রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সংলাপে সংস্কার নিয়ে যেসব কথা বলা হয়েছিল, সেভাবে চলছে না বলে আক্ষেপ করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সংস্কার নিয়ে যে আলোচনা, আর যেসব পদক্ষেপ, তার পুরো বিষয়টা শেষ পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত হয়ে যায় কি না, তা নিয়েও শঙ্কায় আছেন তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই শঙ্কার কথা বলেন। গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক নাগরিক ঐক্যেরও সভাপতি।
অন্তর্র্বর্তী সরকারের সংস্কারের আলোচনা এবং তাদের সঙ্গে দুই দফায় সংলাপের বিষয়ে তিনি বলেন, 'সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পর্কে এই পর্যন্ত যেটাই হয়েছে সেটার মধ্যে যে খুব সঙ্গতি দেখতে পারছি সেটাও নয়। সর্বশেষ যখন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, আমরা কথা বলেছিলাম, তখন আমাদের প্রস্তাব ছিল, ওরাও (সরকার) এগ্রি করেছিলেন যে, নিজেদের মতো করে
একটা প্রস্তাব দেবে, তা না। এটাও সবার সঙ্গে কথা বলেই তাদের প্রস্তাবনাটা তৈরি হবে।
মান্না বলেন, 'এখন মনে হচ্ছে তা হচ্ছে না। তারা তাদের মতো করেই করছেন। তার মানে আমাদের সঙ্গে তো প্রথম থেকেই শুরু করতে হবে, সময় আরও বেশি লাগতে পারে।'
পুরো বিষয়টায় বিপদও দেখতে পাচ্ছেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা। তিনি বলেন, 'আমাদের সামনে আরও বড় বিষয় আছে সংস্কার নিয়ে। আমরা জানি, দেয়ার উইল বি ডায়োগনালি অপজিট ভিউস। এগুলোকে একসঙ্গে মিলিয়ে একটা ঐকমত্যের জায়গায় নিয়ে যাওয়ার জন্যে যে বিচক্ষণতা, যে জ্ঞান, যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার, যদি কোনো সময় সরকার বলে এগুলো রাখতে পারছি না, তাহলে পুরো বিষয়টাই শেষ পর্যন্ত বিপদগ্রস্ত হতে পারে।'
সংবিধান নিয়ে যেসব আলোচনা শুরু হয়েছে, তা নিয়েও সংকটের আশঙ্কা করছেন মান্না। তিনি বলেন, 'কনস্টিটিউশনের একেবারে বেসিক নিয়ে অনেক কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এটাকে খুবই যোগ্যতার সঙ্গে সমাধানের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে সরকার যদি এখন থেকে যথাযথ যত্নবান না হয়, তাহলে সংকট বড় হতে পারে। আমরা ভয় করছি তা না। আমরা মনে করি, এই সমস্যাও পার হওয়া সম্ভব।'
এসব উদ্যোগ 'ভুল হাতে' পড়লে 'ভুলভাবে' এটাকে ব্যবহার করার চেষ্টা করা হলে 'ক্ষতির কারণ'ও হতে পারে বলে সতর্ক করেন নাগরিক ঐক্যের নেতা। তিনি বলেন, 'আমরা আবেদন করব বর্তমান সরকারের কাছে, স্টেকহোল্ডার যারা আছেন তাদের কাছে, সচেতন মানুষের কাছে, আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে আমাদের এই বিষয়ের বিশাল অভু্যত্থানের বিজয়কে আরও বৃহত্তর বিজয়ের দরজাতেই নিয়ে যেতে হবে। এখানে ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই, হওয়ারও কোনো কারণ নেই যদি যোগ্যতা ও আন্তরিকতার সঙ্গে এই কাজটা করতে পারি।'
আমলাতন্ত্র নিয়ে ক্ষোভ
আমলাতন্ত্রে এখনও বিগত সরকারের লোকজন বসে আছে মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন মান্না। বলেন, 'দুই মাস-আড়াই মাস পরেও যদি আমরা বলি যে, ১৫ বছর ধরে তারা (আওয়ামী লীগ) এমনভাবে সাজিয়েছে যে নাকি তাকে বসাতে পারি না এটা ইতিহাস গ্রহণ করবে না। 'ছয় মাস পরে বলবেন যে, আমরা কিছুই করতে পারি নাই আর ছয় মাস পর্যন্ত তারা যা করার করবে। হাইকোর্টের মতো জায়গায় মিছিল করবে এটা দেখার জন্যে মানুষ রেডি নাই।'
বিগত সরকার ১৫ বছর অত্যাচার করেছে অভিযোগ এনে তিনি বলেন, 'মানুষ তাদের ওপর বিষিয়ে আছে। আমরা কোনো দলের প্রতি কোনো 'জাত শত্রম্নতা' করি না, কোনো দলকে বাদ দিয়েই করতে হবে সে রকমও বলি না। যখনই সরকার বলেন যে, 'অন্তর্ভুক্তিমূলক ইনক্লুসিভ সরকার করতে চাই, গণতন্ত্র যে নির্মাণ করবে সেটাও অন্তর্ভুক্তিমূলক করব', আমরা সেটাও গ্রহণ করতে রাজি আছি।'
আওয়ামী লীগ নানাভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে সরকারকে কঠোর হওয়ার পরামর্শও দেন মান্না। তিনি বলেন, 'কেউ সন্ত্রাসী' অ্যাকটিভিটি করবে সরকারকে ফেলে দেওয়ার জন্যে, গণতন্ত্রের পথ ব্যাহত করবার জন্যে, সেটার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না, তার মানে প্রশাসন হাতে নেই, পুলিশ হাতে নেই, কিছু করতে পারবে না, এই ব্যর্থতার দায় ইতিহাস তাদেরকেই দেবে। কারণ, তারা ক্ষমতায় আছে এটা তাদের বুঝে নেওয়া উচিত।'
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ দাবি
নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি নিয়ে কথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের সাবেক সমন্বয়কারী ও বাংলাদেশের বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।
তিনি বলেন, 'সরকার সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি এবং কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিতে পারেনি। সরকারকে অবিলম্বে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এটা জনগণের প্রত্যাশা।'
'আওয়ামী সিন্ডিকেট' বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে দাবি করে তিনি বলেন, 'স্বৈরাচারের পতন হলেও বাজার সিন্ডিকেটের পতন হয়নি। সিন্ডিকেটে দোসরদের দখলেই বাজার।'
ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা বাচ্চু ভুঁইয়া, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুলস্নাহ কায়সারও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।