শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১
শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমাবেশ বঙ্গভবনে বিক্ষোভকারীদের ঢোকার চেষ্টা, পুলিশের বাধা

রাষ্ট্রপতির অপসারণে আলটিমেটাম

ঢাবিতে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা কমিটির অবস্থান হ প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুই উপদেষ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক হ অপসারণের সিদ্ধান্ত হয়নি :প্রেস উইং
যাযাদি ডেস্ক
  ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম -ফোকাস বাংলা

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে সময়সীমা বেঁধে (আলটিমেটাম) দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এর মধ্যে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অপসারণ ও ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে তারা। একই দাবিতে বঙ্গভবন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ব্যানারে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ছাত্র-জনতা। এ রিপোর্ট লেখার সময় মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টায় বঙ্গভবনের সামনে থাকা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে বিক্ষোভকারীরা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাতে বাধা দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। মঙ্গলবার বিকালে প্রধান বিচাপতির দপ্তরে ওই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ইসু্য নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকতে পারে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তবে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর এ দিন সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, 'এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।'

ছাত্র জনতার গণঅভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা, যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর দেন। সেদিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।'

এরপর সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সেই সরকারের শপথ পড়ান।

তার আড়াই মাসের মাথায় ১৯ অক্টোবর মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের 'কোনো দালিলিক প্রমাণ' তার কাছে নেই।

এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সেখানে তিনি বলেন- 'প্রায় আড়াই মাস পরে উনি (রাষ্ট্রপতি) যদি বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি,

তাহলে এটা স্ববিরোধিতা, শপথ লংঘন। উনি এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কিনা সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।'

এরপর রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে এক বার্তায় জানানো হয়, 'মীমাংসিত বিষয়ে বিতর্ক সৃষ্টি না করার জন্য রাষ্ট্রপতি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।'

পরের দিন মঙ্গলবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ও রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে কর্মসূচির আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন?সেখানে পস্ন্যাটফর্মের পক্ষ থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ।?

কর্মসূচির সমাপনী বক্তব্যে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুলস্নাহ বলেন, 'যে শহীদ মিনার থেকে আমরা এক দফা ঘোষণা দিয়েছিলাম, সেখান থেকে পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করতে চাইছি। আমাদের প্রথম দফা, যে সংবিধানের মধ্য দিয়ে চুপ্পু বলবৎ রয়েছে, এই মুজিববাদী বাহাত্তরের সংবিধানকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।? সেই সংবিধানের জায়গায় ২০২৪-এর গণঅভু্যত্থানের প্রেক্ষাপটে নতুন করে সংবিধান লিখতে হবে।'

হাসনাত আবদুলস্নাহ ঘোষিত অন্য চার দফা দাবি হচ্ছে- এ সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলার মাটি থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করতে হবে। ফ্যাসিবাদের সংবিধানের দোসর রাষ্ট্রপতি চুপ্পুকে (মো. সাহাবুদ্দিন) এ সপ্তাহের মধ্যে পদচু্যত করতে হবে। অভু্যত্থান ও জুলাই বিপস্নবের স্পিরিটের আলোকে ২০২৪-পরবর্তী বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ সপ্তাহের মধ্যে নতুন করে প্রক্লেমেশন অব রিপাবলিক ঘোষণা করতে হবে এবং এর ভিত্তিতে দেশে বিদ্যমান গণতান্ত্রিক ক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলের মতের ভিত্তিতে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনকে অবৈধ ঘোষণা করতে হবে। এই তিন নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে এবং তারা যেন ২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনোভাবেই প্রাসঙ্গিক না হতে পারেন ও নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেজন্য আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।'

যতদিন না এদেশের জন্য সুস্থ ও গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে পারছি, ততদিন পর্যন্ত আমাদের বিপস্নব শেষ হবে না বলে উলেস্নখ করেন সমন্বয়ক হাসনাত।

সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, 'দ্বিতীয় স্বাধীনতার পর খুনি হাসিনা ও তার কোনো দোসর গর্ত থেকে বের হওয়ার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলে ছাত্র-জনতা আবার ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামবে। রাষ্ট্রপতি চুপ্পু ৫ আগস্টে পুরো জাতির সামনে বলেছিলেন, খুনি হাসিনা তার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এখন তিনি বলছেন, তার কাছে পদত্যাগপত্র নেই।'

সারজিস বলেন, 'চুপ্পুসহ ফ্যাসিবাদের সব দোসরকে একটি কথা বলে দিতে চাই, ফ্যাসিস্টদের উৎপাত দেখা গেলে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে তা প্রতিরোধ করবে। প্রয়োজন হলে আবার আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত, এমনকি জীবন দিতেও প্রস্তুত। কিন্তু ফ্যাসিস্টের দোসর সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করতে আমরা আমৃতু্য প্রস্তুত থাকব।'

কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য রাখেন- সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার, সমন্বয়ক লুৎফর রহমান, সমন্বয়ক আশরেফা খাতুন, সমন্বয়ক রিফাত রশীদ, সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ প্রমুখ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে