প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংলাপ

যৌক্তিক সময়ে নির্বাচনের তাগিদ

অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান সংস্কার কমিশনে রাজনৈতিক প্রতিনিধি রাখার দাবি

প্রকাশ | ২০ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে শনিবার যমুনায় সংলাপে অংশ নেন গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন -ফোকাস বাংলা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময় জাতীয় নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এসব দলের নেতারা বলেছেন, যত দ্রম্নত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠুু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় জনগণ। প্রধান প্রধান সংস্কারগুলো জনগণের নির্বাচিত সরকার করবে। এ জন্য দ্রম্নততম সময় একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছেন তারা। পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বাজার সিন্ডিকেট ও নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংলাপে জোর দেন নেতারা। গণতন্ত্র ও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দল নিষিদ্ধের দাবি উঠেছে সংলাপে। রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত ১০ কমিশনে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি রাখার আহ্বান জানান নেতারা। এ ছাড়াও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ গত ১৫ বছরে নেতাকর্মীদের নামে হওয়া রাজনৈতিক মামলাগুলো প্রত্যাহার চেয়েছেন তারা। প্রশাসনে ফ্যাসিবাদের দোসরদের সরানোর তাগিদও দিয়েছেন নেতারা। শনিবার দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তৃতীয় দফায় এই সংলাপ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিকাল ৩টায় প্রথমে গণফোরামের সঙ্গে শুরু হয় এদিনের সংলাপ। রাতে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে সংলাপ শেষ হয়। এ ছাড়াও এদিন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, জাতীয় গণফ্রন্ট, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন- এনডিএম, বাংলাদেশে লেবার পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ (একাংশ) শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে পৃথক পৃথক সংলাপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে নিজ নিজ দলের পক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেন। সংলাপে সংবিধান, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ড. কামাল হোসেন কথা বলেছেন বলে জানান দলটির সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু। তিনি বলেন, সংলাপে বাজার পরিস্থিতি নিয়ে জোর দিয়েছি। সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। পতিত স্বৈরাচার ও তাদের বিদেশি এজেন্টরা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে, তাদের থেকে উদ্ধারের জন্য আমাদের সবাইকে জাতীয়ভাবে, ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সংলাপে নির্বাচন নিয়ে কথা হয়েছে জানিয়ে মোস্তফা মহসীন বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন কমিশন করতে হবে। এটার জন্য সার্চ কমিটি বা কিছু করার প্রয়োজন আছে, ভালো লোক নিয়োগ দেওয়ার দরকার আছে। যাতে অতীতের মতো কোনো সমস্যা না হয়। রোডম্যাপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, 'আমরা কোনো তারিখ উলেস্নখ করিনি। বলেছি, সংস্কার শেষ দ্রম্নত নির্বাচন দেওয়ার জন্য।' সংবিধান সংশোধনের জন্য প্রস্তাব প্রসঙ্গে বলেন, দুই-এক দিনের মধ্যে আলোচনা করে লিখিত আকারে প্রস্তাব দেব। আটটি দিবস বাতিল করা হয়েছে, এ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে গণফোরামের এই নেতা বলেন, জাতীয় দিবস ছাড়া কোনো দিবসই রাখা উচিত নয়। সংলাপে গণফোরামের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন- দলটির কো-চেয়ারম্যান এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, সদস্যসচিব মিজানুর রহমান, সদস্য এ কে এম জগলুল হায়দার আফ্রিক, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোশতাক আহমেদ ও সুরাইয়া বেগম। এদিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপকালে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আলোচনা করেছি এবং লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। প্রথমবার যখন এসেছি, তখন ১০৩টি প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আজ আরও ২৩টি প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের দল কাউকে সুবিধা দেওয়ার জন্য বা কাউকে জেল থেকে মুক্তির জন্য কোনো প্রস্তাব দেয়নি। যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তা বাংলাদেশের জনগণের যা প্রয়োজন, সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন, সুন্দর প্রশাসন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশের মানুষ কষ্ট পাচ্ছে- এই পয়েন্টগুলো আমরা দিয়েছি।' অলি আহমদ বলেন, 'আমরা পুরো জাতি জুলাই-আগস্টে একটা যুদ্ধের মধ্যে গেলাম। এই যুদ্ধটা করা হলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেন হলো, কারণ তারা অন্যায়ভাবে পুলিশকে ব্যবহার করেছে। প্রশাসনকে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করেছে। জনগণের সঙ্গে মুখোমুখি করেছে। দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে, দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়েছে।' সংস্কার