বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ২ কার্তিক ১৪৩১
পরিপত্র জারি

৭ মাচর্, ১৫ আগস্টসহ আট জাতীয় দিবস বাতিল

বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক মনে করেনা এই সরকার :নাহিদ
যাযাদি রিপোর্ট
  ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম -সংগৃহীত

ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসসহ আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করেছে সরকার। অন্তর্র্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের ওই সিদ্ধান্ত বুধবার পরিপত্র জারি করে কার্যকর করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর ফলে বছরের ওইসব দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো কর্মসূচি আর থাকবে না।

এর আগে উপদেষ্টা পরিষদ এসব দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক ফেসবুক পোস্টে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, 'উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রতি এক বৈঠকে আটটি দিবস বাতিলের ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।'

এই আট দিবসের মধ্যে পাঁচটিই ক্ষমতাচু্যত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যদের জন্ম ও মৃতু্য সংক্রান্ত।

এর মধ্যে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মবার্ষিকী, ৮ আগস্ট শেখ হাসিনার মা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর মৃতু্যবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস, ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছিল।

এ ছাড়া বাতিলের তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ৪ নভেম্বর জাতীয় সংবিধান দিবস, ১২ ডিসেম্বর স্মার্ট বাংলাদেশ দিবস।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর জন্ম ও মৃতু্যর দিন ১৭ মার্চ ও ১৫ আগস্ট ছিল সাধারণ ছুটি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করেছিল। তবে দিবস বাতিলের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত সে সময় জানানো হয়নি।

এদিকে, আওয়ামী লীগের দলীয় দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এসব দিবস বাদ দেওয়া হবে জানিয়ে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান অবশ্যই জাতির জনক না। বুধবার সচিবালয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

নাহিদ ইসলাম বলেন, 'আওয়ামী লীগ দল হিসেবে ফ্যাসিস্টভাবে ক্ষমতায় ছিল। মানুষের ভোটাধিকার হরণ ও গুম-খুন করে এবং গণহত্যা করে তারা ক্ষমতায় ছিল। কাজেই তারা কাকে জাতির পিতা বলল, তারা কোন দিবসকে জাতীয় দিবস ঘোষণা করল, নতুন বাংলাদেশে সেটার ধারাবাহিকতা থাকবে না।'

গণ-অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্র্বর্তী প্রশাসন বাংলাদেশকে 'নতুনভাবে গড়তে যাচ্ছে' মন্তব্য করে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব থেকে সরকারের দায়িত্বে আসা নাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, 'ইতিহাসের প্রতি আমাদের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে হবে।'

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এক ফেসবুক পোস্টে এদিন সকালে আটটি জাতীয় দিবস বাতিলের সিদ্ধান্ত জানানো হয়, যার মধ্যে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসও রয়েছে।

সাংবাদিকরা দুপুরে ওই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, 'আপনারা যদি আওয়ামী লীগের করা সবকিছু মনে করেন জাতীয়...। ভোটবিহীন সরকারেরই কোনো বৈধতা নেই। সেই সময় অনেক কিছু করা হয়েছে। সবগুলোকে পুনর্গঠন ও পুনর্মূল্যায়ন করা হবে।'

একজন সাংবাদিক এ সময় বলেন, সব দেশেরই জাতির পিতা থাকে। বর্তমান সরকার কি তাহলে বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদশেরও জাতির পিতা হিসেবে মানে না?

জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, 'অবশ্যই না।'

তাহলে বাংলাদেশে কোনো জাতির পিতা থাকবে না?- এমন প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, 'আমাদের এই ভূখন্ডের লড়াইয়ের ইতিহাসে বহু মানুষের

অবদান রয়েছে। আমাদের ইতিহাস কিন্তু কেবল ৫২-তেই শুরু হয়নি, আমাদের ব্রিটিশবিরোধী লড়াই আছে, ৪৭ ও ৭১-এর লড়াই আছে, ৯০ ও ২৪ আছে। আমাদের অনেক ফাউন্ডিং ফাদারস রয়েছে। তাদের লড়াইয়ের ফলে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি।'

বিগত আওয়ামী লীগ

সরকারের সময় ২০১১ সালের জুনে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে 'জাতির পিতা' হিসেবে বর্ণনা করে তার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনের বিধান করা হয়।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ, ২৬ মার্চ তার দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা এবং ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও সে সময় সংবিধানে যুক্ত করা হয়।

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ভার নেয়।

সরকারের উপদেষ্টারা বলছেন, অভু্যত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্র-জনতার প্রত্যাশা অনুযায়ী, আগে রাষ্ট্রের সংস্কার করে এরপর নির্বাচন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

সংস্কারের জন্য ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি কমিশন সংবিধান সংস্কারের জন্য কাজ করছে। এ বিষয়ে মতামত নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপও করছেন প্রধান উপদেষ্টা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে