বাজারে সবজির সঙ্গে চড়া মাছ-মাংসের দামও

প্রকাশ | ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে মাছ, মাংস ও সবজি। দুই-একটি ছাড়া সব সবজির কেজিই ৮০ থেকে ১০০ টাকা বা তারও বেশি। বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৪০০ টাকা। শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া ও তালতলা বাজার ঘুরে এমন তথ্যই মিলেছে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের দামেই বিক্রি হচ্ছে বেশির ভাগ সবজি। গ্রীষ্মকালীন সবজি কচুরমুখীর কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে করলার কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পটল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা ও বরবটি ১৪০ টাকা। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পেঁপের কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, ধুন্দুল ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা ১২০ টাকা, শসা ৮০ থেকে ১২০ টাকা ও কাঁচামরিচ ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে শীতকালীন সবজি শিমের কেজি ৪৮০ টাকা, ফুলকপি প্রতিটি ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ছোট আকারের বাঁধাকপি ৮০ টাকা, পাকা টমেটোর কেজি প্রকারভেদে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা ও মুলা ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা। ধনে পাতার কেজি ৬০০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৮০ টাকা, চালকুমড়া প্রতিটি ৮০ টাকা। বাজারে মিষ্টিকুমড়ার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ২৫ টাকা, লাউ শাক ৫০ টাকা, মুলা শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ২০ টাকা, পুঁই শাক ৪০ টাকা এবং ডাঁটা শাক ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাজারগুলোতে সপ্তাহ ব্যবধানে দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা, আদা ৩২০ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, নতুন আলু ১২০ টাকা, বগুড়ার আলু ১০০ টাকা ও পুরোনো আলু ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের মতো চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মুরগি। ব্রয়লার মুরগির কেজি ২০০ থেকে ২১০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ১০ টাকা বেড়ে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালি হাইব্রিডের কেজি ২৭০ টাকা, দেশি মুরগি ৫২০ টাকা, লেয়ার লাল মুরগি ৩৩০ টাকা ও সাদা লেয়ার ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়, হাঁসের ডিমের ডজন ২৩০ টাকা। আর দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা ও খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০ টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা। বাজারে চাষের শিংয়ের কেজি (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রুইয়ের দাম কেজিতে বেড়ে (আকারভেদে) ৩৮০ থেকে ৫০০ টাকা, দেশি মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা, মৃগেল ৩২০ থেকে ৪০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায়, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, পোয়া ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, মলা ৫৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ৩০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৫০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার ২০০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, আইড় ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে ৮০০ টাকা ও কাইক্ক্যা ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব বাজারে পাঁচ কেজি সয়াবিন তেল ৮১৮ টাকা, দেশি মসুর ডালের কেজি ১৪০ টাকা, মুগ ডাল ১৮০ টাকা, মিনিকেট চাল ৭৫ থেকে ৭৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চট্টগ্রামেও উত্তাপ কাঁচাবাজারে : এদিকে, আমাদের চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, চট্টগ্রাম নগরের কাঁচাবাজারে উত্তাপ গত সপ্তাহের মতোই বহাল আছে। ডিম, মাছ, মাংস সবকিছুর দাম আগের সপ্তাহের মতোই আছে। এছাড়া সবজির অতি চড়া দরে স্বস্তির বদলে কাঁচাবাজারে নাভিশ্বাস নগরবাসীর। ব্যবসায়ীদের দাবি, তাদের আড়ত থেকে বেশি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে, তাই বিক্রিও করছেন বেশি দামে। আর সম্প্রতি হওয়া বন্যার প্রভাবও পড়েছে সবজির দামের ওপর। শুক্রবার নগরের চৌমুহনী, রিয়াজউদ্দিন বাজার, অক্সিজেন, দুই নম্বর গেট, চকবাজার, কাজির দেউড়ি, আতুরার ডিপো, কর্ণফুলী কমপেস্নক্সসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মানভেদে বেগুন প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, করলা ১২০ টাকা, কাঁকরোল ১২০ টাকা, পটোল ১০০ টাকা, ঢঁ্যাড়স ১০০ টাকা, দেশি গাজর ১১০ টাকা, চায়না গাজর ১৬০ টাকা, বরবটি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, ফুলকপি মানভেদে ১৪০ থেকে ১৭০ টাকা, বাঁধাকপি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মূলা ৮০ থেকে ১০০ টাকা ও শিম ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর টমেটোর কেজি ১৬০ থেকে ২২০ টাকা। এর মধ্যে শিম, টমেটো, ফুলকপির