কমিশন নিয়ে এলডিপি প্রেসিডেন্ট বলেন, 'সংস্কার কমিশন গঠন করলে হবে না, কমিশনকে রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দিতে হবে। এই রূপরেখা তৈরি করার পর পুরো বাংলাদেশের যারা যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নতুন করে খসড়া তৈরি করবে। খসড়া শেষে তারা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ওয়ার্কশপ করবে। ওয়ার্কশপ শেষে তারা চূড়ান্ত করবে আগামীর বাংলাদেশে কী কী সংস্কার করবে। এরপর রাজনীতিবিদদের কাছে এই সংস্কার কপি দেওয়া হবে। এর ওপর রাজনীতিবিদদের লিখিতভাবে মতামত দিতে হবে।' নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে কথা হয়েছে কিনা, জানতে চাইলে অলি আহমদ বলেন, 'ঘরটা আগে বানাই, পরে চিন্তা করব, কোন রুমে থাকব। এখন মাত্র ইট ঢালাই শুরু হয়েছে।' এলডিপি নেতা আরও বলেন, 'জুলাই-আগস্টে আমাদের বহু ছেলেমেয়ে হতাহত হয়েছে। দেড় হাজারের ওপর আমাদের ছেলেমেয়ে মৃতু্যবরণ করেছে। অনেকে বলে আরও বেশি হবে, যার কোনো হিসাব নাই। অনেক লাশ পুড়িয়ে ফেলছে। ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছে।' ১৯৭১ সালে জামায়াতের ভূমিকার প্রসঙ্গ টেনে অলি আহমদ বলেন, 'জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করছিল, পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সেদিন আমরা তাদের নিষিদ্ধ করেছিলাম। আজকে কী কারণে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে না। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। কারণ, আওয়ামী লীগ ১৮ কোটি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে। তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই।' প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপে অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য নূরুল আলম তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। ১২-দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের যেসব পেতাত্মা এখনো প্রশাসনে ঘাপটি মেরে বসে আছে, তাদের আমরা অপসারণ করতে বলেছি। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ট্রাকের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছি। সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে হলেও অবিলম্বে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য যা করা প্রয়োজন তিনি সেই পদক্ষেপ নেবেন। জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সবেচেয় বড় কন্টেইনার হ্যান্ডলিং টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সব আয়োজন করেছিল পতিত স্বৈরাচার সরকার। এর মাধ্যমে দেশের ক্ষতি করা হয়েছে। অথচ এই বন্দর পরিচালনায় দেশের যোগ্যতাসম্পন্ন অনেক লোক রয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের পরিসর বাড়িয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে এনে সুশাসন কায়েম করতে হবে। আমরা সংস্কারের বিষয়ে একমত পোষণ করেছি। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ বাতিল করে তৃণমূল থেকে স্বৈরাচারকে উৎখাতের কথা বলেছি। সংস্কার শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছি। সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ছাত্র জনতার বিপস্নবে গঠিত সরকারকে এখন বিপস্নবী আচরণ করতে হবে, ফ্যাসিজমের মূল উৎপাটন করতে হবে। যেসব দল ফ্যাসিজমকে সহযোগিতা করেছে, তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। সংলাপে ১২-দলীয় জোটের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে ১৪ দফা লিখিত প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, সংস্কার সংস্কারের মতো করে চলবে। সরকারকে এর মধ্যে একটা নির্বাচনী রোডম্যাপ দিতে বলেছি। সংস্কার কমিশনের কার্যক্রম ৯০ দিনের মধ্যে শেষ করার দাবি জানানো হয়েছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে বৈঠক আলোচনা হয়েছে। আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে তার টিম দিয়ে বাজার মনিটরিং করার পরামর্শ দিয়েছি। সিন্ডিকেট ভাঙার কথা বলেছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও উন্নতি করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। একই সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কারের মালিক জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার। সংবিধানের মেজর পরিবর্তন করবে নির্বাচিত সরকার। অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি, পরিচালকদের আইনের আওতায় আনার দাবিও জানায় সমমনা জোটের শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। নিষিদ্ধ করা হচ্ছে, নাকি নিষিদ্ধ করা হবে, সেটা মুখ্য না। একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। কোনো রাজনৈতিক দল যদি শুধু গণহত্যাকে সাপোর্ট করে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি কঠোর হতে বলে, তবে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকে না। আওয়ামী লীগ নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হবে, নাকি হাইকোর্ট থেকে কোনো আদেশের মাধ্যমে হবে, সেটি পরের ব্যাপার, কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটা আরম্ভ হওয়া উচিত। পার্থ বলেন, আমি বলেছি, এমন কোনো সংস্কার হাতে নেবেন না, যেটা গণতান্ত্রিক সরকারের নেওয়া উচিত। আপনাদের সংস্কারগুলো নির্বাচনমুখী সংস্কার হলে ভালো হবে। বাকি