স্বস্তি নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করল বাংলাদেশ

প্রকাশ | ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

ক্রীড়া প্রতিবেদক
ঢাকা টেস্টে মঙ্গলবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় দিনে মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর রহিম ৪২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে অপরাজিত আছেন -ওয়েবসাইট
প্রথম ইনিংসের মতোই শঙ্কা জেগেছিল বিপদের। দ্রম্নত বাংলাদেশের দুই উইকেট তুলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা ভয় তৈরি করেন। তবে শেষ বিকালে বাংলাদেশের বিপদ বাড়তে দেননি মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর রহিম। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৪২ রানের জুটিতে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ ছাড়ায় ১০০ রান। আলোকস্বল্পতার কারণে আগেই শেষ করা হয় দ্বিতীয় দিনের খেলা। জয় ৩৮ ও মুশফিক ৩১ রানে অপরাজিত আছেন। বলা চলে, হতাশা কাটিয়ে স্বস্তি নিয়েই দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। দুজনের ব্যাটে চড়ে ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসের দ্বিতীয় দিন ভালোয় ভালোয় শেষ করেছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস বাংলাদেশ শেষ করেছে ২৭.১ ওভারে তিন উইকেটে ১০১ রানে। এখনো প্রোটিয়াদের চেয়ে পিছিয়ে আছে সমান ১০১ রানে। প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ ব্যাটাররা দ্বিতীয় ইনিংসেও নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ২০২ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে বাংলাদেশ। চার রান তুলতেই নেই দুই উইকেট। সাদমান ইসলাম ১ এবং মুমিনুল হক বিদায় নেন রানের খাতা খোলার আগেই। সাদমান ও মুমিনুল দুজনকেই সাজঘরের পথ দেখান কাগিসো রাবাদা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে চেষ্টা করেন বিপদ সামাল দেওয়ার। জুটিতে আসে ৫৫ রান। তবে ব্যাট হাতে আলো জ্বালাতে ব্যর্থ শান্ত। ২৩ রান করে কেশব মহারাজের বলে লেগবিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক। ৫৯ রানে তিন উইকেট হারিয়ে দল আরও বিপদে পড়ে। শেষ পর্যন্ত তা সামাল দেন জয় ও মুশফিক জুটি। এর আগে বোলিংয়ে ইনিংসটা ঠিকঠাকই শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে ছয় উইকেট তুলে নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু দ্বিতীয় দিনের লড়াইয়ে বোলিংয়ের সেই ছন্দ মোটেই ধরে রাখতে পারল না বাংলাদেশ। বরং উইকেটে হুঙ্কার তুলে সেঞ্চুরি তুলে নেন কাইল ভারানে। তার দায়িত্বশীলতায় ভর করে প্রথম ইনিংসে তিনশ' (৩০৮) ছাড়ানো সংগ্রহ পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। ঢাকা টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রানে থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মোট ২০২ রানের লিড নিয়ে শেষ হয়েছে প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংস। দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করা কাইল ভেরেনা খেলেন ১১৪ রানের ইনিংস। ১৪৪ বলে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল আট চার ও দুই ছক্কায়। টেস্টের প্রথম দিন ১৪০ রান নিয়ে দিন শেষ করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ৩৪ রানের লিড নিয়ে গতকাল টেস্টের দ্বিতীয় দিন শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। গতকাল দিনের শুরু থেকেই উইকেটে দাপট দেখাচ্ছিলেন কাইল ভারানে ও মুল্ডার। আগের দিনের থিতু হয়ে যাওয়া জুটিতে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টা নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় রান ছাড়িয়ে যায় দুইশ'র বেশি। লিডও বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে বাড়তে থাকে বাংলাদেশের দুশ্চিন্তা। অবশেষে প্রথম সেশনের মাঝামাঝিতে আক্রমণে এসে এই জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদ। ইনিংসের ৬৫তম ওভারে বোলিংয়ে এসে জোড়া উইকেট তুলে নেন তরুণ এই পেসার। প্রথমে ৬৪.৫তম ওভারে হাসান ভাঙেন মুল্ডারের প্রতিরোধ। মাল্ডারকে স্স্নিপে সাদমানের ক্যাচ বানিয়ে ১১৯ রানের জুটি ভাঙেন হাসান। ১১২ বলে ৫৪ রান করে মুল্ডার ফিরলে উইকেটে আসেন কেশভ মাহারাজ। তাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি হাসান। ঠিক পরের বলেই কেশভকে বোল্ড করে মাঠাছাড়া করেন এই পেসার। এক ওভারে দুই সতীর্থ ফিরলেও উইকেট আকড়ে পড়েছিলেন কাইল ভারানে। টেলএন্ডারদের নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রানের লাগাম একাই টানছিলেন তিনি। নবম উইকেটে ডেন পিটকে নিয়ে ৬৬ রানের আরেকটি জুটি উপহার দেন ভেরেনা। এর মাঝে দারুণ ব্যাটিংয়ে মাত্র ১৩৪ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করেন ভেরেনা। শতরানের মাইলফলক ছুঁতে ৮টি চার মারেন দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট-রক্ষক ব্যাটসম্যান। এই জুটিও ভোগাচ্ছিল বাংলাদেশকে। শেষ পর্যন্ত মিরাজ ভাঙেন এই জুটি। ডেন পিটকে এলবির ফাঁদে ফেলে বিদায় করেন তিনি। পিট ফেরার পর মিরাজই থামেন ভারানেকেও। তার আউটের পর শেষ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। সোমবার টেস্টের প্রথম দিন আলোকস্বল্পতায় খেলা ছয় ওভার কম হয়। ১৫ মিনিট কম খেলেই ইতি টানতে হয় প্রথম দিনের। সেই সময়টুকু পুষিয়ে দিতে গতকাল দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু হয়েছে ১৫ মিনিট আগে। এর আগে এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট করে দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশকে দ্রম্নত গুঁড়িয়ে দেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেরাও ব্যাটিং ইনিংসের শুরুটা ভালো করতে পারেনি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই হাসান মাহমুদের ভেতরে ঢুকা দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হন এইডেন মার্করাম। ৬ রানের বেশি করতে পারেননি প্রোটিয়া অধিনায়ক। দলীয় ৫০ রানে পরের উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ১২তম ওভারে ট্রিস্টান স্টাবস ফিরিয়ে নিজের উইকেটের খাতা খোলেন তাইজুল। মিরাজের বলে জীবন পাওয়া স্টাবস পরের ওভারেই তাইজুলের ঘূর্ণিতে ধরা পড়েন স্স্নিপে। সাদমানের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ২৭ রান করেন স্টাবস। দ্বিতীয় সেশনে এই দুটি উইকেটই ছিল বাংলাদেশের প্রাপ্তি। তাইজুল চড়াও হন তৃতীয় সেশনে। এই সেশনে একে একে তুলে নেন চার প্রোটিয়া ব্যাটারকে। তৃতীয় সেশনে তাইজুলের প্রথম শিয়ার ডেভিড বেডিংহ্যাম। তাইজুলের করা বল কাট করতে গিয়ে ১১ রানে কট বিহাইন্ড হন বেডিংহ্যাম। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মিছিলে লড়াই করতে চেয়েছিলেন টনি ডি জোর্জি। তাইজুলের ঘূর্ণিতে শর্ট লেগে ধরা পড়ে থেমে যায় সেই লড়াই। ৭২ বলে ৩০ করে থামেন তিনি। এরপর ম্যাথু ব্রিটিক্সিকে আউট করে টেস্টে নিজের ২০০তম উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েন তাইজুল। পরের শিকার রায়ানকে বানিয়ে পূরণ করেন ফাইফার। যা টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুলের ১৩তম ফাইফার। সংক্ষিপ্ত স্কোর বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ২৭.১ ওভারে ১০১/৩ (জয় ৩৮*, সাদমান ১, মুমিনুল ০, শান্ত ২৩, মুশফিক ৩১*; রাবাদা ৭-৩-১০-২, মাল্ডার ৭-১-২৩-০, মহারাজ ৯-০-৩৩-১, পিয়েট ৪.১-০-২৯-০)। দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস : ৩০৮/১০। বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৬/১০।