চাঁদপুর মাছঘাটের সামনে রেলের জমিতে কয়েকটি টিনের ঘর। এগুলোর একটিতে বসে সজীব চন্দ্র দাস নামে এক যুবক মুঠোফোনে মাছের 'অর্ডার' (ফরমাশ) নিচ্ছেন। পাশে ছোট দুটি ঘরে দেখা গেল, পাঁচ-ছয়জন বরফ দিয়ে মাছ প্যাকেট করছেন, কেউ করছেন ফ্রিজিং (বরফ দিয়ে সংরক্ষণের কাজ)। আবার মুঠোফোনে ঢাকার এক নারীকে মাছের ওজন করা ও প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়া ভিডিওকলে দেখাচ্ছেন একজন।
এ দৃশ্য গতকাল বেলা ১১টায় চাঁদপুরের ইলিশ ঘাটের। ঘাটের ওই ছোট ঘরগুলো থেকে সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় মাধ্যম ফেসবুকে তিনটি পেজের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশসহ ফরমাশ করা মাছ পাঠান সজীব চন্দ্র। 'সজীব ইলিশের বাজার', 'সজীব ইলিশ' ও 'মাছের মেলা'-তিনটি পেজ চালান তিনি।
এদিকে মাছঘাটের আড়তদার ও অনলাইনে ইলিশের ব্যবসায়ী সাগর ব্যাপারীকে ওই দিন দুপুর পর্যন্ত অনলাইনে ২১ জন গ্রাহকের ১২০ কেজি ইলিশের অর্ডার নিতে দেখা গেল। সাগর জানান, তিনি প্রতিদিন গড়ে তিন-চার লাখ টাকার মাছ সারাদেশে পাঠাচ্ছেন।
এ ঘাট থেকেই 'তাজা ফিস' নামে একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে ইলিশ ও অন্যান্য মাছের ব্যবসা করছেন রোকেয়া প্রীতি। তিনি জানান, বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বিদেশ থেকেও প্রচুর অর্ডার পান। প্রতিদিন অন্তত লাখ টাকার মাছের ব্যবসা তার।
সজীব, সাগর, রোকেয়া- তাদের মতোই চাঁদপুরে তালিকাভুক্ত অনলাইন মাছ ব্যবসায়ী আছেন ৪১ জন। এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী। তালিকার বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেক তরুণ-তরুণী ইলিশ মৌসুমে অনলাইনে মাছ বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে অনলাইনে চাঁদপুর থেকেই দেশের ৬৪ জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৬০ মণের মতো মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সজীব চন্দ্র দাস বলেন, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনলাইনে মাছের ১৫টি অর্ডার পেয়েছেন তিনি। তবে মাছ বিক্রি করতে সম্মত হয়েছেন তিনজনের কাছে। এর মধ্যে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের রোকসানা বেগম সাতটি ইলিশ ও দুই কেজি চিংড়ি অর্ডার করেছেন; যার দাম হয়েছে ২০ হাজার ৪০০ টাকা।
সজীব, সাগর, রোকেয়া- তাদের মতোই চাঁদপুরে তালিকাভুক্ত অনলাইন মাছ ব্যবসায়ী আছেন ৪১ জন। এসব তরুণ উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী। তালিকার বাইরেও ব্যক্তিগতভাবে অনেক তরুণ-তরুণী ইলিশের মৌসুমে অনলাইনে মাছ বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে অনলাইনে চাঁদপুর থেকেই ৬৪ জেলায় প্রতিদিন গড়ে ৬০ মণের মতো মাছ বিক্রি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
প্রায় চার বছর আগে করোনাকালে শুরু করা অনলাইনে এ মাছের ব্যবসাই এখন সজীবের একমাত্র পেশা। তিনি বলেন, 'আমি ৭টি ইলিশ ১ হাজার ৮০০ টাকা করে কিনে কামরাঙ্গীরচরের ওই গ্রাহককে কেজিপ্রতি ৫০ টাকা লাভ রেখে বিক্রি করেছি। গ্রাহককে কুরিয়ার চার্জ বাবদ অতিরিক্ত ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে। প্যাকেট করার খরচও রাখছি। গ্রাহকেরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মাছের মূল্য পাঠান।' সারাদেশেই তার গ্রাহক আছে এবং প্রতিদিনই বিভিন্ন জেলায় মাছ পাঠান বলে জানান তিনি।
চাঁদপুর থেকে বছরে কত টাকার মাছ বিক্রি হয় জানতে চাইলে এর সুনির্দিষ্ট উত্তর জানা নেই বলে উলেস্নখ করেন জেলা মৎস্য বণিক সমিতির নেতারা। তবে তা অন্তত পাঁচ কোটি টাকা হবে বলে মনে করেন সমিতির সভাপতি আবদুল বারি মানিক জমাদার। প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি অনলাইনেও সারাদেশে মাছ, বিশেষ করে ইলিশ বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এ মাছের চাহিদা বেড়েছে বলে জানান এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, চাহিদার সঙ্গে পালস্না দিয়ে ইলিশের দামও বেড়েছে।
মানিক জমাদার বলেন, চাঁদপুর মাছঘাট প্রায় ২০০ বছরের পুরনো। এখানে অনেকেই বাপ-দাদার আমল থেকে ইলিশের ব্যবসা করছেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যবসার ধরন পরিবর্তন হওয়ায় হাল আমলে অনেকে অনলাইনে মাছ বিক্রির দিকে মনোযোগ দিয়েছেন। এতে ইলিশের দামের ওপরও প্রভাব পড়েছে। দাম কিছুটা বেড়েছে।