এইচএসসির ফলাফল
কমেছে পাসের হার, বেড়েছে জিপিএ-৫
জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৮.০৯ ও মাদ্রাসায় ৯৩.৪০% আজ থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষার আবেদন
প্রকাশ | ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
পরীক্ষার্থীদের একাংশের চাপের মুখে মাঝপথে বাতিল হয়ে যাওয়া এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়েছে। ভিন্ন ব্যবস্থায় প্রকাশিত পরীক্ষার ফলাফলে দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে এ বছর কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ-৫ বেড়েছে। এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ১৪ শতাংশ। দ্বাদশ শ্রেণির গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর শতভাগ পাস ও ফেল করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯ হাজার ১৯৭ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টির কোনো পরীক্ষার্থী পাস করতে পারেনি। আর সব শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৮টি। গত বছর কেউ পাস করেনি- এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৪২টি। সেই হিসাবে এবার শতভাগ অনুত্তীর্ণ প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। গত বছর সব শিক্ষার্থীই পাস করেছে- এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৯৫৩টি। তার মানে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ৪৩৫টি। এছাড়া বিদেশের কেন্দ্রগুলোতে পাসের হার বেড়েছে এক শতাংশ।
এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে শীর্ষে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবচেয়ে কম পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এ বছর বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে ঢাকা বোর্ডে। এ বোর্ডে উত্তীর্ণ ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৭৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৪ হাজার ৯৮৭ জন ছাত্র এবং ৮০ হাজার ৯৩৩ জন ছাত্রী।
অন্যদিকে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯২২ জন। আর মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ১৯ দশমিক ৪০ শতাংশ। উত্তীর্ণদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানরা নিজেদের অফিসে বসে এবারের এইচএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ করেন। ঢাকায় সমন্বিত ফলাফল প্রকাশ করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার। বরাবরের মতো শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটের পাশাপাশি মোবাইলে এসএমএস করেও উচ্চ মাধ্যমিকের ফল জানতে পেরেছে শিক্ষার্থীরা।
প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, এ বছর এগারোটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন পাস করেছে। সার্বিক পাসের হার ৭৭.৭৮%। নয় সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৫৬%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৮.০৯%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯২২ জন। এছাড়া মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯৩.৪০ %, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন। সার্বিকভাবে ছাত্রদের মধ্যে পাসের হার ৭৫.৬১%, ছাত্রীদের মধ্যে পাস করেছে ৭৯.৯৫%।
নয়টি সাধারণ বোর্ডের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী বোর্ডে ৮১ দশমিক ২৪, কুমিলস্না বোর্ডে ৭১ দশমিক ১৫, যশোর বোর্ডে ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল বোর্ডে ৮১ দশমিক ৮৫, সিলেট বোর্ডে ৮৫ দশমিক ৩৯, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৭ দশমিক ৫৬, ময়মনসিংহ বোর্ডে সর্বনিম্ন ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
মহামারি কোভিডের পর গত বছরই প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। আর এ বছর সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পর বাকিগুলো আর নেওয়া সম্ভব হয়নি সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দেশজুড়ে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে। ১৬ জুলাই রাতেই সারাদেশে স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিকসহ সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। ১৮ জুলাইয়ের
\হএইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়।
পরে স্থগিত পরীক্ষাগুলো ১১ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেজন্য নতুন সূচিও প্রকাশ করেছিল কর্তৃপক্ষ; কিন্তু পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।
পরে অন্তর্র্বর্তী সরকার তা আরও দুই সপ্তাহ পিছিয়ে অর্ধেক প্রশ্নে পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু ২০ আগস্ট পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ঢুকে পরীক্ষা না দেওয়ার দাবি তোলে। পরে সেদিনই সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়ে বাকি পরীক্ষাগুলো না নেওয়ার ঘোষণা দেয়।
সাতটি বিষয়ের পরীক্ষার পর আটকে থাকা বিষয়গুলোর পরীক্ষা না হওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ফল কীভাবে প্রকাশ করা হবে তা ঠিক করতে সময় লেগে যায়। সাড়ে ১৩ লাখ পরীক্ষার্থীর সেই অপেক্ষার অবসান হলো মঙ্গলবার।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২০ সালে পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশের অভিজ্ঞতা এবার আংশিক কাজে লেগেছে। যে কটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। যে পরীক্ষাগুলো হয়নি, সেগুলোর ক্ষেত্রে এসএসসির নম্বর বিবেচনায় নিয়ে সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে মূল্যায়ন। এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নির্ধারিত দিন সকালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারতেন সরকারপ্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার হাতে ফলের প্রতিবেদন তুলে দিতেন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা থাকতেন ওই অনুষ্ঠানে।
সরকারপ্রধান আনুষ্ঠানিকতা সারার পর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ওয়েবসাইট ও মোবাইলে ফল জানার সুযোগ মিলত। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে সারাদেশের বিস্তারিত ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরতেন। কিন্তু অন্তর্র্বর্তী সরকারের সময়ে এবার ফল প্রকাশের সেসব আনুষ্ঠানিকতা রাখা হয়নি। সাংবাদিকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। আর অন্যান্য বোর্ডে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফল প্রকাশ করেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
এবারও জিপিএ-৫ ও পাসে মেয়েরা এগিয়ে
উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় গত কয়েক বছরের মতো এবারও পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন। তাদের মধ্যে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন বা ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ পাস করেছে। আর ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন, যার হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ।
এ বছর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮০ হাজার ৯৩৩ জন; আর ছাত্রদের ক্ষেত্রে এ সংখ্যা ৬৪ হাজার ৯৭৮। তার মানে, ছাত্রদের চাইতে ১৫ হাজার ৯৫৫ জন বেশি ছাত্রী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছেন।
এর আগে ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ছাত্রীদের মধ্যে ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছিল। আর পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ছিল ৪৩ হাজার ২৩০।
বিদেশের ৮ কেন্দ্রে পাসের হার বেড়েছে
এবার দেশের বাইরের আট কেন্দ্রে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ২৮২ জন, যার মধ্যে পাস করেছে ২৬৯ জন। এতে প্রবাসী শিক্ষার্থীদের পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এর আগে ২০২৩ সালে ওই আট কেন্দ্রে অংশ নিয়েছিল ৩২১ জন, আর পাস করে ৩০৩ জন। অর্থাৎ ৯৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। সেই হিসাবে চলতি বছরে পাসের হার বেড়েছে ১ শতাংশ পয়েন্ট।
ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১
মঙ্গলবার সকালে ফলাফল প্রকাশকালে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার বলেন, 'এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার ৯টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন। এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে।'
এবার পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে।'
জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, 'এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিল, সে হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছে। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ-৫ বেড়ে গেছে।'
প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায়, চলতি বছরের উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় রাজধানীর ঢাকা কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচজন ছাড়া সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। এ কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ হাজার ৫৩ জন। পাস করেছে ১ হাজার ৪৮ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৬৬ জন, যা গতবারের ১৫৪টি বেশি।
তবে ফল প্রকাশের পর মঙ্গলবার ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা কলেজের ক্যাম্পাস মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। কলেজের অফিস সহকারী মোহাম্মদ সোহরাব বলেন, 'এখন পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থীও তাদের কাছে ফল জানতে আসেনি।'
