সাহস থাকলে দেশে এসে বিচারের মুখোমুখি হন হাসিনাকে অ্যাটর্নি জেনারেল
প্রকাশ | ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
প্রত্যেক আসামির উচিত আদালতের সামনে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া, আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী হয়তো সেটাই করবেন। আওয়ামী লীগ প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির বিষয়ে এক প্রশ্নে রোববার এমন মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কথা বলেছেন। ওনার নিজের বক্তব্য আপনারা এক্সামিন (পর্যালোচনা) করে দেখেন। ওনারা (বিভিন্ন সময় অন্যদের) বলেছেন, 'সাহস থাকলে বাংলাদেশে এসে আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বিচারের মুখোমুখি হন।' আশা করি, উনি এটা বিশ্বাস করেন এবং এটা ওনার জন্য ভালো হবে।' অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, 'ওনার বক্তব্য, উনি যে দর্শনে বিশ্বাস করেন, প্রত্যেক আসামির উচিত, আদালতের সামনে এসে বিচারের মুখোমুখি হওয়া, উনি হয়ত সেটাই করবেন। ' ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মুখে দেশ ছেড়ে ভারতে পালানো আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এক মামলায় ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল। চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনাল এই আদেশ দেন। অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মামলার পরবর্তী তারিখ ১৮ নভেম্বর রেখে এই সময়ের মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করতে বলা হয়েছে। অভু্যত্থানে গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর প্রথমবারে মতো ১৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবু্যনালে বিচার কাজ শুরু হয়। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কোর্টের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর চিফ প্রসিকিউটর মামলার আবেদন পড়ে শোনান। এ সময় সংবিধানের বিভিন্ন সংশোধনী, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে গুম, খুন, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে হওয়া মামলার পরিসংখ্যান, অর্থ পাচারের পরিসংখ্যান এবং সর্বশেষ ছাত্র আন্দোলনে বলপ্রয়োগের তথ্য তুলে ধরেন তিনি। চিফ প্রসিকউটর আদালতে বলেন, আসামির বিরুদ্ধে তদন্তে গণহত্যার প্রাথমিক অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আসামি প্রভাবশালী। এখনো দেশের বিভিন্ন স্থানে আসামির লোকজন বিভিন্ন পজিশনে আছে। তাই আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া মামলার তদন্তকাজ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করছি। একপর্যায়ে আদালত জানতে চান, রাষ্ট্রীয়ভাবে আসামির অবস্থান জানেন কিনা। জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, না। এরপর আদালত চিফ প্রসিকিউটরের আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন। আর ১৮ নভেম্বর মামলার পরবর্তী তারিখ রেখে এই সময়ের মধ্যে আসামিকে আদালতে হাজির করতে বলেন। পরে তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আদালত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৮ নভেম্বরের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে এই আদালতে উপস্থিত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নিহতদের পক্ষ থেকে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর আবেদন করা হয়েছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটনার তারিখ হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে। এ ছাড়া এ সময় আহত হয়ে পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখে নিহতরাও এর আওতায় থাকবেন। ঘটনার স্থান হিসেবে উলেস্নখ করা হয়েছে সমগ্র বাংলাদেশকে। অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, ১-৯ নম্বর আসামির নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশীয় ও আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে। গণহত্যার অভিযোগে এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে শেখ হাসিনা, তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলের নেতা, পুলিশের তৎকালীন আইজিসহ বেশ কয়েকজন সদস্য,র্ যাবের তৎকালীন ডিজি, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে।