সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। অর্থাৎ অবসরের বয়স এখন যা আছে, তা-ই থাকবে। বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় 'সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমার বিষয়টি রয়েছে।
এদিকে, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার অংশ নিতে পারবেন। বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এই অধ্যাদেশের আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিসিএস (বয়স, যোগ্যতা ও সরাসরি নিয়োগের জন্য পরীক্ষা) বিধিমালা, ২০১৪ পুনর্গঠন করে বিসিএস পরীক্ষায় একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ তিনবার অবতীর্ণ হতে পারবে- এমন বিধি সংযোজন করবে।
এর আগে এ-সংক্রান্ত পর্যালোচনা কমিটি সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়সসীমা পুরুষের ক্ষেত্রে ৩৫ বছর এবং নারীদের ক্ষেত্রে ৩৭ বছর করার সুপারিশ করেছিল। তবে তারা চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স নিয়ে কিছু বলেননি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবির বিষয়টি পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এ কমিটির প্রধান করা হয় সাবেক সচিব আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীকে, যিনি জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সাধারণ বয়স ৩০ বছর। তবে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় আবেদনের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর। চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী।
এ অবস্থায় উপদেষ্টা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) সব ক্যাডারের চাকরিতে
প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারিত হবে। বিসিএসের আওতাবহির্ভূত সব সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও একই বয়স নির্ধারিত হবে। আর স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ক্ষেত্রে নিজ নিজ নিয়োগ বিধিমালা প্রয়োজনীয় সংযোজন সাপেক্ষে এ বয়সের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে। তবে প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগগুলো এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষেত্রে স্ব-স্ব নিয়োগ বিধিমালা বহাল থাকবে।
৩৫ প্রত্যাশীদের প্রত্যাখ্যান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
এদিকে, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা দুই বছর বাড়িয়েছে অন্তর্র্বর্তী সরকার। এখন থেকে ৩২ বছর বয়স পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে আবেদন করতে পারবেন প্রার্থীরা। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনরত চাকরিপ্রার্থীদের পস্ন্যাটফর্ম 'বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ'। একই সঙ্গে স্থায়ীভাবে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শরিফুল হাসান শুভ এ ঘোষণা দেন।
শরিফুল হাসান শুভ বলেন, আমরা সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে ৩৫ করার জন্য দীর্ঘ ১২ বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছি। গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ সংক্রান্ত যে সুপারিশ কমিটি গঠন করেছিল, সেখানে আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটেছিল। সেজন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলাম। তখন আমরা বলেছিলাম, সুপারিশ কমিটির সুপারিশটি যেন সরকার বহাল রাখে। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) সরকার জানিয়েছে এটি ৩২ বছর করা হয়েছে। এতে আমাদের দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন ঘটেনি।
তিনি বলেন, আমরা সরকারের বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আশা করি, দ্রম্নত সরকারের বোধদয় হবে এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করবে।
নতুন কর্মসূচির বিষয়ে শরিফুল হাসান শুভ বলেন, আমরা শিগগির আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলে দ্রম্নত নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেবো। সংবাদ সম্মেলন করে পরে কর্মসূচির বিষয়ে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।