কোচ করেছে ফিল সিমন্সকে। এবার বিসিবিকে নতুন একজন অধিনায়কও খুঁজতে হতে পারে এবং তা তিন সংস্করণের ক্রিকেটের জন্যই। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর যে তিন সংস্করণের ক্রিকেটেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি চাইছেন নাজমুল হোসেন।
ক্রিকেট ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের তথ্য অনুযায়ী, অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাওয়ার কথা এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন নাজমুল। প্রথমে শুধু টি২০র নেতৃত্ব ছাড়তে চাইলেও পরে নাকি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ছাড়লে তিন সংস্করণের নেতৃত্বই ছাড়বেন।
জানা গেছে, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এবং একাধিক বোর্ড পরিচালক ছাড়াও নাজমুলের নেতৃত্ব ছাড়তে চাওয়ার ব্যাপারে অবগত আছেন জাতীয় দলের আশপাশে থাকা দুই-একজন কোচ এবং নির্বাচক
কমিটির সদস্যরা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় টেস্টের দল নির্বাচনী সভায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠেয় আফগানিস্তানে সিরিজের দল নিয়েও আলোচনা করতে চেয়েছিল নির্বাচক কমিটি। কিন্তু নাজমুল নাকি তাদের বলেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর নতুন যিনি দলের নেতৃত্ব নেবেন, আলোচনাটা তার সঙ্গে করাই ভালো।
নাজমুল গত ফেব্রম্নয়ারিতে তিন সংস্করণের অধিনায়কত্ব নেওয়ার পর মাত্র আট মাসই গেল। এ সময়ের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশ দলকে ৯ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে তিনটিতে জিতেছেন। জয়গুলোও আবার নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে। অধিনায়ক নাজমুলের নেতৃত্বে ৯ ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছে ৩টিতে ও হার ৬টিতে। টি-২০ খেলেছে ২৪টি, যার ১০টিতে এসেছে জয়।
গত ফেব্রম্নয়ারিতে জাতীয় দলের অধিনায়ক হওয়ার কিছুদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে নাজমুল বলেছিলেন, বিসিবি তাকে অধিনায়ক করার প্রস্তাব দিলে তিনি চাইবেন লম্বা সময়ের জন্য দায়িত্ব নিতে, যেন দলটাকে গুছিয়ে নিতে পারেন। একই সঙ্গে বলেছিলেন, তার দৃষ্টিতে তিন সংস্করণের ক্রিকেটে একজন অধিনায়ক থাকাই ভালো।
সেই নাজমুল যখন আট মাস পরই নিজে থেকে নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান, বিস্মিত করার পাশাপাশি সেটি প্রশ্ন জাগাতে বাধ্য। অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর ব্যাটিং নিয়ে কিছু সমালোচনা হলেও তার নেতৃত্ব নিয়ে বিসিবি কোনো প্রশ্ন তুলেছে বলে শোনা যায়নি। বরং মাঠে নাজমুলের অধিনায়কত্ব প্রশংসিতই হয়েছে। দায়িত্ব ছাড়ার ইচ্ছা প্রকাশ করার পরও বিসিবি তাকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
নাজমুলের অধিনায়কত্ব ছাড়তে চাওয়ার কারণ মূলত তিনটি হলেও দৃশ্যমান কারণ এখন পর্যন্ত দুটি। বিসিবির কর্মকর্তাদের জানানো তার সেই দুটি কারণের প্রথমটি 'ব্যক্তিগত'। অর্থাৎ, 'ব্যক্তিগত' কারণে তিনি আর অধিনায়কত্ব করতে চান না। 'ব্যক্তিগত' কারণটা কী, সেটি কাউকে ব্যাখ্যা করেননি নাজমুল। অন্য আরেকটি কারণের কথাও বলেছেন বিসিবির এক পরিচালককে, যেটি অনুমান করে নিতে পারেন যে কেউই। নাজমুল বলেছেন, তার ব্যাটিংটা ভালো হচ্ছে না। তিনি চান নেতৃত্ব ছেড়ে ব্যাটিংয়ে আরও বেশি মনোযোগ দিতে।
অধিনায়ক হওয়ার পর নাজমুলের ব্যাটিং পরিসংখ্যান অবশ্য দুই রকম কথাই বলে। অধিনায়কের ভূমিকায় টেস্টে তার ব্যাটিং গড় (২৫.৭৬) ক্যারিয়ার গড়ের (২৮.৬৮) চেয়ে কম হলেও ওয়ানডেতে উল্টো চিত্র। ক্যারিয়ার গড় ৩৩.২৯ হলেও সেখানে অধিনায়ক হিসেবে গড় ৫২। আর টি-২০তে ক্যারিয়ার গড় ২২.৮৫ ও অধিনায়ক হিসেবে ১৮.৭৬।
ব্যাটিংয়ে মনোযোগ দিতে চাওয়াটাকে অধিনায়কত্ব ছাড়ার একটি কারণ বললেও নাজমুল নিজে অধিনায়কত্ব তার ব্যাটিংয়ে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করেন, সেটি নিয়ে প্রশ্ন থাকেই। কারণ, জাতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার আগে 'এ' দল, এইচপি এবং অন্যান্য পর্যায়ের ক্রিকেটে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনিই বলেছিলেন, 'আমার ওপর এটা (অধিনায়কত্ব) কোনো চাপ নয়। আমি যখন ব্যাটিং করি, তখন আমার কিন্তু মনে থাকে না আমি অধিনায়ক।'
তাহলে এখন কেন উল্টো কথা? নাজমুলের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, বিসিবি কর্মকর্তাদের ওই দুটি কারণের কথা বললেও নাজমুলের নেতৃত্ব ছাড়ার অন্য কারণ থাকাটাও অস্বাভাবিক নয়। তবে তিনি সেটি নিয়ে এখনো বিসিবির কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদ রোববার দেশে ফেরার পর সুযোগ পেলে তার সঙ্গে এ নিয়ে নিয়ে কথা বলার ইচ্ছা নাজমুলের।
গোপন সে বিষয়টি কী, স্বাভাবিকভাবেই এখনই তা বিস্তারিত জানা সম্ভব নয়। তবে অধিনায়কের ঘনিষ্ঠ এক সূত্রের আভাস, বিসিবি তাকে অধিনায়কত্ব চালিয়ে যেতে বললে নাজমুল কিছু শর্তসাপেক্ষেই কেবল এতে রাজি হতে পারেন। দল পরিচালনায় নিজের কিছু চাহিদার কথা হয়ত বোর্ড সভাপতিকে জানাবেন তিনি।
বিসিবি সভাপতি এতে রাজি হলে নিজের অবস্থান থেকে সরেও আসতে পারেন নাজমুল। আর নয়ত আমিরাতে বাংলাদেশ দল আফগানিস্তান সিরিজ খেলতে যাবে নতুন অধিনায়কের নেতৃত্বে।