দাম কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকার মতো কমেছে। বেগুনের দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ১০ টাকা। এছাড়া বাজারে কচুরমুখী ৮০ থেকে ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৮০ টাকা, আলু মানভেদে ৪৫ থেকে ৭০ টাকা, লাউ ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে মিষ্টিকুমড়া, লাউয়ের দাম বেড়েছে। কমেছে ধুন্দুলের দাম। শাকের মধ্যে লালশাকের আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পাটশাক ২০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, পুঁইশাকের বিচি ১২০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মূলাশাক ৪০ টাকা, ডাঁটাশাক ২০ টাকা, হলুদ ফুল ৪০ টাকা, কলার মোচা প্রতি পিস ৮০ টাকা, কচুশাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা ও পালংশাক ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি কচুর লতি প্রতি আঁটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং সরু লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শাকের দাম গত সপ্তাহের মতোই দেখা গেছে। বাজারে কম দামি মাছ হিসেবে পরিচিত পাঙাশ এবং তেলাপিয়াও বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। পাবদা মাছ আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৭০ থেকে ২২০ টাকা, রুই ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নারকেলি মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, লইট্ট্যা মাছ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। এছাড়া বাগদা চিংড়ি আকারভেদে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ছোট ১০০০, মাঝারি ১২০০ এবং বড় ১৫০০ টাকা। চাষের কই মাছ ২৮০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা, ইলিশ মাছ আকারভেদে ১৩০০ থেকে ১৮০০ টাকা, কাতাল মাছ ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, আইড় মাছ ৮০০ টাকা এবং শিং মাছ কেজিপ্রতি ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সামুদ্রিক মাছ হিসেবে পরিচিত রুপচাঁদা মাছ আকারভেদে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা, লাল কোরাল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং কোরাল ৫০০ টাকা কেজিপ্রতি বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে মাংসের দামও কিছুটা বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি প্রতি কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস হাড়ছাড়া ৯৫০ টাকা এবং হাড়সহ ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস ১০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মুদির দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম অপরিবর্তিত আছে। ডালের দাম বরং কেজি প্রতি অন্তত ৫ টাকা কমেছে। ছোট মসুরের ডাল ১৩৫ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ টাকা, চনার ডাল ১৪৫ টাকা, ছোলা ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চালের মধ্যে কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা দুই হাজার টাকা, বেতি আতপ ৩২০০ থেকে ৩২৫০ টাকা, হাফ সিদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৫৩ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৩৫ টাকা, খোলা চিনি ১৩০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১১৫ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া মুরগির ডিম ১৬৫ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। আর খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা। গত সপ্তাহের চেয়ে দাম অন্তত ৫ টাকা কমেছে। এ ছাড়া হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ডজন বিক্রি হয়েছে। পরিমল দাস নামে এক ক্রেতা বলেন, আমরা মধ্যম আয়ের মানুষ। বাজার করতে আসলে আমাদের অবস্থা বোঝা যায়। বাজারে ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। অতি চড়া দরে সবজি বিক্রি হচ্ছে। দাম কমার লক্ষ নেই, বরং বাড়ছে সবকিছু। খুচরা ব্যবসায়ী, আড়তদার, পাইকারি ব্যবসায়ী ও বেপারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রামে সবজি আসে বগুড়া, নরসিংদী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও যশোর থেকে। তবে সাম্প্রতিক দাবদাহ ও বন্যায় এসব এলাকায় মাঠেই নষ্ট হয়ে গেছে বেশ কিছু সবজি। সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন শত শত কৃষক। তাদের কোনো প্রণোদনা বা সহযোগিতার আওতায়ও আনা হয়নি। বেড়েছে ফসলের বীজ ও সারের দামও। তাই চট্টগ্রামে যা সবজি সরবরাহ হয় এখন সেটা অর্ধেকের কমে নেমে এসেছে। তাতেই চড়া বন্দরনগরীর সবজির বাজার। রিয়াজউদ্দিন বাজার আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক শিবলী জানান, সম্প্রতি বৃষ্টি এবং বন্যার কারণে প্রচুর ফসল নষ্ট হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রামে সবজির সরবরাহ কমেছে। আগে যেখানে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১৩ টন) সবজি আসত, সেখানে এখন সর্বোচ্চ ৫ ট্রাক আসে। আগামী দুই মাসের মধ্যে সবজি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তখন দাম কমতে পারে। মূলত সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণেই দাম বেশি।