ঢাকা টেস্ট

মিরপুরের আঁধারে মিরাজের আলো

প্রকাশ | ২৪ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ঢাকা টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৮৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন বাংলাদেশের মেহেদী হাসান মিরাজ -ওয়েবসাইট
সামনে ২০২ রানের লিড। ব্যাটিংয়ে বিবর্ণ শুরু। দ্বিতীয় দিনই বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয়। শেষ বিকালে বাংলাদেশের আশার আলো দেখলেও সেটা মিলিয়ে যায় হতাশায়। এই হতাশার মাঝেই আরেকবার বীরত্ব দেখিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সতীর্থদের নিয়ে পাড়ি দিয়েছেন ইনিংস পরাজের শঙ্কা। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন লিড। তার দৃঢ়তায় চতুর্থ দিনে গড়াল ঢাকা টেস্ট। মেহেদী হাসান মিরাজের কাঁধে বাংলাদেশ। মিরপুর টেস্টের চতুর্থ দিন তার ব্যাটের ওপর নির্ভর করছে পুরো দলের ভাগ্য। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার তিনিই। শেষের সারির তিন ব্যাটারকে নিয়ে লিড বড় করতে পারলে ম্যাচের ফলও চলে আসতে পারে বাংলাদেশের পক্ষে! ইনিংস \হহারের শঙ্কা থেকে প্রতিরোধ গড়ে মিরাজ ও জাকের আলি বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন লড়াইয়ের স্রোতে। বুধবার যেভাবে দিনের শুরু হয়েছিল তাতে বাংলাদেশের হার দেখা ছিল স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সেটা হতে পারত প্রথম সেশনেই। তবে জাকের আলি অনিক ও নাঈম হাসানকে নিয়ে বাংলাদেশকে সেই লজ্জা থেকে রক্ষা করেন মিরাজ। বৈরী আবহাওয়ায় খেলা হয়েছে মোটে ৫৭.৫ ওভার। ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রান এসেছে। দিনের শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। আগেরদিনের ৩ উইকেটে ১০১ থেকে স্কোর হয়ে যায় ১১২/৬। সেখান থেকে আর একটি উইকেট হারিয়ে তিনশ'র কাছাকাছি সংগ্রহ স্বপ্নের মতোই কিছু। শেষ ৩ উইকেট বাকি রেখে ৮১ রানে এগিয়ে থেকে বৃহস্পতিবার চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবে স্বাগতিকরা। তৃতীয় দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে তাদের সংগ্রহ ৮৫ ওভারে ৭ উইকেটে ২৮৩ রান। গতকালই লিড আরও বাড়িয়ে নিতে পারত বাংলাদেশ। তবে বৃষ্টি আর আলো স্বল্পতার বাধায় সেটা আর হয়নি। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করা সবসময়ই কঠিন। আর সে কাজটি করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সফরকারীদের মাঝারি একটা লক্ষ্য দিতে পারলেও জমতে পারে লড়াই। সে আশায় বুক বেঁধে পুঁজিটা বড় করতে হবে বাংলাদেশকে। অভিষেকে ৫৮ রান করে আউট হন জাকের আলী। মিরাজের সঙ্গে তার জুটির সংগ্রহ ১৩৮ রান। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি এটি। জাকের ফিরলেও দিন শেষে উইকেটে ৮৭ রানে অপরাজিত ছিলেন মিরাজ। ১৭১ বলে তার ইনিংস সাজানো ছিল ৯ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায়। তাকে সঙ্গ দিয়ে অন্যপ্রান্তে ১৬ রানে আছেন নাঈম হাসান। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির সংগ্রহ ৩৩ রান। দিন শুরুর ১৩ মিনিটের মাথাতেই কাগিসো রাবাদার বলে উইকেট উপহার দেন দুজন। দিনের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে রাবাদাকে খেলতে গিয়ে সিস্নপে ক্যাচ দেন জয়। ৯২ বলে ৪০ রানে স্থায়ী হয় জয়ের ইনিংস। একই ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিকও ফাঁদে পড়েন। রাবাদার ফুল লেন্থ ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলতে গিয়ে স্টাম্প হন মুশফিক। ৩৯ বলে ৩৩ রানে থামে তার ইনিংস। এরপর উইকেটে এসে টিকলেন না লিটন দাসও। কেশভ মাহারাজের ধীর গতির বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল টার্ন করে চলে যায় কিপার কাইল ভেরেনার হাতে। প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়ে লিটনের আউট নিশ্চিত করে প্রোটিয়ারা। দ্রম্নত তিন উইকেট হারানোর পর গতকাল দিনের প্রথম সেশনেই বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল ইনিংস পরাজয়। জাকেরকে নিয়ে সেই শঙ্কা দূর করেন মিরাজ। প্রথম সেশনেই দক্ষিণ আফ্রিকার লিড টপকানোর কাছাকাছি চলে যান তিনি। এগিয়ে যাওয়ার পথে ৯৪ রানে তুলে নেন ক্যারিয়ারের নবম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি। এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরে টপকে যান দক্ষিণ আফ্রিকার রান। দুজন মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান লিডের পথে। মাঝপথে জাকের আলিও ফিফটি তুলে নেন। চার মেরে ১০২ বলে ফিফটি ছোঁয়া পাওয়া জাকের অবশ্য এরপর আর লড়াই করতে পারেননি। ১১১ বলে মাহারাজের আর্ম বলে এলবিডবিস্নউ হন জাকের। ১১১ বলে ৫৮ রানে থামে তার লড়াই। জাকের ফেরার পর নাঈমকে নিয়ে দলকে টানেন মিরাজ। এর মাঝে বৃষ্টি নামলে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির বাধা কাটিয়ে খেলা গড়ানোর ১৬ মিনিটের মাথায় আলোর স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা। দুই দফায় বন্ধ হওয়ার পর শেষ তৃতীয় দিন বিকাল ৪টায় ইতি টানতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।