বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যাশায় জীবন ও রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছে। আমরাও একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই। সমাজের সব স্তর থেকে বৈষম্য দূর করতে চাই। আর এ জন্য বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই।
শুক্রবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের রুকন সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন দল ও মত থাকতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আলস্নাহর দ্বীন কায়েমে সব ইসলামী দলকেও সব ভেদাভেদ ভুলে এক হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ইসলাম বিদ্বেষীরা যদি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এক বাক্যে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যারা করে তারা কেন এক হতে পারবে না। এর একটিমাত্র কারণ, সেটি হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষীরা আমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করতে ও ঐক্যবদ্ধ হতে বাধা সৃষ্টি করছে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, কারো ওপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ নয়। এটি ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচার উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ইসলামী রাষ্ট্র একটি আধুনিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র। যেখানে মানুষ হিসেবে সবাই দেশের নাগরিক এবং সবার অধিকার সমান। কোনো বৈষম্যের সুযোগ ইসলামী রাষ্ট্রে নাই।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের তৈরি করা সিন্ডিকেট অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার এখনো ভাঙতে পারেনি। ফলে জনমনে ভয় ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বাজারে বিশৃঙ্খলার সিন্ডিকেটই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় সব প্রতিষ্ঠানে এবং প্রশাসনের স্তরে স্তরে চলছে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের সিন্ডিকেট। তারা ছাত্র-জনতার বিপস্নব মেনে নিতে পারছে না। তারা চাচ্ছে আবারও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দোসররা কতটা বোকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানে দলের সভানেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, দল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, দলের অস্তিত্বই নেই- সেখানে কেন তারা দিবাস্বপ্ন দেখে তারা নিজেরাও বলতে পারবে না। জনগণ চেয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আর সে করছে দেশ ত্যাগ।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষিত বেকার শব্দটি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে ফেলা হবে। আগামীতে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হবে। জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনা দায়িত্ব পেলে শিক্ষা জীবন শেষে শুধু সনদ নয় শিক্ষিত যুবকদের কাজ দেওয়া হবে। কোনো শিক্ষিত যুবক চাকরির জন্য আন্দোলন করতে হবে না। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল কাজই হচ্ছে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বাধীনতার পক্ষের একক শক্তি দাবি করে, অথচ তারাই মানুষের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিয়েছে। শেখ মুজিবুর রহমান কখনো স্বাধীন বাংলাদেশ চায়নি! তিনি চেয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে। ৭ মার্চের ভাষণে তার ৪টি প্রধান দাবির প্রথম দাবিই ছিল তার নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইট চালিয়ে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর গুলি চালানোর ফলে বাঙালি স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৯ মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। আর শেখ হাসিনা কথায় কথায় বলতেন, এ দেশ আমার দেশ, আমার বাবার দেশ, আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছে। তাহলে নিজের দেশ, বাবার দেশ ছেড়ে শেখ হাসিনা কেন পালিয়েছে প্রশ্ন রেখে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, কারণ পিতার মতোই কন্যাও বাংলাদেশের জনগণের ওপর সীমাহীন জুলুম-নির্যাতন করেছে। হাসিনা এত বেশি অপকর্ম করেছে ক্ষমতা ছেড়ে এক মিনিটও দেশে থাকার সাহস রাখেনি। তবে পালিয়ে গেলেও রক্ষা হবে না, সব অন্যায়ের বিচার বাংলার মাটিতে হবে। বিচার সবেমাত্র শুরু হয়েছে, বিচার শেষও হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
ডা. সৈয়দ আব্দুলস্নাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ফ্যাসিবাদের আর কোনো জায়গা বাংলাদেশে হবে না। এ দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার অধিকার রাখে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফ্যাসিবাদ কী গণতান্ত্রিক শক্তি? স্বৈরাচার ও খুনি সরকার কী গণতান্ত্রিক শক্তি? ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যারা মানুষ হত্যা করে লাশের ওপরে নৃত্য করেছে তা কী গণতান্ত্রিক আচরণ? সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো যারা মানুষ হত্যা করেছে দ্রম্নততার সঙ্গে তাদের বিচারের আওতায় আনা।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ছিল আলেমদের হত্যা করে বাংলাদেশ থেকে ইসলামকে চিরতরে নির্মূল করা। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামীর আলেমদের হত্যা, জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি দিয়ে হত্যা করাসহ অসংখ্য আলেম-ওলামা ও সাধারণ জনগণকে হত্যা করেছে।
অনুষ্ঠানে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, ইসলাম মানুষের মুক্তির সনদ। ইসলাম ব্যতীত মানুষের সঠিক কোনো পথ নেই। ইসলাম থেকে সমাজ বিচ্ছিন্ন হলেই সমাজে নানা রকম বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। অশান্তি তৈরি হয়। মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। যা বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দ্বারা সমাজে বিদ্যমান ছিল। আওয়ামী লীগের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য জনগণের মাঝে ইসলামের সৌন্দর্য, ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সুফল তুলে ধরে ধর্ম-বর্ণ, জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষে নাগরিক হিসেবে প্রত্যেককে ইসলামের পতাকা তলে নিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় রুকন সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে মাওলানা এটিএম মাসুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাইফুল ইসলাম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।
সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ ইজ্জত উলস্নাহ, আব্দুর রব, মোবারক হোসেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য যথাক্রমে অ্যাডভোকেট জসিম উদ্দিন সরকার, অ্যাডভোকেট মশিউল আলম, মনজুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, আব্দুর রহমান মুসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো. দেলোয়ার হোসেন, মু. কামাল হোসাইন ও ড. মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য মোহাম্মদ ফরিদ হোসাইন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খান, ইঞ্জিনিয়ার শেখ আল আমিন, মো. শামসুর রহমান, অ্যাডভোকেট এস. এম. কামাল উদ্দিন, ড. মোবারক হোসেন, মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা ফরিদুল ইসলাম, অধ্যাপক নুরনবী মানিক, আবদুস সালাম, মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, সৈয়দ জয়নুল আবেদীন, শেখ শরীফ উদ্দিন আহমদ, আবু ওয়াফী, আমিনুর রহমান, আবদুর রহমান, কামরুল আহসান হাসান, সৈয়দ সিরাজুল হক, মো. শহিদুল ইসলামসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর নেতারা।