ফলাফল বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম ইলিয়াস বলেন, 'ফলাফল গত বছরের চেয়ে এবার ভালো হয়েছে। তবে আমরা আরও ভালো ফলাফল আশা করি। আর এই ফলাফল হচ্ছে শিক্ষার একটি ধাপ। আমাদের শিক্ষার্থীরা যেন পরবর্তী সব ধাপে ভালো করে মানবিক গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ হতে পারে, আমরা এটাই চাই।'
রাজশাহীতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে
রাজশাহী অফিস জানায়, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২৪ হাজার ৯০২ জন। শিক্ষার্থী।
রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. অলীউল আলম সংবাদ সম্মেলন জানান, এ বছর এক লাখ ৩৭ হাজার ১৮৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ ১১ হাজার ৪৪৮ জন।
রাজশাহী বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, পাস ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরা। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৭ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ৫৯৭ জন। অন্যদিকে, ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে দশ হাজার ৩০৫ জন।
এদিকে, এই শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আটটি জেলার মধ্যে এবার পাসের হারের দিক থেকে এগিয়ে আছে রাজশাহী জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৮৯ দশমিক ১২ শতাংশ। ৮৪ দশমিক ৪১ শতাংশ পাসের হার নিয়ে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বগুড়া জেলা। এছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ৭৭ দশমিক ৩১ শতাংশ, নাটোর জেলা ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, পাবনা ৮১ দশমিক ৪৭ শতাংশ, সিরাজগঞ্জ ৭৫ দশমিক ৯১ দশমিক, জয়পুরহাট জেলা ৭৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ পাসের হার।
কুমিলস্না বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭,৯২২ জন
স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না জানান, এ বছর কুমিলস্না বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ। যা বিগত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৩৯। তবে এ বছর বেড়েছে জিপিএ-৫। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭ হাজার ৯২২ জন এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৫ হাজার ৬৫৫ জন।
কুমিলস্না শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. নিজামুল করিম সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ বছর ১ লাখ ১২ হাজার ৩১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৯ হাজার ৯০৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। শতভাগ পাস করেছে ১০টি প্রতিষ্ঠান। শূন্য পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৪টি। ফলাফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরা। মেয়েদের মধ্যে ৪ হাজার ৯৫৪ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। ছেলেদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৯৬৮ জন। মেয়েদের শতকরা পাসের হার ৭৩ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ছেলেদের ৬৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ।
ফলাফলে পাসের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে বোর্ড চেয়ারম্যান বলেন, 'এ বছর ইংরেজি ও আইসিটিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজিতে ফেল করেছে ২১ হাজার ৫৩৮ এবং আইসিটিতে ফেল ১২ হাজার ৮১০ জন। তাই পাসের হার কমে গেছে। তবে এ দুটি বিষয়ে বেশি পরীক্ষার্থী ফেল করা এবং শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।'
যশোর বোর্ডে কমেছে পাসের হার
স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে গত বছর তলানিতে নেমে যাওয়া যশোর বোর্ড এবার একধাপ ওপরে উঠেছে। এ বছর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী সামান্য বাড়লেও কমেছে পাসের হার। যশোর বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ২৯ ভাগ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৭৪৯ জন শিক্ষার্থী। গত বছর পাসের হার ছিল ৬৯ দশমিক ৮৮ ভাগ। অন্যদিকে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৮ হাজার ১২২ জন শিক্ষার্থী। পাসের হারের দিক থেকে এই ফলাফল সাধারণ ৯টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ৮ম। বোর্ড কর্তৃপক্ষ বলছে, ইংরেজিতে অনুত্তীর্ণের হার বেড়ে যাওয়ায় বোর্ডের সার্বিক ফলাফলে এর প্রভাব পড়েছে।
বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফল থেকে জানা যায়, এ বছর এক লাখ ২২ হাজার ৫১১ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৭৮ হাজার ৭৬৪ জন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ছাত্র ৩৬ হাজার ২৪৭ জন এবং ছাত্রী ৪২ হাজার ৫১৭ জন। পাসের হার ৬৪ দশমিক ২৯। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৭৪৯ জন। বহিষ্কৃত হয়েছে ১৩ জন।
