গবেষণার তথ্য
'বিপজ্জনক কসমোপলিটান' ডেঙ্গুতে মৃতু্য বাড়াচ্ছে
প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামে 'বিপজ্জনক কসমোপলিটান' প্রকরণের কারণে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও মৃতু্যর হারের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন গবেষকরা। এই ভেরিয়েন্টটি দেশে এর আগে দেখা যায়নি। ডেঙ্গুর নতুন এই ভেরিয়েন্টটি পর্যটক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে দেশে ঢুকছে দাবি করে গবেষকরা বলছেন, চট্টগ্রামে এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত ৮৮ ভাগ রোগীর মধ্যেই পাওয়া গেছে ডেন-২ প্রকরণের ডেঙ্গু ভাইরাস। আর ১১ ভাগ রোগীর মধ্যে মিলেছে ডেন-৩ প্রকরণ। এছাড়া গত বছরের ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জিনোম সিকুয়েন্স করে ৫০ ভাগ রোগীর মাঝেই 'বিপজ্জনক কসমোপলিটন' প্রকরণের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। যা ডেঙ্গু রোগের তীব্রতা ও জটিলতা বাড়িয়ে দিতে পারে।
শনিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠনো এক বিজ্ঞপ্তিতে গত দুই বছর ধরে চট্টগ্রামের ডেঙ্গু রোগীদের নিয়ে চলমান এই গবেষণার তথ্য জানিয়েছেন গবেষকরা।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের তত্ত্বাবধায়নে চলমান এই গবেষণায় নেতৃত্ব দিচ্ছে আইসিডিডিআর'বি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ।
গবেষকদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৬৯ ভাগ রোগীই 'ডেন ২' সেরোটাইপে আক্রান্ত ছিল। আর এই বছর ৮৮ ভাগ রোগী 'ডেন ২' তে আক্রান্ত। গত বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ ছিল পুরুষ আর ডেঙ্গু রোগীদের প্রতি পাঁচজনে একজন ছিল শিশু।
গবেষকরা চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তারা বলছেন, নগরীতে ৬০ শতাংশ ডেঙ্গু রোগীর আবাসস্থল
পাঁচটি এলাকায়, যেগুলোকে তারা হটস্পট বলছেন। এলাকাগুলো হচ্ছে- বাকলিয়া, চকবাজার, কোতোয়ালি, ডবলমুরিং ও বায়েজিদ বোস্তামী।
এছাড়া গ্রামাঞ্চলের মধ্যে সীতাকুন্ডু, হাটহাজারী, পটিয়া, বোয়ালখালী এবং কর্ণফুলী এলাকা থেকে সবচেয়ে বেশি রোগী পাওয়া গেছে। গত বছর ১ হাজার ৫০০ রোগীর ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও পেডিয়াট্রিক নেফ্রোলজি বিভাগ, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, বিআইটিআইডি, আইসিডিডিআর,বি এবং নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং, রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন ল্যাব।
আর পুরো গবেষণার সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানে ছিল স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন। এই ছয়টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে ২০০ রোগীর তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই গবেষণা এখনও চলমান।
গবেষকদের মতে, চট্টগ্রামে পাওয়া কসমোপলিটান লিনিয়েজ দেশে একেবারেই নতুন। দেশের অন্য সব অঞ্চল থেকে পাওয়া এর আগের প্রকরণগুলো থেকে চট্টগ্রামে পাওয়া প্রকরণটি উলেস্নখযোগ্যভাবে ভিন্ন। ফাইলোজেনেটিক বিন্যাস তথা তুলনামূলক বিশ্লেষণে পাওয়া যায়- এই প্রকরণগুলো মিয়ানমার এবং ভারতে প্রবাহিত হচ্ছে।
গবেষকরা ধারণা করছেন, পর্যটক ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের মাধ্যমে এই বিপজ্জনক প্রকরণটি দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এই প্রকরণ ডেঙ্গুর তীব্রতা ও মৃতু্যহার বাড়িয়ে দেয়। এই জিনোম সিকুয়েন্সগুলো জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভান্ডার জার্মানির গেস্নাবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটায় (জিআইএসএআইডি) গৃহীত হয়েছে। এছাড়া এই গবেষণার দুটি গবেষণাপত্র ইতোমধ্যে ইউরোপিয়ান জার্নাল অব মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনলজি এবং আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে গৃহীত হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।
চলতি বছর চলমান এই প্রকল্পে আইসিডিডিআরবি'র বিজ্ঞানী ড. মুস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে পরিচালিত চট্টগ্রাম অঞ্চলে এই গবেষণা দলে আছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. এমএ সাত্তার ও ডা. আবুল ফয়সাল মো. নুরুদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. আদনান মান্নান ও এসপেরিয়া হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ডা. মো. আবদুর রব।
গবেষকরা মনে করেন, ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধান ও নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য জিনোম সিকুয়েন্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসব তথ্য গুরুত্ব সহকারে সরকার গ্রহণ করলে তা পরবর্তী বছরে ডেঙ্গু প্রতিরোধে অগ্রিম ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং ও জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।