প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানা বাংলাদেশে আঘাত না হানলেও এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসের আতঙ্ক বিরাজ করছে উপকূলে। ইতোমধ্যে উপকূলীয় ১৪ জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। সেইসঙ্গে ৫ বিভাগে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা ও চার সমুদ্রবন্দরে জারি করেছে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত। বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌযান চলাচলও বন্ধ করে দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে হওয়া দমকা বাতাসে গাছের ডাল ভেঙে উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনায় একজনের মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তোড়ে বার্জের ধাক্কায় কক্সবাজারের ইনানি সৈকতে ভেঙে গেছে নৌবাহিনীর জেটি। আগাম সতর্কতা পেয়ে উপকূলে ফিরে এসেছেন জেলেরা। তবে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছেন সাতক্ষীরাবাসী। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলায় আশ্রয়কেন্দ্র ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রেখেছে জেলা প্রশাসন। মজুত রাখা হয়েছে প্রয়োজনীয় শুকনা খাবার।
এদিকে, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ (বাংলাদেশ সময়) ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের ভুবনেশ্বরে স্থল ভাগে আঘাত হানতে শুরু করে। দেশটির আবহাওয়া বিভাগ (আইএমভি) জানিয়েছে, এ সময় ঝড়ের
গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার, যা ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে এ রিপোর্ট (রাত সাড়ে ৯টা) লেখা পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি।
ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আজ (শুক্রবার) সকাল ৯টা পর্যন্ত কোনো বিমান ওঠানামা করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে কলকাতা ও ভুবনেশ্বরের বিজু পট্টনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ১৬ ঘণ্টার জন্য বাতিল করা হয়ে প্রায় ৫৫০টি ট্রেন। এর মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব রেল বাতিল করেছে ১৫০টি ট্রেন। ইস্টকোস্ট রেল বাতিল করেছে ১৯৮টি। পূর্ব রেল ২০০টিরও বেশি এবং দক্ষিণ-পূর্ব-মধ্য রেল বাতিল করেছে ১৪টি ট্রেন।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিস বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে দেশজুড়ে বৃষ্টিপাতের মধ্যেই পাঁচ বিভাগে ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে। এর আগে সংস্থাটির এক বিশেষ বুলেটিনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, বারিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, লক্ষ্ণীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৩ ফুট বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে পস্নাবিত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর খুবই উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং দ্বীপ ও চরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারি (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বৃষ্টি হতে পারে।