তিন জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল ১০ জনের

প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া সিএনজি
ফরিদপুর, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ফরিদপুরে ৫, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও হাটহাজারীতে ৪ এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একজন নিহত হন। ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশির ভাগই ইটভাটার শ্রমিক। আর মিরসরাইয়ে নিহতরা একই পরিবারের। মঙ্গলবার ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এসব দুর্ঘটনা ঘটে। ফরিদপুরে দুই বাসের সংঘর্ষে নিহত ৫ : ফরিদপুর প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩০ জন। মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে ফরিদপুর সদরের কানাইপুরের মলিস্নকপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ফরিদপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, 'ঢাকার আব্দুলস্নাপুর থেকে ঝিনাইদহগামী গ্রিন এক্সপ্রেস নামে একটি বাসের সঙ্গে বিপরীত দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে ছেড়ে আসা খাগড়াছড়ি পরিবহণের বাসের মুখোমুখি এ সংঘর্ষ হয়। নিহতদের সবাই খাগড়াছড়ি পরিবহণের যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগরের সাফায়াত গাজীর ছেলে আবু বক্কর গাজী (৫৫), বাবু মোড়লের ছেলে ঈসা মোড়ল (৪০)।' নিহত অন্য তিনজনের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে বলে জানান করিমপুর হাইওয়ে থানার ওসি সালাহউদ্দিন চৌধুরী। খবর পেয়ে দুর্ঘটনায় ৩০ জনকে উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- সাতক্ষীরার শ্যামনগরের আলীম গাজী (৩৭), আলাউদ্দিন (২৭), ফিরোজ (৩৩), মারুফ হোসেন (৩৫), আব্দুর রহিম (১৯), খোকন (১৫), শাহীন (১৬), শফিকুল (৩৪), আমজাদ হোসেন (৩৫), মীম (১৮), সাতক্ষীরার আবু দাউদ (৩৫), নূর আলম (২৭), নূর ইসলাম (৩০), নাজমুল (২৭), নাসিমা (২৭), খাদিজা (৪০), মিজানুর (৩০), পলাশ (২৭), তুলি (২৮), কাশেম (৩৫), আজাদ (২৭), সোহেল (২২), রবিউল (৩০), জসিম (৪০), নাইমুল (২৪), মো. মাইনুদ্দিন (২৫), পিঞ্জিরা (১৫), মাহবুব (৪৭), রেজাউল (৪০) ও জাহিদ (৩৫)। দুর্ঘটনায় হতাহতদের বেশির ভাগই ইটভাটার শ্রমিক। ছুটি শেষে কর্মক্ষেত্র ঢাকার সাভারে ফেরার পথে এ দুর্ঘটনার শিকার হন তারা। ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নূর আলম গাজী নামের এক শ্রমিক জানান, তার বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভেটখালী ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী গ্রামে। তারা সবাই সাভারের আমতলী এলাকার একটি ইটভাটার শ্রমিক। ছুটি শেষে ৩২ হাজার টাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস রিজার্ভ করে কর্মস্থলে ফিরছিলেন। পথেই এ দুর্ঘটনা ঘটে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রানা মালি নামের এক শ্রমিক বলেন, দুর্ঘটনার সময় শ্রমিকদের সবাই ঘুমাচ্ছিলেন। কীভাবে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা কারও জানা নেই। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আব্দুল জলিল বলেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি গাড়ি দুটি অধিক গতিতে ছিল, চালকদের চোখেও \হছিল ঘুম, আর এ কারণেই হয়তো নিজস্ব লেন চেঞ্জ হয়ে যাওয়ায় মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।' জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোলস্না জানিয়েছেন, নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা, আহতদের ১০ হাজার করে টাকা প্রদান করা হবে। এছাড়াও কেন বারবার একই জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটে তা খতিয়ে দেখতে তদন্ত টিম গঠন করা হবে, বলছেন জেলা প্রশাসক। মিরসরাইয়ে ট্রাকের ধাক্কায় নিহত একই পরিবারের তিনজন মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাইয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামানোর সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে পেছন থেকে আসা ভুট্টাবোঝাই ট্রাক ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে একই পরিবারের ৩ জন নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে মহাসড়কের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া খৈয়াছড়া ঝরনা রাস্তার মুখে ঢাকামুখী লেনে এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- সীতাকুন্ড উপজেলার দক্ষিণ বগাচতর এলাকার ফতেহ আলী ভূঁইয়া বাড়ি প্রকাশ জামাল মেস্ত্রী বাড়ির আবুল কালামের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৫৫), তাদের মেয়ে কাজল রেখা (২৫) ও কাজলের শিশুসন্তান মোহাম্মদ আনাস (৭ মাস)। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন কাজল রেখার স্বামী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সায়েম (২৯), কাজল রেখার বোন শিরিনা আক্তার (২০) ও নিজাম উদ্দিন (৩০)। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিরিনা আক্তারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা গেছে, সীতাকুন্ড উপজেলার দক্ষিণ বগাচতর এলাকা থেকে নুরজাহান বেগম একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে মিরসরাই উপজেলার পূর্ব খৈয়াছড়া এলাকায় তার বোনের বাড়িতে সবাই মিলে দাওয়াতে যাচ্ছিলেন। এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের খৈয়াছড়া ঝরনা সড়কের মুখে সিএনজি অটোরিকশাটি যাত্রী নামানোর জন্য দাঁড়ালে পেছন দিকে থেকে আসা ভুট্টাবোঝাই দ্রম্নতগামী একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এতে সিএনজি অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে এক শিশু, দুই নারীসহ তিনজন মারা যান। আহত আরও তিনজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা ইমাম হোসেন পাটোয়ারী বলেন, মঙ্গলবার দুপুরে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রম্নত ঘটনাস্থলে গিয়ে আটকেপড়া সিএনজি অটোরিকশা যাত্রীদের উদ্ধার করেছি। এদের মধ্যে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। আহত হয়েছে আরও ৩ জন। জোরারগঞ্জ হাইওয়ে থানা পুলিশের ইনচার্জ সোহেল সরকার জানান, দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ নিহত ও ৩ জন আহত হয়েছে। নিহত ও আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি থানায় নেওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ করে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক নাসরিন নাহার মিতু জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নুরজাহান বেগম, কাজল রেখা, মোহাম্মদ আনাসের লাশ পুলিশ মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। মিরসরাই সেবা আধুনিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহমান ঈশান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম সায়েম, শিরিনা আক্তার ও নিজাম উদ্দিনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত শিরিনা আক্তারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হাটহাজারীতে বাস চাপায় মাদ্রাসাছাত্রের মৃতু্য রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মোহাম্মদ আজওয়াদ (১৩) নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষার্থীর মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের চারিয়া মাদ্রাসার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত আজওয়াদ হাটহাজারী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুহাম্মদ আলমগীরের ছেলে। দুর্ঘটনার পর চারিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মৃতু্যর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন। এতে আধাঘণ্টা চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করে। হাটহাজারী মডেল থানার ওসি হাবিবুর রহমান জানান, এ ঘটনায় বাসটি জব্দ করেছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে চালককে। গাজীপুরে মেয়েকে সড়ক পার করতে গিয়ে ঝরল বাবার প্রাণ গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার কালিয়াকৈরে মেয়েকে নিরাপদে সড়ক পারাপার করে দিতে পারলেও নিজে পার হতে পারেননি। ঘাতক বাসের চাপায় ঝরল বাবা শহিদুল ইসলামের প্রাণ। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরে উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত শহিদুল ইসলাম জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার গোপালপুর এলাকার জাফর হোসেনের ছেলে। নিহতের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শহিদুল ইসলাম গত ৮ মাস আগে জীবিকার তাগিদে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থেকে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আসেন। এরপর তিনি উপজেলার সূত্রাপুর এলাকায় আনসার আলীর বাসা ভাড়া নিয়ে তার স্ত্রী, চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি তার ভাড়া বাসার পাশেই ভাঙ্গাড়ি দোকান দিয়ে পুরনো টিন, লোহাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রের ব্যবসা করে আসছিলেন। ছোট মেয়ে মৌসুমী আক্তার স্থানীয় একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার সুবাদে প্রায় নিয়মিত ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক পারাপার করে দিতেন বাবা শহিদুল। প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার সকালেও তিনি ছোট মেয়েকে মহাসড়ক পারাপার করে দিয়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ফিরছিলেন। ফেরার পথে সকাল ৮টার দিকে উপজেলার সূত্রাপুর জিএমএক্স কারখানার সামনে পারাপার হওয়ার সময় কালিয়াকৈর থেকে ছেড়ে আসা একটি বাস তাকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই শহিদুল ইসলাম মারা যান। নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মৃতু্যর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।