সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করে প্রজ্ঞাপনের দাবিতে শাহবাগে 'অনশন' কর্মসূচি শুরু করেছেন একদল চাকরিপ্রত্যাশী। সোমবার জাতীয় জাদুঘরের সামনে বেলা ১২টা থেকে তারা অবস্থান নেন; এরপর বিকাল থেকে অনশনের কথা জানান আন্দোলনকারীদের 'অন্যতম মুখপাত্র' রুমান কবির। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি বলেন, 'আমরা এখনো শাহবাগে, বিকাল থেকে গণঅনশনের ঘোষণা দিয়েছি। এখানে প্রায় ২০০-২৫০ জন অবস্থান করছি। যতক্ষণ অফিসিয়াল ঘোষণা না আসছে, ততক্ষণ আমরা অনশন চালিয়ে যাব।'
আন্দোলনরতরা জানান, তাদের অব্যাহত দাবির মুখে 'সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪'র খসড়া প্রস্তাব উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করে বয়সসীমা নির্ধারণে গঠিত সংস্কার কমিটি। উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত পরে জানানোর কথা বলা হয়। এর পাঁচ দিনেও উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। ফলে ৩৫ প্রত্যাশীরা ফের শাহবাগে অবস্থান নিয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত তারা শাহবাগে অবস্থান করবেন।
সোমবার রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে দুপুর ১২টা থেকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৩৫ প্রত্যাশী
সাধারণ শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সন্ধ্যা ৭টায় তারা শাহবাগে অবস্থান করছিলেন।
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'জনপ্রশাসন সংস্কার কমিটির সুপারিশ দ্রম্নত বাস্তবায়ন চেয়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩০ এবং শর্ত সাপেক্ষে উন্মুক্ত প্রত্যাশীদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি আমরা পালন করছি। গত ১২ বছর ধরে আমরা এই এক দাবিই জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হচ্ছে না। আমরা বেকার, আমাদের কোনো চাকরি, আয় নেই। তবুও আমরা আমাদের দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছি। বারবার আন্দোলন করতে আমরা রাজপথে নামতে চাই না। তাই বলতে চাই, আমরা ৩৫-এর প্রজ্ঞাপন নিয়ে তবেই বাড়ি ফিরব। প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ব না।'
আন্দোলনে অংশ নেওয়া হাবিবুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা আজ এখানে একত্রিত হয়েছি, আমাদের এক দাবি, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নূ্যনতম ৩৫ চাই। আমাদের আজকের এটা পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি। দাবি আদায় করে তবেই আমরা বাড়ি ফিরব। আজ আমরা শাহবাগে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের দাবি, আমরা আজ চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫-এর প্রজ্ঞাপন নিয়ে তবেই শাহবাগ ছাড়ব।'
আন্দোলনকারীরা আগে থেকেই বলে আসছেন, দেশের সব পর্যায়ে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা আজ থেকে ৩৩ বছর আগে ১৯৯১ সালে ২৭ বছর থেকে ৩০ বছরে উন্নীত করা হয়। যখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়ানো যৌক্তিক। গড় আয়ু বাড়ার কারণে ২০১১ সালে অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করা হয়। কিন্তু, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা না বাড়িয়ে সেটি ৩০ বছরেই সীমাবদ্ধ রাখা হয়, যার কারণে দেশে উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গত ১৭ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত বৈঠকে অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়াটি উপস্থাপন করা হয়। বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে একটা কমিটি করে দেওয়া হয়েছিল। তাদের রিপোর্ট নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আমরা পর্যালোচনা করেছি। আরও পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত পরে জানাব।'
সংস্কার কমিটি তাদের প্রস্তাবে চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স নিয়ে কিছু বলেননি বলেও উলেস্নখ করেন পরিবেশ উপদেষ্টা।
৩৫ প্রত্যাশীদের অব্যাহত দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে একটি কমিটি গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।
আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত সংস্কার কমিটি বিভিন্ন দেশের চাকরির বয়সসীমা এবং আন্তর্জাতিক মান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে। সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা পুরুষের জন্য ৩০ থেকে ৩৫ এবং নারীর জন্য ৩০ থেকে ৩৭ বছরে উন্নীত করার সুপারিশ করে এই কমিটি।
কমিটি প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, 'মেয়েদের জন্য আলাদা করে বেশি বয়স দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা এই কারণে দিয়েছি যে, ছেলেদের মতো ওই বয়সে মেয়েদের পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফ্যামিলি অববিগেশনস থাকে, বিয়ে হয়ে যায়, বাচ্চাকাচ্চা হয়। তাই তারা যেন আসতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের নারী কর্মকর্তার সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোটা আছে, কিন্তু অতটা ফুলফিল হয় না এখনো। সে জন্য আমরা এ সুপারিশ দিয়েছি, যেন নারীরা এ সুবিধাটা পান, তারা আসতে পারেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য স্বশাসিত ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন, সংবিধি ও বিধিবিধান রয়েছে। তাই সর্বজনীন বিধান করার উদ্দেশ্যে 'সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফিন্যানশিয়াল করপোরেশনসহ স্বশাসিত সংস্থাগুলোতে চাকরির যেসব পদে সরাসরি নিয়োগের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩০ বছর উলেস্নখ রয়েছে, সেখানে ৩০-এর পরিবর্তে ৩৫ বছর করতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ২০২৪' শীর্ষক অধ্যাদেশের খসড়া তারা প্রস্তুত করেন বলে কমিটি প্রধান উলেস্নখ করেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই সংস্কার কমিটি তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। সাত কার্যদিবসের মধ্যে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ছেলেদের জন্য ৩৫ এবং মেয়েদের জন্য ৩৭ করার একটি সুপারিশ করে এই কমিটি। এই সুপারিশ যেন দ্রম্নত প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করা হয় এই দাবিতেই আজকের এই কর্মসূচি।
আহমেদ তানজিল আরও বলেন, 'অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এই কমিটি গঠন করেছে। আমাদের দাবি যৌক্তিক বলে তারা এই সুপারিশ করেছে। আমরা চাই আজকেই যেন আমাদের দাবির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপন না আসা পর্যন্ত আমরা শাহবাগ থেকে সরছি না।'