এ বছর ৫৭৪ কলেজের মধ্যে ১৩ কলেজে শতভাগ পাস করেছে। একই সঙ্গে ৭ কলেজ থেকে কেউ পাস করতে পারেনি। গত বছর শতভাগ পাস করেছিল ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০২২ সালের পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছিল ৩৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ১১৬ এবং ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৫৭৫। আর ২০২৩ সালে ৭টি প্রতিষ্ঠান শূন্যভাগ পাসের হারের রেকর্ড গড়েছিল।
চট্টগ্রাম বোর্ডে বেড়েছে জিপিএ-৫
চট্টগ্রাম বু্যরো জানায়, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় বেড়েছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জন। যা গত বছরের চেয়ে ৩ হাজার ৯৩০ জন বেশি। ২০২৩ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ৩৩৯। চলতি বছর পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। এছাড়া এ বছর পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ। আগের বছর ছিল ৭৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ।
শিক্ষা বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবার পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৬ হাজার ২৯৮ জন। তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিল এক লাখ ৫ হাজার ৪১৬ জন। পাস করেছে ৭৪ হাজার ১২৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ২৬৯ জন। এরমধ্যে ৫ হাজার ৭৫৯ জন ছাত্রী যেখানে জিপিএ-৫ পেয়েছে, সেখানে ছাত্রদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৫১০ জন। এ বছর ছাত্র পাসের হার ৬৭ দশমিক ৭২ শতাংশ ও ছাত্রী পাসের হার ৭২ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
বিভাগভিত্তিক ফলাফলে এ বছর এগিয়ে আছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, মানবিকে পাসের হার ৫৭ দশমিক ১১ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫২ শতাংশ।
তথ্যমতে, এবার ২৮২ কলেজের শিক্ষার্থীরা ১১৫টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৩টি কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। গতবার এ সংখ্যা ছিল ১২টি। একজনও পাস করেনি এমন কলেজ পাঁচটি। ২২ জন শিক্ষার্থীর ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর ছাড়াও কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার পরীক্ষার্থীরাও অংশ নেন। এ বছর কক্সবাজার জেলায় পাসের হার ৬৩ দশমিক ১৯, রাঙামাটি জেলায় পাসের হার ৬০ দশমিক ৩২, খাগড়াছড়ি জেলায় পাসের হার ৫৯ দশমিক ৬৩, বান্দরবান জেলায় পাসের হার ৫৯ দশমিক ৯০।
বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৮১.৮৫ শতাংশ
বরিশাল অফিস জানায়, বরিশাল বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষায় এ বছর পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ বছর পাসের হার বেড়েছে। সেইসঙ্গে বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ১৬৭ জন শিক্ষার্থী। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৩ হাজার ৯৯৩ জন।
বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক অরুণ কুমার গাইন সংবাদ সম্মেলনে জানান, এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৬৬ হাজার ৮৭ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩১ হাজার ৯৯৩ জন ও ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯৪ জন। পাস করেছে ৫৪ হাজার ৮৯ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ২৪ হাজার ৩৬৭ জন ও ছাত্রী ২৯ হাজার ৭২২ জন। এছাড়া বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে আছে ঝালকাঠি জেলা।
তিনি জানান, এবারও এ শিক্ষা বোর্ডে ছেলেদের তুলনায় পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে মেয়েরা। এ বছর কোনো ক?লেজে শতভাগ ফেল না থাকলেও ২১টি প্রতিষ্ঠানে পা?সের হার শতভাগ র?য়েছে। এ বছর বিজ্ঞান থেকে মোট ২ হাজার ২৯২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে, যার মধ্যে মেয়েরা পেয়েছে ১ হাজার ৩৪৩ জন। আর ছেলেরা পেয়েছে ৯৪৯ জন।
অন্যদিকে, মানবিক বিভাগ থেকে মোট ১ হাজার ৫৮২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ২৮১ জন মেয়ে এবং ৩০১ জন ছেলে। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যার মধ্যে ১৮০ জন মেয়ে এবং ১১৩ জন ছেলে। এদিকে তিন বিভাগে পাসের হার মিলিয়ে দেখা মেয়েরা ৮৭.১৮ শতাংশ পাস করেছে, যেখানে ছেলেদের পাসের হার ৭৬.১৬।
পাসের শীর্ষে সিলেট শিক্ষা বোর্ড
সিলেট অফিস জানায়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। এবার সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯। যা গত বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি। গত বছর পাসের হার ছিল ৭১ দশমিক ৬২।
গত কয়েক বছর সিলেটে জিপিএ-৫ কম থাকলেও এ বছর রেকর্ড ৬ হাজার ৬৯৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ হাজার ৬৯৯ জন শিক্ষার্থী।
সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. জাকির আহমদ ও বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল সাংবাদিকদের কাছে পরীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুণ চন্দ্র পাল বলেন, 'সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৮৩ হাজার ১৫৬ জন অংশ নিয়ে ৭১ হাজার ১২ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। ফলাফলের সব সূচকে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। এবার ৪৯ হাজার ৩৫৪ ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ৪২ হাজার ৬৬১ জন। পাসের হার ৮৬ দশমিক শূন্য ৪৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৮২৯ জন। এদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ৮৫। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩৩ হাজার ৮১১ জন ছাত্রের মধ্যে পাস করেছে ২৮ হাজার ৩৫১ জন। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ৮৬৯ জন।
দিনাজপুরে পাসের হার ৭৭,৫৬ শতাংশ
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২৯৫ জন।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মীর সাজ্জাদ আলী এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশকালে জানান, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় ১ লাখ ১৩ হাজার ৭৯৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ লাখ ১২ হাজার ১১৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেয়।
এর মধ্যে ৮৬ হাজার ৯৫৪ জন পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছে। ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেশি। ছাত্রী পাসের হার ৮১ দশমিক এক শতাংশ ও ছাত্র পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রী হচ্ছে ৮ হাজার ১১০ জন আর ছাত্রের সংখ্যা ৬ হাজার ১৮৫ জন।
তিনি জানান, শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ২০ কলেজের কোনো পরীক্ষার্থী পাস করেনি। আর ১৫টি কলেজের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে।
ময়মনসিংহ বোর্ডে এগিয়ে মেয়েরা
ময়মনসিংহ বু্যরো জানায়, ময়মনসিংহ বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে চার হাজার ৮২৬ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ১০৯ ও ছাত্রী ২ হাজার ৭১৭ জন। সার্বিক ফলাফলে এবারও মেয়েরা এগিয়ে। গত বছর এই বোর্ডে পাসের হার ছিল ৭০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। সেই তুলনায় এ বছর ৭ দশমিক ২২ শতাংশ কম পাস করেছে।
বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবু তাহের জানান, এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় ৭৭ হাজার ৬২১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। পাস করেছে ৪৯ হাজার ৬৯ জন। ফেল করেছে ২৮ হাজার ৫৫২ জন শিক্ষার্থী। ২৯৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ কৃতকার্য এবং ৪টি প্রতিষ্ঠান শতভাগ অকৃতকার্য হয়েছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৮৮.০৯%
এদিকে, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছর এইচএসসি ভোকেশনাল, বিএম, ডিপেস্নামা ইন কমার্স পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৮৮ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৯২২ জন শিক্ষার্থী।
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯৩.৪০%
এছাড়া এবারের মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনুষ্ঠিত আলিম পরীক্ষার ফলাফলে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। আলিমে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থী।
২২ অক্টোবরের মধ্যে পুনঃনিরীক্ষার
আবেদন
এদিকে, উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষায় প্রত্যাশিত ফল না পাওয়া শিক্ষার্থীরা আজ বুধবার থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবেন। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক আবুল বাশার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন কেবল টেলিটক নম্বর থেকে করা যাবে। আবেদন করতে মোবাইলের মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে। ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা লাগবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে।
পরে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।
ফল পুনঃনিরীক্ষণের ক্ষেত্রে একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ের একাধিক পত্রের জন্য আবেদন করা যাবে। সেক্ষেত্রে 'কমা' দিয়ে বিষয় বা পত্রের কোডগুলো আলাদা করে লিখতে হবে।
যেসব বিষয় দুইপত্রের সেক্ষেত্রে দুটিতেই শিক্ষার্থীদের আবেদন করতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা করে ফি দিতে হবে।
এবারের উচ্চ মাধ্যমিকের ফল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বোর্ড চেয়ারম্যানরা নিজেদের অফিসে বসে প্রকাশ করেন। ঢাকায় সমন্বিত ফল প্রকাশ করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। গতবারের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে, তবে বেড়েছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা।
২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ; জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৫৯৫ জন।