স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরে কমিশন গঠনের দাবি

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, যানজট-ভোগান্তি

প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তি এবং স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবিতে সোমবার নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে রাস্তা বন্ধ করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এতে রাজধানীর ধানমন্ডিসহ আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজট তৈরি হয়। ছবিটি সায়েন্সল্যাব মোড় থেকে তোলা -ফোকাস বাংলা
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্তি থেকে মুক্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাবি অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা ১১টা থেকে রাজধানীর নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির কারণে গুরুত্বপূর্ণ ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে আশপাশের সড়কসহ ঢাকার বিভিন্ন সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী। বিকাল ৪টায় শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবি জানিয়ে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কর্মসূচি শেষ করলে ধীরে ধীরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে ঢাকা কলেজের মূল ফটকে জড়ো হতে শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে একটি অংশ নীলক্ষেত মোড়ে এবং আরেকটি অংশ সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এতে সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। 'সাত কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা' ব্যানারে এই আন্দোলনে অংশ নেওয়া ইডেন কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রূপা বণিক বলেন, 'আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তি থেকে মুক্তি চাই। প্রয়োজনে সাত কলেজ নিয়ে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় করা হোক, সেজন্য ইউজিসিসহ অংশীজনদের অতি জরুরি বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা আর সেশনজটে পড়তে চাই না। চার বছরের কোর্স চার বছরেই শেষ করতে চাই।' জিনিয়া আহসান নামে ইডেন মহিলা কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে বার বার হয়রানির শিকার হয়েছি, সেখানে আর যেতে চাই না। ঢাবি থেকে মুক্তি চাই, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাই, আমরা কারও অধীনে থাকতে চাই না।' এর আগে রোববার মধ্যরাতে একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ ও বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা। রাত ১টার দিকে পৃথকভাবে মিছিল করেন তারা। রাত ১২টার দিকে আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের একটি দল ঢাকা কলেজের নর্থ হল ক্যাম্পাসে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। পরে শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মিছিল করতে করতে নীলক্ষেত হয়ে ইডেন কলেজের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। সেখান থেকে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড হয়ে পলাশী আবাসিক এলাকায় যায় শিক্ষার্থীদের মিছিলটি। এরপর সোমবার সকালে আবার তাদের কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুরে নীলক্ষেত মোড়ে 'টু জিরো টু ফোর-অ্যাফিলিয়েটেড নো মোর', 'শিক্ষা না বাণিজ্য-শিক্ষা শিক্ষা', 'ঢাবির প্রহসন মানি না মানব না', 'ঢাবির জায়গায় ঢাবি থাক, সাত কলেজ মুক্তি পাক'-সহ বিভিন্ন সেস্নাগান দেন শিক্ষার্থীরা। ঢাকা কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান ইব্রাহীম বলেন, '২০১৭ সালে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়েছি। পরীক্ষা আর রেজাল্টের মধ্যেই ঢাবি প্রশাসন সীমাবদ্ধ। শিক্ষার গুণগত মানের কোনো পরিবর্তন হয়নি। এমনকি রেজাল্ট প্রকাশ দেরিতে হওয়ায় আমাদের সেশনজটসহ নানা রকমের বঞ্চনার শিকার হতে হয়। আমরা ঢাবি থেকে মুক্তি চাই, স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় চাই।' একই কথা বলেন ঢাকা কলেজের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রিমন। তিনি বলেন, 'আমরা চাই অতি শিগগির সাত কলেজ ঢাবির অধিভুক্তি থেকে মুক্তি পাক। চার বছরের কোর্স আমরা চার বছরেই শেষ করতে চাই। অচিরেই কমিশন গঠন করে সমাধান চাই। যতক্ষণ সরকার সমাধানে না আসবে আমরা রাস্তা ছাড়ব না।' আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তারা পৃথক স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় চান। ২০১৭ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়। তবে এই সিদ্ধান্ত ছিল অপরিকল্পিত। ফলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে এই কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করা হয়েছিল, সেটা বিগত ৭ বছরেও অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এ জন্য তারা আর ঢাবির অধিভুক্তি চান না। তারা জানান, দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কারো কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া না পাওয়ায় তারা রাস্তায় নেমেছেন। রমনা জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মো. জুয়েল রানা বলেন, 'কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যেন না হয় পুলিশ সেই চেষ্টা করছে। পুলিশ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করেছে। আমরা তাদের অনুরোধ করেছি যেন সাধারণ মানুষের কোনো ভোগান্তি না হয় ও অন্য কেউ আন্দোলনের সুযোগ নিতে না পারে।' বিকাল ৪টার দিকে সায়েন্সল্যাব মোড়ে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আফজাল হোসেন রাকিব বলেন, 'আমরা মানুষের ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আগামী ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে আন্দোলন শেষ করছি।' এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তিনি তিন দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হলো- সাত কলেজ নিয়ে একটি স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় করার অভিপ্রায়ে দ্রম্নত সময়ের মধ্যে একটি সংস্কার কমিটি গঠন করতে হবে। সংস্কার কমিটি অনধিক ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে সাত কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সাত কলেজের সমন্বয়ে শুধুমাত্র একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার রূপরেখা প্রণয়ন করবেন। সংস্কার কমিটি বর্তমান কাঠামো সচল রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। যাতে করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সেশন জটের কোনো পরিবেশ তৈরি না হয়। এরপর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে সায়েন্সল্যাবের দুই পাশের সড়কে ধীরে ধীরে যানচলাচল শুরু হয়।