শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাজশাহীর চারঘাটে সারদা পুলিশ একাডেমিতে চূড়ান্তভাবে নিয়োগের জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শককে (এসআই) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সোমবার একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে এ আদেশ দেওয়া হয়। স্থানীয় থানাগুলোয় ডেকে তাদের হাতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, 'বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি প্যারেড মাঠে ১ অক্টোবর সকাল ৭টা ২৫ মিনিট থেকে ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) প্রবেশনারস ব্যাচ-২০২৩-এর সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুশীলন প্যারেড কার্যক্রম চলমান ছিল। এ সময় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা, রাজশাহী কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত মেনু অনুযায়ী প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সব প্রশিক্ষণার্থীর প্যারেড বিরতিতে সকালের নাশতা পরিবেশন করা হয়। কিন্তু আপনি উক্ত সরবরাহকৃত নাশতা না খেয়ে হইচই করে মাঠের মধ্যে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করেন। আপনি অন্যান্য প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের পরস্পর সংগঠিত করে একাডেমি কর্তৃপক্ষকে হেঁয়প্রতিপন্ন করে চরম বিশৃঙ্খলা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করতে থাকেন। এ ছাড়া আপনি অন্যদের সঙ্গে হইচই করতে করতে নিজের খেয়ালখুশিমতো প্রশিক্ষণ মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যান। একজন প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট
এসআই হিসেবে এরূপ আচরণ এবং বিনা অনুমতিতে প্যারেড মাঠ থেকে বের হয়ে নিজ ব্যারাকে চলে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে শৃঙ্খলাপরিপন্থি। আপনার এরূপ আচরণ মাঠের সার্বিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে চরমভাবে ব্যাহত করেছে এবং অন্য প্রশিক্ষণার্থীদের শৃঙ্খলাভঙ্গে উৎসাহিত করেছে মর্মে আপনার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে পুলিশ পরিদর্শক মহসিন আলী (বিপি- ৬৯/৮৭০০১৫২০) বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত আইজিপি) বরাবর লিখিত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।'
ওই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, 'ওই অভিযোগের কারণে একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিকস) তিন দিনের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করার জন্য নির্দেশনা দেন। আপনি নির্ধারিত তিন দিন সময়ের মধ্যে কৈফিয়তের জবাব দাখিল করেন। আপনার দাখিলকৃত কৈফিয়তের জবাব পর্যালোচনান্তে সন্তোষজনক নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়। আপনার উপরোক্ত শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকান্ড বাংলাদেশ পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল পদ হিসেবে বিবেচিত সাব-ইন্সপেক্টর পদে কাজ করার পথে বড় ধরনের অন্তরায় ও অযোগ্যতার শামিল।'
এর আগে ২০ অক্টোবর চারঘাটে পুলিশ একাডেমিতে ৬২ জন সহকারী পুলিশ সুপারের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এজন্য রাজশাহীতেও এসেছিলেন। তখন তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অনিবার্য কারণে এই কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়েছে।
অব্যাহতি পাওয়া কয়েকজন উপপরিদর্শক জানান, ওই কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের আগে ৪০তম ক্যাডেট এসআই-২০২৩ ব্যাচের উপপরিদর্শকদের একাংশকে ১৯-২৩ অক্টোবর ছুটিতে পাঠানো হয়। আগের দিন ১৮ অক্টোবর এই ছুটি ঘোষণা করা হয়। ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টায় তাদের একাডেমিতে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে এর আগেই স্থানীয় থানাগুলোয় তাদের ২৫২ জনের বরখাস্তের আদেশ পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার ছুটি পাওয়া প্রশিক্ষণার্থীদের একাংশ যথারীতি যোগদান করেছেন।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি মাসুদুর রহমান ভূঞা বলেন, 'শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে প্রশিক্ষণরত ২৫২ জন উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে পর্যায়ক্রমে 'ডিসচার্জ' করা হচ্ছে। এটার প্রসেস চলছে। চিঠি ইসু্য হচ্ছে।'
এদিকে, রাজশাহীর সারদায় পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত আড়াইশ' ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার পেছনে 'কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই' বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
মঙ্গলবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে এক সভা শেষে সচিবালয়ে নিজের কার্যালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। সভায় বিভিন্ন অপরাধী ও আন্দোলন সমাবেশের 'উসকানিদাতাদের' রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করা হতে পারে বলে সিদ্ধান্তের কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
সারদা থেকে ২৫২ প্রশিক্ষণার্থী (আউটসাইড ক্যাডেট) এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার কারণ হিসেবে 'শৃঙ্খলাভঙ্গের' কথা বলেছে পুলিশ একাডেমি। দু'দিন আগে তাদের অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়।
ঠিক কী কারণে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হলো জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'শৃঙ্খলার সংজ্ঞা তো অনেক বড়। এটা তো একাডেমি বলতে পারবে। আমাদের সেনাবাহিনীতে দেখছি পাসিং আউটের আগের দিনও অনেককে ফেরত পাঠানো হয়।'
এত বড় সংখ্যায় ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার ফলে যে শূন্যতা তৈরি হলো, তা কীভাবে পূরণ করা হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, 'তেমন কোনো সমস্যা হবে না। আমরা তো নতুন নিয়োগের সার্কুলার দিয়েছি।'
যাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ মুহূর্তে নিয়োগ করা ৮০৩ জন এসআই এবং ৬৭ জন এএসপির নিয়োগ বাতিলের দাবি জানিয়েছিল।
এই এসআইরা ছাত্রজীবনে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হলো কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, 'একাডেমি তাদের শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে বের করে দিয়েছে। এর চেয়ে আরও বেশি সংখ্যায় বের করা হয়। পুরো ব্যাচ ধরে কখনো বের করে দেওয়া হয়। বিজিবিতে একবার পুরো ব্যাচ ধরে বের করে দেওয়া হয়। এরকম হতে পারে। ডিসিপিস্নন শব্দটা তো বিরাট বড়। এখানে কোনো রাজনৈতিক কারণ নেই।'
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, মঙ্গলবার ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের সঙ্গে তার তৃতীয় সভা। সেখানে 'অনেকগুলো বিষয়ে' আলোচনা হয়েছে। সভায় আইশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাহিনীগুলোকে আরও সচেষ্ট হতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধী ও আন্দোলন সমাবেশের উসকানিদাতাদের রাজনৈতিক পরিচয় হয়তো প্রকাশ করতে হতে পারে।'