রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের একটি বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে দেশজুড়ে নানা আলোচনা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ষড়যন্ত্রের আভাস পাচ্ছে বিএনপি। তাকে অপসারণের দাবিকে সন্দেহের চোখে দেখছে দলটি। বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরাম মনে করছে, ফ্যাসিবাদ ও তাদের দোসররা দেশে সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় সংকট তৈরির চেষ্টা করছে। সে ব্যাপারে সবার সজাগ থাকা প্রয়োজন। এই ইসু্যতে যাতে কোনো নতুন করে সাংবিধানিক কিংবা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাষ্ট্রপতিকে সরানোর পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দীর্ঘায়িত করার প্রক্রিয়া কিনা, তা নিয়ে ভাবছেন তারা। কারণ, সরকারের বক্তব্যে সংসদ নির্বাচনের কথা স্পষ্ট না হওয়ায় নানা ধরনের আলোচনা আছে। এ ছাড়া আইন ও সংবিধান অনুযায়ী, তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে কিনা, সেই প্রশ্নও আছে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, গণ-অভু্যত্থানের পর সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়নি। রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে এখন সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
নেতাদের মতে, রাষ্ট্রপতি কোন প্রেক্ষাপটে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে এ কথা বলেছেন, তাও বোঝার চেষ্টা করছে তারা। তবে দলের নেতাদের প্রায় সবাই একমত যে, এখন রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করা ঠিক হবে না।
রাষ্ট্রপতি ইসু্যতে রাজনৈতিক সরগরম অবস্থায় এই ইসু্যতে গত মঙ্গলবার রাতে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের ভার্চুয়াল বৈঠক হয়। সাংবিধানিক কিংবা রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। এর ধারাবাহিকতায় বুধবার স্পর্শকাতর বিষয়টিকে নিয়ে দলটি নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ নিয়ে বুধবার সন্ধ্যায় বিএনপি
চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিনের ঘটনাক্রমের ওপর বিশ্লেষণ করেছে দলটি। দলের নেতারা মনে করেন, যেভাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেটি নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এর পরপরই রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবি, বঙ্গভবন ঘেরাওসহ হঠাৎ ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় সেই সন্দেহ আরও বাড়িয়েছে। দলের নেতারা মনে করছেন, পুরো প্রক্রিয়া নিয়েই দুরভিসন্ধি আছে।
এর আগে বুধবার সকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির তিনজন নেতা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা দলের অবস্থান প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট হওয়ার পর এখন এই প্রক্রিয়া কতদূর আগায়, সেটা পর্যবেক্ষণ করবে দলটি।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বিএনপির পক্ষ এই ইসু্যতে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা হলে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করারও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে রাষ্ট্রপতির অপসারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে প্রশ্ন করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'দেশে যাতে কোনো রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি না হয়, সে বিষয়ে সবার খেয়াল রাখার কথা বলা হয়েছে এবং যেটা যদি কেউ করতে চায়, তাহলে আমরা সবাই মিলে সেটা মোকাবিলা করব।'