'ক্লাসে বিশৃঙ্খলার' অভিযোগ
সারদায় প্রশিক্ষণরত ৫৯ এসআইকে শোকজ
প্রকাশ | ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়ার পর দুই দফায় নতুন করে ৫৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে। 'প্রশিক্ষণ ক্লাসে এলোমেলোভাবে বসে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে
গত সোম ও বৃহস্পতিবার তাদের নোটিশ দেওয়া হয়।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে সোমবার ১০ জনকে এবং বৃহস্পতিবার ৪৯ জনকে নোটিশ দেওয়া হয়। কয়েকজন এসআই নোটিশ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ একাডেমির পক্ষ থেকে সরাসরি কেউ এ ব্যাপারে বক্তব্য না দিলেও একাডেমি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ ঘটনায় নোটিশ পাওয়া এসআইদের মধ্যে নতুন করে অব্যাহতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ৪৯ জনকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়, 'আপনি বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি রাজশাহীতে ৪০তম ক্যাডেট এসআই ২০২৩ ব্যাচে গত ৫ নভেম্বর থেকে এক বছরমেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণরত আছেন। গত ২১ অক্টোবর সন্ধ্যা সাতটা থেকে সাড়ে আটটা চেমনি মেমোরিয়াল হলে প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের 'আইনের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ধারার' ওপর ক্লাস ছিল। ওই ক্লাসে আইন প্রশিক্ষক হিসেবে পুলিশ পরিদর্শক (নি.) মো. রেজাউল করিম, মো. নজরুল ইসলাম, মো. সিরাজুল ইসলাম হ ও শেখ শাহীন রাজা উপস্থিত ছিলেন। তারা ক্লাসে উপস্থিত হয়ে দেখতে পান আসনে বসার সময় আপনি শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছেন। রেজাউল করিমসহ সঙ্গীয় অন্য পরিদর্শকরা বারবার শৃঙ্খলার সঙ্গে বসার কথা বললেও আপনি তাদের নির্দেশ অমান্য ও কর্ণপাত না করে হইচই করতে থাকেন। পাঠদান চলাকালীন আপনার ক্লাসে কোনো মনোযোগ ছিল না এবং পাশাপাশি বসে কথাবার্তা বলছিলেন।'
\হনোটিশে আরও বলা হয়, 'ক্লাস চলাকালীন আপনার এ ধরনের শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণ বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থি মর্মে মো. রেজাউল করিম বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আপনার এহেন কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৩ সালের পিআরবি বিধি অনুযায়ী আপনাকে কেন চলমান মৌলিক প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে না, তার লিখিত ব্যাখ্যা তলবনামা প্রাপ্তির পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।'
এর আগে গত সোমবার ১০ জনকে একই ধরনের নোটিশ দেওয়া হয়। সেখানে ১৬ অক্টোবর জিমনেশিয়ামে সান্ধ্যকালীন একটি ক্লাসে বসা নিয়ে হইচই করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ করা হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত একাধিকবার ফোন করেও পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত আইজিপি) মাসুদুর রহমান ভুঞার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অধ্যক্ষের পক্ষে নোটিশে স্বাক্ষর করা পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদের মুঠোফোন নম্বরে একাধিকবার কল করলেও তিনি ধরেননি। পরে মুঠোফোন নম্বর ও হোয়াটসঅ্যাপে বিষয়বস্তু জানিয়ে বার্তা পাঠালেও তিনি সাড়া দেননি।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস কর্মকর্তা (এআইজি) এনামুল হক সাগর বলেন, '২৫২ জনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শোকজ লেটারের বিষয়ে কিছু জানি না। শোকজ লেটার ইসু্য করে থাকে সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে। কতজনকে করা হয়েছে, সেটাও জানা নেই।'
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া কয়েকজন এসআই জানান, তারা প্রায় এক বছর ধরে নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এতদিন তাদের কোনো শোকজ দেওয়া হয়নি। সরকার পতনের পর একের পর এক ঘটনা সাজিয়ে তাদের শোকজ পাঠানো হচ্ছে। তাদের আশঙ্কা, পর্যায়ক্রমে তাদের সবাইকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশিক্ষণরত একজন এসআই বলেন, ক্লাসে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়নি। একটা নতুন নাটক সাজানো হয়েছে। তিনি কোনোদিন রাজনীতি করেননি। তার পরিবার আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় সত্য। কিন্তু সেভাবে রাজনীতিতে সক্রিয় নন।
আরেকজন উপপরিদর্শক বলেন, 'আমাদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে যেটা করা হচ্ছে, এটা ঠিক হচ্ছে না। নিয়োগপ্রক্রিয়ায় সমস্যা থাকলে তদন্ত করে দেখা হোক। আমার বেলায় তো কোনো সুপারিশ ছিল না। কারও দ্বারস্থও হইনি। নিজ যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছি। তাহলে আমার ওপর এমন জুলুম কেন?'
হোয়াটসঅ্যাপে কান্নাজড়িত কণ্ঠে একজন বলেন, চলতি মাসে ব্যাচের সবাইকে শোকজ করা হচ্ছে। একটা মিথ্যা অপবাদ নিয়ে তাদের চলতে হবে। এখান থেকে অব্যাহতি পেলে ভবিষ্যতে অন্য কোনো চাকরিও হবে না। ভেরিফিকেশনে সব আটকে যাবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০২৩ সালে এসআই পদে নিয়োগের জন্য ৮২৩ জনকে চূড়ান্ত করে প্রশিক্ষণের জন্য তাদের সারদায় পুলিশ একাডেমিতে পাঠানো হয়। ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে আগামী নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগদানের কথা ছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে সরকারের পতনের পর এসআই পদে নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিএনপি। দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অভিযোগ তুলে পুলিশের নিয়োগ বাতিলের দাবি করে দলটি। এরপরই ২০ অক্টোবর সারদায় এএসপিতে কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়। পরে ২১ অক্টোবর ২৫২ জন এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার খবর পাওয়া যায়।