বিনা প্রয়োজনে কেনাকাটা করে রাষ্ট্রের ১৫ কোটি টাকার বেশি অপচয়ের দায়ে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্র ও ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোস্তাক আহমেদক গ্রেপ্তার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুই জনকেই আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালত তাদের কারাগারে পাঠিয়েছেন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক শুধাংশু শেখর ভদ্রকে (৬৪) এবং ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোস্তাক আহমেদকে (৪৭) বুধবার দুপুরে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক নাজির আকন্দ।
বুধবার বিকাল সোয়া ৪টায় দুদক কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন সংস্থাটির মুখপাত্র দুর্নীতি প্রতিরোধ বিভাগের মহাপরিচালক মো. আকতার হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধানে বিনা প্রয়োজনে কেনাকাটা করে রাষ্ট্রের ১৫ কোটি ১১ লাখ টাকা অপচয় করার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। অনুসন্ধানের সূত্রধরে চলতি বছরের ২০ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলা দায়ের করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ। মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা পলাতক ছিলেন।
প্রাপ্ত মামলার নথিপত্র মোতাবেক, শুধাংশু শেখর ভদ্রের পিতার নাম অধর
চন্দ্র ভদ্র (মৃত)। তিনি ঢাকার রমনা থানাধীন ২৭ নম্বর বেইলি রোডে বসবাস করতেন। বাড়ি গোপালগঞ্জ সদর থানাধীন বেতিলতা এলাকার পদ্মবিলা গ্রামে। আর মোস্তাকের পিতার নাম শফিক আহমেদ। বাড়ি লক্ষ্ণীপুর জেলা সদরের বিরাজিমপুর গ্রামে।
কেনাকাটার নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় ও টাকা হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি ডাক বিভাগে 'পোস্ট-ই সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি' নামে একটি প্রকল্প চালু করেন। তিনি ডাক বিভাগের প্রধান থাকার পাশাপাশি প্রকল্পের পরিচালকও ছিলেন। আর সাবেক ডেপুটি পোস্ট মাস্টার জেনারেল মোস্তাক আহমেদ করেছিলেন প্রকল্পের সহকারী পরিচালক।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গের মাধ্যমে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ থাকা ১৫ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকার ৫০০টি এইচপি সার্ভার ও ইউপিএস ক্রয় করেন। অথচ এসব সরঞ্জাম কেনার কোনো প্রয়োজনীয়তাই ছিল না। বিনা কারণে এসব কেনা হয়েছে। এমনকি কেনার পর তা কোনো কালেই ব্যবহৃত হয়নি। মূলত সরকারি অর্থ নয় ছয় করতেই এসব কেনাকাটা করা হয়েছে বলে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগ থেকে আরও জানা গেছে, সরঞ্জাম কেনার জন্য সরকারি মালিকানাধীন টেলিফোন শিল্প সংস্থার (টেশিস) সঙ্গে চুক্তি করা হয়। পরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডাকঘরগুলোতে তা বিতরণ করা হয়। এ ঘটনা তদন্তের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ থেকে অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো. মুহিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়। ওই তদন্তেও কেনাকাটা করে রাষ্ট্রের অর্থ অপচয় করার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
অভিযোগ মোতাবেক, প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুন মাসে শেষ হয়। কিন্তু সরবরাহ চালানে কোনো কোনো মালামাল প্রকল্প সমাপ্তির নির্ধারিত সময়সীমার প্রায় দুই বছর পর সরবরাহ করা হয়েছে। কাগজে কলমে অনেক সরঞ্জাম সরবরাহ করা হলেও পরবর্তীতে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে ওইসব সরঞ্জাম টঙ্গীর টেশিসের ও গাজীপুরের কার্যালয়ে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। প্রকল্পের অধীনে সংগ্রহ করা এসব যন্ত্র কোনোটিই ব্যবহারের প্রমাণ মেলেনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মেশিন ও যন্ত্রাংশ প্যাকেটজাত অবস্থায় পড়ে থাকার প্রমাণ মিলেছে। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ থেকে কেনা সরঞ্জাম কি কাজে ব্যবহৃত হবে, সে সংক্রান্তও কোনো নির্দেশনাও আঞ্চলিক অফিসগুলোকে দেওয়া হয়নি। ফলে বিপুল টাকায় কেনা সরঞ্জাম কোনো কাজেই আসেনি। শুধুমাত্র রাষ্ট্রের টাকার শ্রাদ্ধ হয়েছে।