সাদা পোশাকে বাংলাদেশের পরবর্তী মিশন দক্ষিণ আফ্রিকা। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে পরপর দুটি সিরিজ প্রতিপক্ষের মাঠে খেলার পর এবার ঘরের মাঠে খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। এমন এক সময় শুরু হচ্ছে টেস্ট সিরিজ, যখন মাঠ ও মাঠের বাইরে বাংলাদেশ দলের অবস্থা ভীষণ নাজুক। ভারত সিরিজে ভরাডুবি, প্রোটিয়া সিরিজের আগে সাকিব ইস্যুতে হট্টগোল।
সব একপাশে রেখে আজ সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ। ভারতের কাছে হোয়াইটওয়াশ হলেও প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচ দিয়ে জয়ের ধারায় ফেরার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেটে স্টেডিয়ামে সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হবে সিরিজের প্রথম টেস্ট। আর এই ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে গাজী টিভি ও টি স্পোর্টস।
এবারের বাংলাদেশ সফরে আসা দক্ষিণ আফ্রিকার অনভিজ্ঞ হওয়ায় জয় দিয়ে সিরিজ শুরুর ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস টাইগাররা। তেম্বা বাভুমা ছাড়া বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকা দলের কোনো খেলোয়াড়ের বাংলাদেশের মাটিতে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা নেই। আবার বাংলাদেশ সফরে দলের সঙ্গে থাকলেও ইনজুরির কারণে সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলতে পারবেন না দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়মিত অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তার অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব ৫
দিবেন এইডেন মার্করাম।
যদিও শক্তি-সামর্থ্য ও সাফল্যে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে প্রোটিয়ারা। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়েও ব্যবধান স্পষ্ট। এখন পর্যন্ত টেস্টে ১৪বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। যার মধ্যে ১২টিতেই শেষ হাসি আফ্রিকানদের। বাংলাদেশ অবশ্য দুটি ম্যাচে ড্র করেছে। দুটিই ঘরের মাঠে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে আসে প্রোটিয়ারা। সেবার দুই ম্যাচ সিরিজের দুটিতেই ড্র করে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সেই সুখস্মৃতি সঙ্গী হবে আজ সোমবার। তবে, দুই দলের সর্বশেষ টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশ হয়েছে ধবলধোলাই।
২০২২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত সিরিজের দুই ম্যাচে কোনো প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেনি বাংলাদেশ। ২২০ রান ও ৩৩২ রানের বিশাল ব্যবধানে হার মানে। সবচেয়ে ভয়ানক বিষয়, প্রোটিয়াদের কাছে যে ১২ ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ, এর আটটিই ইনিংস ব্যবধানে। ২০১৫ সালে সর্বশেষ বাংলাদেশে সফরে খেলা দুটি টেস্টই ড্র করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বৃষ্টি এবং বৈরি আবহাওয়ার কারণে সমতায় সিরিজ শেষ করেছিল দুই দল। এরপর থেকে ঘরের মাঠে শক্তিশালী দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। পরে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের মতো বড় বড় দলের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেয়েছে টাইগাররা।
সা¤প্রতিক ঘরের মাঠের রেকর্ডের ভিত্তিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলকে হারাতে বিশ্বাস যোগাচ্ছে বাংলাদেশকে। এ ছাড়াও গত ১০ বছরে উপমহাদেশে কোনো টেস্ট জিততে পারেনি প্রোটিয়ারা। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমরা জিততে পারিনি। ঘরের মাঠে খেলা হওয়ায় এবার আমাদের সামনে দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিজ্ঞ না হলেও তারা খুবই ভালো দল বলে আমি মনে করি। আমরা পাকিস্তানে ভালো করেছি, কিন্তু ভারতে ভালো করতে পারিনি। আমি মনে করি, আমাদের টেস্ট দল ভালো অবস্থায় আছে। আমার মতে, এটি ভালো টেস্ট ম্যাচ হবে, যদি আমরা সঠিকভাবে পরিকল্পনাগুলো কাজে লাগাতে পারি। প্রতিটি সেশনেই আধিপত্য বিস্তার করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে।’
মিরপুরের পিচ সবসময়ই স্পিনারদের পক্ষে থাকে। তাই স্পিনসহায়ক উইকেটে স্পিনারদের সামলাতে সব সময়ই হিমশিম খেতে হয় উপমহাদেশের বাইরের দলগুলোকে। এ ছাড়া কখনোই স্পিনারদের ভালো খেলতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। যা বাংলাদেশের সুযোগকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শান্ত বলেন, ‘সাধারণত মিরপুরে বড় ভ‚মিকা রাখে স্পিনাররা। তাদের বেশি কিছু করার চেষ্টা করতে হবে না। তারা নিজেদের দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করতে পারলে দলের জন্যই ভালো হবে। যথার্থ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের ২০ উইকেট নেওয়ার উপায় খুঁজে বের করতে হবে, তাহলেই সহজ হয়ে যাবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরুর মাত্র কয়েকদিন আগে সাকিব আল হাসান ইস্যু এবং চন্ডিকা হাথুরুসিংহকে প্রধান কোচের পদ থেকে বরখাস্ত করার মতো ঘটনা দলের প্রস্তুতিতে প্রভাব ফেলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু শান্ত জানান, দলের পুরো মনোযোগ ম্যাচের দিকেই রয়েছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত বলেন, ‘আমরা বাইরের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবছি না। আমাদের সব মনোযোগ ম্যাচকে ঘিরে। আমরা এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জিততে পারিনি। তাই এটি আমাদের দলের জন্য ভালো সুযোগ। কারণ, আমরা ঘরের মাঠে খেলছি।’
এদিকে ‘অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে’ সাকিব আল হাসানকে দেশে না ফেরার পরামর্শ দেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ। ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে খেলা হচ্ছে না দেশসেরা এই বাঁহাতি অলরাউন্ডারের। এতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে প্রোটিয়া শিবির। সংবাদ সম্মেলনে তা স্বীকারও করে নিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করাম।
সাকিবের না থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাসতে হাসতেই প্রোটিয়া দলপতি বলেন, ‘আমরা তাকে মিস করব না (হাসি)।’ এরপর বলেন, ‘সে সত্যিই একজন ভালো বোলার এবং সত্যিই ভালো খেলোয়াড়। শেষ পর্যন্ত এখনো তারা (বাংলাদেশ) একটি শক্তিশালী স্কোয়াড পেয়েছে এবং হোম কন্ডিশনেও সত্যিই শক্তিশালী। নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।’
সাকিবের মুখোমুখি না হওয়া যে তাদের জন্য স্বস্তির, তা স্বীকার করে বলেন, ‘সে অবশ্যই একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় এবং সে বহু বছর ধরে খেলেছে। এটা খুবই ভালো ব্যাপার যে, আমরা তার সামনে আসছি না এবং তার মুখোমুখি হচ্ছি না এবং তার বিপক্ষে বোলিংও করছি না। স্পষ্টতই বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমে তার অভিজ্ঞতাকেও আমি ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছি।’
ভারতে সবশেষ সিরিজে ভরাডুবির পরও সাকিবকে ছাড়া বাংলাদেশ দল বেশ শক্তিশালী বলে মনে করেন মার্করাম, ‘(তবে) তার এখানে না থাকার বিষয়টিতে আমরা খুব বেশি ফোকাস করিনি, কারণ আমি যেমন বলেছি, তাদের এখনো একটি শক্তিশালী স্কোয়াড় রয়েছে।’