কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ডিমের বাজার। সরকার নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি না করায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গঠিত 'বিশেষ টাস্কফোর্স' পরিচালিত অভিযান টিমের কাছে জরিমানা দিতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। এরপরও সরকারের নির্ধারণ করা দামে দেশের কোথাও ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। বিক্রেতারা বলছেন, 'সরকার নিজে এই দামে ডিম সরবরাহ করুক। আমরা সেখান থেকে কিনে তারপর বিক্রি করব। আমরা বেশি দামে ডিম কিনে কম দামে বিক্রি করতে পারব না। জরিমানার হয়রানিও সহ্য করতে পারব না।'
কয়েকদিন ধরে চরম অস্থির রাজধানীর ডিমের বাজারে মঙ্গলবারও প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা দরে। ডিমের হালি ছিল ৬৫ এবং ডজন ১৮০-১৮৫ টাকা। এই অবস্থা চলতে থাকলে ডিমের দাম আরও বাড়বে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। তাদের দাবি, কঠোরভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে, ভাঙতে হবে ডিম ব্যবসায়ীদের অনৈতিক সিন্ডিকেট।
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা। খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দামে ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম কিনতে খরচ করতে হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
এদিকে, ডিমের বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ও দাম স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সাময়িকভাবে সীমিত সময়ের জন্য সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এরপরও বাজারে ডিমের দামের কোনো প্রভাব পড়েনি।
তেজগাঁওয়ের আড়তে ডিম উধাও : এদিকে, রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আড়তে গত
রাতেও ডিমের ট্রাক আসেনি। টানা দুই রাত তেজগাঁওয়ে ডিমের সরবরাহ আসেনি। ফলে পার্শ্ববর্তী কারওয়ান বাজারের কোনো দোকানে মঙ্গলবার সকালে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হতে দেখা যায়নি। দেশি মুরগি ও হাঁসের ডিম পাওয়া যাচ্ছে, যদিও সরবরাহ কম।
রাজধানীর কৃষি মার্কেটের সব দোকানে ডিম পাওয়া যাচ্ছে না। তিনটি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কেবল একটি দোকানে ১৮০ টাকা ডজন দরে ডিম বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা জানান, কাপ্তান বাজার থেকে ডিম কেনা যায়নি; সে জন্য ভিন্ন ব্যবস্থায় ডিম সংগ্রহ করতে হয়েছে তাদের। অন্যান্য বাজারে ডিম আছে, যদিও সরবরাহ কম।
এদিকে ডিমের নির্ধারিত দর বাস্তবায়ন করতে বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সে কারণে তেজগাঁও আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। যেসব বাজারের ব্যবসায়ীরা তেজগাঁও আড়ত থেকে মূলত ডিম সংগ্রহ করেন সেইসব বাজারে ডিমের সংকট আছে।
অভিযানে ডিমের দাম তেমন একটা কমেনি বরং কিছু কিছু পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি বন্ধ অথবা কমিয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এতে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
রাজধানীর মোট তিনটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিম ডজনপ্রতি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাড়া-মহলস্নায় ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৯০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
কৃষি মার্কেটের ব্যবসায়ী আরশাদ হোসেন বলেন, 'গত দুই দিন দোকানে ডিম রাখা হয়নি। ডিম রাখলে ১৮০ টাকা ডজন দরে বিক্রি করতে হয়; তখন আবার ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করে।' সে জন্য ডিমের দাম না কমা পর্যন্ত তিনি ডিম বিক্রির সাহস করছেন না।
স্বল্প আয়ের মানুষের প্রাণিজ আমিষের বড় উৎস ডিমের দাম ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বাড়ছে। ধাপে ধাপে তা ডজনপ্রতি ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এখন সেই ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৮০ টাকায় উঠেছে। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত ৮ আগস্ট ডিমের দাম ছিল ডজনপ্রতি ১৫০ থেকে ১৬২ টাকা। এর আগে বছরজুড়ে ডিমের দাম ডজনপ্রতি ৮০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে থাকত।
ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য খামারিরা উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া এবং সরবরাহ-সংকটকে দায়ী করছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই দুটি সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। অন্তর্র্বর্তী সরকার ৮ অক্টোবর সাড়ে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে; কিন্তু উৎপাদন খরচ কমানোর দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। এ পরিস্থিতিতে ডিমের বাজারের অবস্থা জটিল আকার ধারণ করছে।
১৩০ টাকা ডজন বিক্রি করছে সরকার
এদিকে, বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, 'সরকারি উদ্যোগে সুলভমূল্যে ভোক্তারা এখন ১০টি কৃষিপণ্যও পাবেন। এতে জনগণের সুবিধা হবে। ভোক্তারা যাতে সুলভমূল্যে সবকিছু পান, এজন্য আমাদের এই প্রচেষ্টা।'
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় খাদ্য ভবনের সামনে কৃষি ওএমএস কর্মসূচির উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় ন্যায্যমূল্যে ডিম, আলু, পেঁয়াজ ও সবজি জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বাণিজ্যসচিব মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, কৃষিসচিব মোহাম্মদ এমদাদ উলস্নাহ মিয়ান, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম প্রমুখ।
এ কর্মসূচির আওতায় একজন গ্রাহক ৩০ টাকায় এক কেজি আলু, ১৩০ টাকায় এক ডজন ডিম, ৭০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ, ২০ টাকায় ১ কেজি কাঁচা পেঁপে ও পাঁচ কেজি বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাকসবজি প্যাকেজ আকারে কিনতে পারবেন।
কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে রাজধানীর ২০টি স্থানে ট্রাক সেলের (ট্রাকে করে বিক্রি) মাধ্যমে এসব কৃষিপণ্য বিতরণ করা হবে। স্থানগুলো হচ্ছে সচিবালয় এলাকার খাদ্যভবন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ, মিরপুর-১০, বাসাবো, বছিলা, রায়ের বাজার, রাজারবাগ, মুগদা উত্তর, মুগদা দক্ষিণ, পলাশী মোড়, হাজারীবাগ, মোহাম্মদপুর, গাবতলী, মহাখালী বাসস্ট্যান্ড, বেগুনবাড়ী, উত্তর খান, দক্ষিণ খান, কামরাঙ্গীরচর, রামপুরা ও জিগাতলা।
সিন্ডিকেটে জড়িতদের বিশেষ আইনে গ্রেপ্তার :আসিফ
এদিকে, হার্ডলাইনে না গেলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা অনেক কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সচিবালয়ের গণমাধ্যম কেন্দ্রে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএসআরএফ) মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীর বাইরে অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা সরাসরি কৃষক থেকে পণ্য কিনে সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করবেন, সরকার তাদের উৎসাহিত করবে।
আসিফ মাহমুদ বলেন, টিসিবির ডিলারশিপ যারা পেয়েছিলেন তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের। এ কারণে টিসিবির কার্যক্রম স্থবির। টিসিবিকে আবার সক্রিয় করার চেষ্টা চলছে।
মতবিনিময় সভার শুরুতে নিজের মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন উপদেষ্টা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ওই সময় টেলিভিশন চ্যানেলগুলো আন্দোলনের সঠিক চিত্র তুলে ধরেনি। পত্রিকাগুলো সহায়তা করেছে। গণমাধ্যম সংস্কার জরুরি বলে জানান তিনি। এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর-পর্ব। সাংবাদিকদের বেশিরভাগ প্রশ্নই ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার কী করছে- এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, বন্যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। জোগান ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য নেই। বাজারে সিন্ডিকেট আছে। এই সিন্ডিকেট ভাঙার কাজ চলছে। বিগত সরকার ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে দুর্বল করেছে। তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, এটা কার্যকর নয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার হার্ডলাইনে (কঠোর অবস্থান) যাবে। সরকারের কাছে তথ্য আছে, অনেক করপোরেট প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে সরকার তাদের গ্রেপ্তার করবে।
আরেক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, আগের সিন্ডিকেট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করত। সিন্ডিকেটের ভেতর ব্যবসায়ীরা বসেছিলেন। তারা এখনো রয়ে গেছেন। ব্যবসায়িক স্বার্থ বাঁচাতে কেউ কেউ রাজনীতিবিদদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে সিন্ডিকেট টিকিয়ে রেখেছেন। চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে সমস্যা হচ্ছে, একজন চাঁদাবাজকে গ্রেপ্তার করলে সে জায়গায় আরেকজন চলে আসেন। তারা গোড়াটা শনাক্তের চেষ্টা করছেন। এ কাজে রাজনৈতিক দলগুলোকে সহায়তা করতে হবে।
তালা ঝুলছে চট্টগ্রামের আড়তে
এদিকে, চট্টগ্রামে ডিমের সবচেয়ে বড় আড়ত নগরের পাহাড়তলী বাজারে গত সোমবার ছোট-বড় প্রায় ৩০টি ডিমের দোকানে সীমিত আকারে কেনাবেচা হলেও মঙ্গলবার একটি ছাড়া সব দোকানে তালা ঝুলতে দেখা যায়। সরকারি দামে ডিম কেনাবেচা করতে না পারায় আড়তগুলো বন্ধ রেখেছেন বলে আড়তদাররা জানান।
বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, গত শনিবার থেকে বড় আকারের ডিমের চালান আসা বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার বিকালে কিছু দোকান খুললেও প্রশাসন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করার পর সেগুলো আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়।
চট্টগ্রাম নগরে ডিমের পুরো সরবরাহ নির্ভর করে পাহাড়তলী বাজারের ওপর। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি ডিমের আড়ত ও পাইকারি দোকান রয়েছে এখানে। প্রতিদিন ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডিম বিক্রি হয় এই বাজারে। তবে গত শনিবার থেকে এই বাজারের প্রায় প্রতিটি আড়তে কেনাবেচা বন্ধ। দুই-একটি আড়ত খোলা থাকলেও বিক্রি নেই বললেই চলে। তবে সরকারি সংস্থা বলছে, রাতে দোকান খুলে বাড়তি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। যাকে 'লুকোচুরি' বলছে তারা।
চট্টগ্রামে ডিম সরবরাহ হয় মূলত টাঙ্গাইল, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, কুমিলস্না, নোয়াখালী, কাপাসিয়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে। এর মধ্যে পাহাড়তলী বাজারে বড় অংশ সরবরাহ হয় কুমিলস্না ও নোয়াখালী থেকে। একে 'লেয়ার বেল্ট' হিসেবে বলছেন আড়তদাররা। সম্প্রতি বন্যার কারণে এই এলাকার খামারগুলো তলিয়ে গেছে। এরপর থেকেই চট্টগ্রামের বাজারে ডিমের সংকট দেখা দিয়েছে।
আড়তদাররা জানান, খামারি ও ব্যাপারীরা ডিম সরবরাহ করছেন ১২ টাকা ৮০ পয়সা দরে। সেখানে সরকার বলছে ১১ টাকায় বিক্রি করতে। এত লোকসান দিয়ে ডিম বিক্রি সম্ভব নয়। অন্যদিকে বাড়তি দামে বিক্রি করলে জরিমানা করা হচ্ছে। সব দিকে আড়তদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অথচ উৎপাদক পর্যায়ে তদারকি হচ্ছে না।
মঙ্গলবার বাজারে প্রতিটি লেয়ার মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে সাড়ে ১৩ টাকায়। দুই সপ্তাহ ধরেই বাজারে এই দর রয়েছে। খামারিরা জানান, ডিম, মুরগির পুরো নিয়ন্ত্রণ করপোরেট ব্যবসায়ীদের হাতে। তবে তাদের জরিমানা করা হয় না।
চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী আড়তদার সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল শুক্কুর বলেন, 'আমাদের বাড়তি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে। অথচ অভিযানে এলে কর্মকর্তারা কোনো কথা শোনেন না। বৈঠকের কথা বললেও তারা রাজি হন না। তাই যত দিন সরবরাহকারীরা সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ডিম সরবরাহ করবে না, তত দিন আমাদের আড়তও বন্ধ থাকবে।'
এদিকে, চট্টগ্রামে দৈনিক ডিমের চাহিদা কত, তা নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। ব্যবসায়ীদের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিনের বিক্রি ২০ লাখ থেকে ২৫ লাখ ডিম। সেটিকেই চাহিদা হিসেবে বলছেন তারা।
ব্যবসায়ীদের দাবি, প্রতিবছর বর্ষা ও বর্ষার পর ডিমের সরবরাহ কম থাকে। তখন দামও বাড়তি থাকে। এ বছর বন্যার কারণে সংকট প্রকট হয়েছে। তবে সরকারি সংস্থাগুলো এসব হিসাব দেখছে না। ব্যাপারী থেকে মধ্যস্বত্বভোগী হয়ে ডিম আসে, সেটি মানছেন না তারা।
নাম প্রকাশ না করে চট্টগ্রামের এক ডিম ব্যবসায়ী বলেন, 'সরকারি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ভোক্তা ও খামারিদের স্বার্থ না দেখে পোলট্রি খাদ্য ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখার অভিযোগ রয়েছে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুবিধা দিতে শুধু আড়তদারদের জরিমানা করছে ভোক্তা অধিদপ্তর। আর তিন দিন আড়ত বন্ধ থাকলে দাম ১৮ টাকার বেশি হবে।'
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মোহাম্মদ ফয়েজ উল্যাহ বলেন, 'বিভিন্ন জেলায় অভিযান হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী আসলে আড়তদাররাই। তারা একযোগে সব দোকান বন্ধ রেখেছেন। কিন্তু রাতে আবার বিক্রিও করছেন। এটি এক ধরনের লুকোচুরি। আমরা তাদের জরিমানার পর সতর্কও করেছি।'