প্রস্তাব থাকতেই পারে, যেগুলো হয়ত পরবর্তী সরকার করবে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এটা জনগণের সরকার। কিন্তু জনগণের দ্বারা নির্বাচিত কোনো সরকার না। আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আওয়ামী লীগ তিনটি অবৈধ নির্বাচন করেছিল, সে বিষয়ে কোনো স্টেপ নেওয়া যায় কিনা, আমরা সেই ব্যাপারেও বলেছি। দ্রব্যমূল্যের দাম অলরেডি মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। আওয়ামী লীগের আমলে দেশ থেকে পাচার হয়ে যাওয়া অর্থগুলো যেন ফেরত আনা হয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছেন পার্থ। এদিকে বৈঠক শেষে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম বলেন, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল ও জাতীয় গণফ্রন্টের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার আমন্ত্রণে তার সঙ্গে আমরা সংলাপে বসেছিলাম। আমরা সুস্পষ্টভাবে সরকারকে বলেছি, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে ভারত থেকে নিয়ে এসে ফ্যাসিবাদের দোসরদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি, প্রশ্ন তুলেছি, যে কীভাবে তারা পালিয়ে গেল? আমরা প্রশ্ন তুলেছি, যারা এই ছাত্র-শ্রমিকের গণ-অভু্যথানে শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছেন, তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা করতে হবে এবং আবাসন চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণের হাতে ক্ষমতা আনার জন্য জনগণের সরকার এবং সংবিধান প্রতিষ্ঠার জন্য এখানে সংবিধান সভার একটা নির্বাচন করতে হবে। কারণ, আমরা মনে করি, বিদ্যমান সংবিধান জনগণের গণতান্ত্রিক সংবিধান না। এটা একটা অবৈধ সংবিধান। লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, আমরা বলেছি যত সংস্কার করুক না কেন, সবার আগে সংস্কার করতে হবে উপদেষ্টা পরিষদের। এই পরিষদের হাতেগোনা কয়েকজনের সফলতা ছাড়া বাকি সবাই ব্যর্থ। তাই ব্যর্থদের দ্রম্নত অপসারণ করতে হবে। তিনি বলেন, উপদেষ্টা পরিষদের ছাত্ররা ভালো করেছে (নাহিদ ও আসিফ)। আমরা ভেবেছিলাম তারা ভালো করবে না। কিন্তু বড় বড় সাবেক সচিব, উপদেষ্টাদের চেয়ে তারা ভালো করেছে। আমরা আলী ইমাম মজুমদারের ব্যাপারে বলেছি। তাকে অপসারণ করতে হবে। আলী ইমাম মজুমদার প্রশাসনে আওয়ামী লীগদের বেছে বেছে নিয়োগ দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে ক্ষমতা নেওয়ার পর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অনেকগুলো কথা বলেছেন, সুপ্রদীপ চাকমা শপথ নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী। বিভিন্ন এনজিও প্রধানদের এনে এটা একটা এনজিওগ্রাম সরকার করা হয়েছে। এখানে যারা যোগ্য, কর্মঠ তাদের আনতে হবে। প্রধান উপদেষ্টা সঙ্গে সংলাপে বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা দ্রম্নত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)। দলটির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, সংলাপে সংস্কারসহ একাধিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) আমাদের কাছ থেকে বেশ কিছু প্রস্তাবনা চেয়েছিলেন। প্রথম নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে আমরা বলেছি ২০২৫ সালের জুনের পর সহজেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব এবং ওনাদের সেভাবে চেষ্টা করা প্রয়োজন। ওনারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের নিয়মিত আলোচনায় থাকবেন। এই আলোচনার মাধ্যমে যত শিগগিরই নির্বাচন দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা আছে। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের জানিছেন, যে কমিশন গঠিত হয়েছে সেই কমিটির রিপোর্ট আসলে আমাদের সঙ্গে আরেকবার বসবেন। এই রিপোর্ট মোতাবেক সংস্কার তারা করবেন, নাকি নির্বাচিত সরকার করবে, তা ঠিক করেই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। এর আগে নির্বাচনী রোডম্যাপ দেওয়ার চেষ্টা করবেন। আমরা আস্থা রাখি, প্রধান উপদেষ্টা যে কথাগুলো বলেছেন, সে কথা মোতাবেক আগামী দিনে কাজ করবেন। বাংলাদেশ জাসদের (একাংশ) সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, সম্প্রতি ওনারা (অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা) বঙ্গবন্ধু ও ৭ মার্চ নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা নিয়ে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে এবং গ্রহণযোগ্য হয়নি। আমরা বলেছি, শেখ হাসিনার সরকারের পারিবারিক কর্মকান্ড দায় তার। শেখ হাসিনা সরকারের ভুলত্রম্নটির দায় বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপানোর যুক্তিকতা নেই। তাই আমরা মনে করি, উপদেষ্টা পরিষদের বক্তব্য সংশোধন করা উচিত। এর আগে গত ৫ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ পাঁচটি দল ও তিনটি জোটের সঙ্গে সংলাপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ওই সংলাপে সংস্কার ও নির্বাচনকে প্রাধান্য দেয় দেশের অন্যতম প্রধান দল বিএনপি ও রাজনৈতিক অন্য দলগুলো। ওই সময় বিএনপি দ্রম্নত নির্বাচনী রোডম্যাপ চেয়েছে। জামায়াতে ইসলামী সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে দুটি রোডম্যাপের দাবি করেছিল। সেই সংলাপে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নির্বাচনের প্রস্তুতি, নির্বাচন কমিশন গঠন ও সংস্কার একসঙ্গে এগিয়ে নেওয়া হবে, যাতে দ্রম্নত একটা নির্বাচন করা যায়।