অর্থনীতিতে নোবেল পেলেন তিনজন

প্রকাশ | ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ড্যারন আসেমোগলু, সিমন জনসন ও জেমস এ রবিনসন
চলতি বছর অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির অধ্যাপক ড্যারন আসেমোগলু, একই প্রতিষ্ঠানের সিমন জনসন ও ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো, ইলিনয়ের অধ্যাপক জেমস এ রবিনসন। বাংলাদেশ সময় সোমবার বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে দ্য রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স তাদের নাম ঘোষণা করে। নোবেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কীভাবে প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় এবং সমৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে- এ নিয়ে গবেষণার জন্য তাদের ২০২৪ সালের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো দেশ এগিয়ে থাকে এবং কোনো দেশ কেন পিছিয়ে থাকে, সে বিষয়ে নতুন অন্তর্দৃষ্টি দিয়েছেন এবারের নোবেল বিজয়ী তিন অর্থনীতিবিদ। এই ব্যবধানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার ব্যবধান। ইউরোপীয় উপনিবেশবাদীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই তিন অর্থনীতিবিদ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমৃদ্ধির সম্পর্ক দেখিয়েছেন। একই সঙ্গে তারা তাত্ত্বিক কাঠামো তৈরি করেছেন, যার বদৌলতে প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতার মধ্যকার ব্যবধান ও কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বদলে দেওয়া যায়, তার ব্যাখ্যা করা সম্ভব। নোবেল পুরস্কারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ইউরোপীয়রা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে উপনিবেশ স্থাপন করলে এসব দেশের সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলো বদলে যায়। কখনো কখনো এসব পরিবর্তন নাটকীয়ভাবে হয়েছে। সবখানে যে এই পরিবর্তন একইভাবে হয়েছে, তা নয়। কোনো অঞ্চলে উপনিবেশবাদীদের লক্ষ্য ছিল স্থানীয় জনগণকে শোষণ করে নিজেদের সুখসমৃদ্ধি বৃদ্ধি করা। আরেকদিকে দেখা যায়, উপনিবেশবাদীরা অনেক দেশে ইউরোপীয় অভিবাসীদের দীর্ঘমেয়াদি কল্যাণের লক্ষ্যে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। এই যে, উপনিবেশবাদীরা উপনিবেশগুলোতে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলল, তার মধ্য দিয়ে এসব দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির গতিপথ নির্ধারিত হয়েছে। এবারের নোবেলজয়ী তিনজন অর্থনীতিবিদ এই বিষয়টিতে আলো ফেলেছেন। দেখা গেছে, উপনিবেশ স্থাপনের সময় যেসব দেশ গরিব ছিল, সেখানে মূলত অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। সময়ের পরিক্রমায় এসব দেশের মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি এসেছে- সাধারণভাবে বিষয়টি এভাবেই ঘটেছে। সাবেক উপনিবেশগুলোর মধ্যে যেসব দেশ একসময় ধনী ছিল সেগুলো যে এখন দরিদ্র হয়ে গেছে এবং যেসব দেশ দরিদ্র ছিল সেগুলো যে এখন ধনী হয়েছে, এই পার্থক্যের পেছনে উপনিবেশবাদীদের এই নীতি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কারণ। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যেসব দেশে শোষণমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেই দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি তেমন একটা হয়নি এবং তারা সেই ফাঁদে আটকা পড়েছে। বিষয়টি হলো, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে সেই সমাজের সবাই দীর্ঘমেয়াদি সুফল পায়; কিন্তু শোষণমূলক ব্যবস্থা বা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে হাতেগোনা অল্প কিছু মানুষ স্বল্প মেয়াদে লাভবান হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থা যদি এমন হয় যে, হাতেগোনা কয়েকজন মানুষের হাতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ থাকবে তাহলে কেউই তাদের প্রতিশ্রম্নত ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক সংস্কারে আস্থা পাবে না। নোবেলজয়ী তিন অর্থনীতিবিদ দেখিয়েছেন, সে কারণেই এসব দেশের উন্নতি হয় না। হোয়াই নেশনস ফেইল ২০২৪ সালের নোবেল বিজয়ী তিন অর্থনীতিবিদের মধ্যে দুজন- ড্যারন আসেমোগলু ও জেমস রবিনসন হোয়াই নেশান্স ফেইল : দ্য অরিজিন্স অব পাওয়ার, প্রসপারিটি অ্যান্ড পভার্টি শীর্ষক বিশ্বখ্যাত গ্রন্থের লেখক। আসেমোগলুর মতে, সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হলো, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সক্ষমতা বা এর অভাব। এই বইকে তিনটি শব্দে সার সংক্ষেপ করা যায়, যেমন প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান। তার মতে, যখন কোনো রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নাগরিক সংশ্লিষ্টতা থাকে, তখন কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের ধারায় পা দিতে পারে। একমাত্র মেধাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোই রাজনীতিবিদ বা আমলাদের হাতে রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠন ঠেকাতে পারে। বইয়ের লেখকদ্বয় মেধাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বে জোর দেন। বলেন, একমাত্র মেধাভিত্তিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোই রাজনীতিবিদ বা আমলাদের দ্বারা রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুণ্ঠন ঠেকাতে পারে। এতে দীর্ঘ মেয়াদে হলেও অর্থনীতিতে এক ধরনের সমতা তৈরি হয় কিংবা মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন হয়। তারা দেখিয়েছেন, আফ্রিকার অনেক দেশে এখন আর সাদাদের রাজত্ব না থাকলেও অল্প কিছু ক্ষমতাসীন ব্যক্তি রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে সম্পদ লুটে নিচ্ছে, যারা কেউই সাদা নন। এই বাস্তবতায় প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতায় তাদের এই গুরুত্বারোপ।