মিথ্যাচার, শপথ লঙ্ঘনের শামিল আসিফ নজরুল
প্রকাশ | ২২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাকে 'মিথ্যাচার' বলে মন্তব্য করেছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আইন উপদেষ্টা বলেন, 'রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, তিনি নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে
পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ওনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি তা গ্রহণ করেছেন।'
সরকার গঠনসহ আরও বিভিন্ন তথ্য উলেস্নখ করে আসিফ নজরুল বলেন, 'উনি (রাষ্ট্রপতির) আর এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না, সেই সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।'
ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা, যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে।
সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সেদিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর দেন। সেদিন রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনও বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এবং আমি তা গ্রহণ করেছি।'
এরপর সুপ্রিম কোর্টের মতামত নিয়ে নোবেলবিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সেই সরকারের শপথ পড়ান।
তার আড়াই মাসের মাথায় গত ১৯ অক্টোবর মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের 'কোনো দালিলিক প্রমাণ' তার কাছে নেই।
এ নিয়ে নানা আলোচনার মধ্যে সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
ঘটনার পরম্পরা ব্যাখ্যা করে আইন উপদেষ্টা বলেন, 'উনি (রাষ্ট্রপতি) নিজেই ৫ আগস্ট রাত ১১টা ২০ মিনিটে, পেছনে তিন বাহিনীর প্রধানকে নিয়ে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী উনার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং উনি সেটা গ্রহণ করেছেন। এরপর উনার কাছ থেকে সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া হয়- এ পরিস্থিতিতে করণীয় কী আছে?'
তিনি বলেন, 'সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই উপদেশমূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করে জানতে চাওয়া হয়। এটার প্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবং অন্যান্য বিচারপতিরা মিলে উনারা একটা মতামত প্রদান করেন, রাষ্ট্রপতির রেফারেন্সের ভিত্তিতে। সেই মতামতের প্রথম লাইন হচ্ছে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন...। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানসহ অ্যাপিলেট ডিভিশনের সব বিচারপতি স্বাক্ষর করেছেন।'
উপদেষ্টা বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং রাষ্ট্রপতি জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন, এর প্রেক্ষিতে একটা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা যায়... সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের এমন মতামতের ভিত্তিতে একটা নোট আইন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে প্রেরণ করা হয়। এই অভিমতটা উনি দেখেছেন এবং গ্রহণ করেছেন, স্বাক্ষর করেছেন। এরপর উনি নিজে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছেন। ৫ আগস্ট রাত ১১টার ভাষণে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি ওটা গ্রহণ করেছেন এমন কথা বলে এবং একের পর এক কার্যাবলির মধ্য দিয়ে এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে, উনি পুরো জাতিকে বার বার নিশ্চিত করেছেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। প্রায় আড়াই মাস পরে উনি যদি বলেন যে, প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগপত্র দেননি, তাহলে এটা স্ববিরোধিতা, শপথ লঙ্ঘন। উনি এই পদে থাকার যোগ্যতা আছে কি না সে সম্পর্কে প্রশ্ন আসে।'
আসিফ নজরুল বলেন, 'আপনার যদি শারীরিক বা মানসিক সক্ষমতা না থাকে বা আপনি যদি গুরুতর অসদাচরণ করেন, তখন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আর ওই পদে থাকতে পারেন কি না সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার স্কোপ আমাদের সংবিধানে আছে।'