আড়তে ডিম বিক্রি শুরু হলেও কমেনি দাম
প্রকাশ | ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
দু'দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার আড়তগুলোতে ডিম বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে আড়ত ও পাইকারি পর্যায়ে কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি হয়নি। ফলে খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি হয়েছে আগের চড়া দামেই। এদিনও রাজধানীর বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৭৫-১৮০ টাকা দরে। অর্থাৎ প্রতি ডজনে ভোক্তাকে প্রায় ৪০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে।
এর আগে গত মাসে ডিমের উৎপাদক পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রয় মূল্য দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে নির্ধারিত দাম কার্যকরে বাজার মনিটরিং জোরদার করা হয়। এতে গত সোম ও মঙ্গলবার দুদিন ডিম বিক্রি বন্ধ রাখে ব্যবসায়ীরা। ফলে বাজারে ডিমের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি তৈরি হয় তীব্র সংকট।
অবশেষে সরকার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের আলোচনার পর বুধবার থেকে আড়তে বেচাকেনা পুনরায় শুরু হয়। কিন্তু বেশিরভাগ আড়তেই নির্ধারিত দাম থেকে বেশি দামে ডিম বিক্রি হয়েছে। এছাড়া অনেক আড়ত ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তৃতীয় দিনের মতো ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।
যদিও মঙ্গলবার ডিম উৎপাদক ও ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনা শেষে বুধবার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রির কথা জানিয়েছিলেন
ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের পরিচালক। সে হিসাবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হওয়ার কথা ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা দরে। কিন্তু বাজারে ভোক্তাকে হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ২
ডজনে আরও ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হয়েছে।
এদিকে ডিমের মতো অতি জরুরি এমন একটি খাদ্যপণ্যে এমন অস্বাভাবিক দামে ক্ষোভ জানিয়েছে সাধারণ ক্রেতারা। পাড়া-মহলস্নায় বেশি দাম দেখে বড় বাজারে নির্ধারিত দামে ডিম কিনতে এসে ফিরে গেছেন অনেক ক্রেতাই। তারা বলেন, এক ডজন ডিম প্রায় ১ হালি ডিমের সমান বাড়তি দাম দিতে হয়। তাই না কিনেই চলে যাচ্ছি।
ব্যবসায়ীদের আশ্বাস সত্ত্বেও বুধবার বেশিরভাগ আড়ত ও পাইকার বিক্রি বন্ধ রেখেছেন। রাজধানীর কাপ্তান বাজার, মিরপুর-১, কল্যাণপুর পাইকারি বাজার ও মোহাম্মাদপুরের কৃষি মার্কেটের মতো বড় বাজারগুলোতে অধিকাংশ আড়তই বন্ধ ছিল। তবে তেজগাঁও ডিমের বাজারে বেচাকেনা হলেও ছিল স্বাভাবিকের থেকে কম।
যদিও ভোক্তা অধিদপ্তরের বৈঠকে দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিম উৎপাদক কাজী ফার্ম, ডায়মন্ড, প্যারাগনের মতো কোম্পানির প্রতিনিধিরা ছিলেন। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উলস্নাহ, সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া, সহসভাপতি হারুনুর রশিদসহ আরও অনেকেই বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে সরকার নির্ধারিত দামে ডিম কেনাবেচার জন্য সব পক্ষ রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উলস্নাহ। তবে বৈঠকে ডিমের ৮০ শতাংশের উৎপাদক খামারিদের পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলেন না বলে জানা গেছে। তারা জানান কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।
এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর কাপ্তান বাজারের আড়তগুলো সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি শুরু হবে বলে জানিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছে এই বাজারের সব পর্যায়ের ডিমের উৎপাদক ও সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে পাইকারি পর্যায়ের উৎপাদক হতে সরাসরি ডিলারদের কাছে নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রয় কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন সংস্থাটির মহাপরিচালক আলিম আক্তার খান। সে হিসাবে প্রতি ডিমের দাম পড়বে উৎপাদক পর্যায়ে ১০.৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১.০১ ও খুচরায়, ১১.৮৭ টাকা।
এদিকে ডিমের বাজারে অস্থিরতা দূর করতে দীর্ঘদিন ধরেই নানা উদ্যোগ নিতে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের। কিন্তু বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানো যায়নি। এরই অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারও আপৎকালীন পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে এবং ডিমের দামও নির্ধারণ করে বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। এছাড়াও বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার আমদানীকৃত ডিমের শুল্ক ৩৩ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্তের কথাও জানিয়েছে। অর্থাৎ ডিম আমদানিতে ২০ শতাংশ শুল্কছাড় সুবিধা পাবেন আমদানিকারকরা।
কিন্তু কয়েক স্তরের সিন্ডিকেটের কারণে কোনো উদ্যোগের সুফল মিলছে আসে না বলে জানিয়েছে খামারিসহ সংশ্লিষ্টরা। এ খাতে বিভিন্ন পর্যায়ের উৎপাদক ও উদ্যোক্তাদের মতে ডিমের দুই ধরনের উৎপাদন ব্যয় বাজারে স্থায়ী সংকট তৈরি করেছে, যা পুঁজি করে আড়তদার থেকে মজুতদার ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ী সবাই হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হওলাদার বলেন, দেশে উৎপাদিত ৪.৫০ কোটি ডিমের ৮০ শতাংশের উৎপাদন ব্যয় প্রতি ডিমে ১০.১৯ টাকা আর ২০ শতাংশের উৎপাদন ব্যয় ৮.৪০ পয়সা, যা বাজারে বর্তমান সংকটের মূলে রয়েছে।
দেখা গেছে ৮০ শতাংশ ডিমের উৎপাদক সাধারণ খামারি অধিকাংশ সময়ে ১০-২০ পয়সা মুনাফা করে আর ২০ শতাংশ ডিমের উৎপাদক বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান মুনাফা করে প্রায় ২ টাকা। এমনকি ১৩০ টাকায় ডিমের ডজন বিক্রি হলেও তাদের ব্যবসা থাকে। কিন্তু খামারিরা লোকসানে পড়ে।
সুমন হাওলাদের অভিযোগ এই করপোরেট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কারসাজি করে বাজার অস্থিশীল করা হয়। তাই সরকারে কাছে প্রত্যাশা, তারা যেন সংকটের মূল সংস্কারের উদ্যোগ নেন। তারা যদি পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার অভিন্ন দাম নির্ধারণ করে দেয় তাহলেই বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে। অর্থাৎ দু-পক্ষেরই উৎপাদন ব্যয় প্রায় কাছাকাছি চলে আসবে। এতে সিন্ডিকেটের আর কিছু করার থাকবে না বলেও মনে করেন তিনি।
\হ