সারাদেশে যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করছে। অভিযানে সর্বোচ্চ শুরুত্ব পাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার। এ ছাড়া আন্দোলনে অস্ত্র প্রদর্শন ও গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারের বিষয়টিও বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। সেই সঙ্গে সব ধরনের অপরাধী ও মাদকের বিরুদ্ধে চালানো হবে কঠোর অভিযান।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, খোদ ঢাকা থেকে শুরু করে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় চুরি, ডাকাতি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নকল পোশাক পরিধান করে ডাকাতি, বাসায় ঢুকে গণমাধ্যমকর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, জামিনে কারামুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চাঁদা দাবিসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। বিশেষ করে ছদ্মবেশ ধারণ করে বাসা বাড়িতে ঢুকে ডাকাতি ও চুরির ঘটনা জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।
সূত্রটি বলছে, গত ১০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকার রামপুরা মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় ফ্ল্যাটের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে বাসায় ঢুকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিমকে (৩৩) পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক উপ-পরিচালকসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
একই দিন অভিনব কায়দায় চাঁদাবাজিতে জড়িত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছে পাওয়া যায় আদায় করা চাঁদার সাড়ে ৫৭ লাখ টাকা। গত ১২ অক্টোবর রাতে ঢাকার মিরপুর এলাকায় ডাকাতির
\হপ্রস্তুতিকালে হাতেনাতে অস্ত্রসহ চার ডাকাত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়।
একই দিন ঢাকার রমনা এলাকার একটি সুরক্ষিত বাড়ি থেকে ছদ্মবেশ ধারণ করে ঢুকে স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়া তিন নারী অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের কাছে পাওয়া যায় লুটে নেওয়া ৩১ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার। গ্রেপ্তাররা গত ১৬ আগস্ট উদ্ধার হওয়া স্বর্ণালঙ্কার লুটে নিয়েছিল। একটি সুরক্ষিত ব্যাংক কর্মকর্তার বাড়িতে এমন ঘটনা রীতিমতো হতবাক করেছে পুলিশকে।
এদিন রাতে মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ এলাকার স্বপ্ননীড় হাউজিং এলাকার ৭২০/১ নম্বর বহুতল বাড়ির তিন তলায় আবু বক্কর নামের এক ব্যবসায়ীর বাসায় সেনাবাহিনী ওর্ যাবের নকল পোশাক পরিধান করে একদল ডাকাত বাড়িতে ঢুকে। তারা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে অভিযান চালানোর কথা বলে বাড়িতে ঢুকে। পরে তারা ওই ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটে ঢুকে অস্ত্রের মুখে সবাইকে জিম্মি করে সাড়ে ৭৫ লাখ টাকা এবং ৭০ ভরি ওজনের ৭০ লাখ টাকা মূল্যমানের স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তাৎক্ষণিক অভিযানে রোববার সন্দেহভাজন আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিচু্যত সদস্য বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশেই নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। যার নিয়মিত ফিরিস্তি আসছে সদর দপ্তরে। সার্বিক অপরাধ পর্যালোচনা করে সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। যা গত ১২ অক্টোবর পুলিশ মহাপরিদর্র্শক মো. ময়নুল ইসলাম প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন। পুলিশপ্রধান দুর্গাপূজার পর সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে বলে জানান। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও কৌশল নির্ধারণ করে অভিযানটি হয়ত দুই থেকে তিন দিন পর চালানো হতো। কিন্তু সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনা আলোচনায় আসায় দ্রম্নততার সঙ্গে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ রাত অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর অথবা ১৫ অক্টোবর থেকেই অভিযান শুরু হচ্ছে বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্রে জানা গেছে।
সূত্রটি বলছে, এবারের অভিযানে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাচ্ছে গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর দেশের চার শতাধিক থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার। এরপরই বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি চালানো এবং অস্ত্র প্রদর্শনকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি। তৃতীয় ধাপে গুরুত্ব পাচ্ছে নানা ধরনের অপরাধী ও মাদক কারবারিদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গটি। অভিযান চলবে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে। সঙ্গে থাকবে বিজিবি,র্ যাব, পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ গ্রাম পুলিশের সদস্যরা। অভিযানটি যেহেতু গ্রামপর্যায় পর্যন্ত চালানো হবে, এ জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রাম পুলিশকে রাখা হচ্ছে। এ ছাড়া পূজাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ৪২টি অপরাধমূলক ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৪টি। আর জিডি হয়েছে ২৯টি। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৬ জনকে। পূজা-সংক্রান্ত মামলা ও জিডির ঘটনায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে অপর আসামিদেরও গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।
বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর দেশব্যাপী শুরু হতে যাওয়া সাঁড়াশি অভিযানের বিষয়ে যায়যায়দিনকে বলেন, সহসাই অভিযান শুরু হচ্ছে। অভিযানে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে গুলি চালানোর সঙ্গে জড়িত, মাদক ব্যবসায়ী, অবৈধ অস্ত্রধারী, চোর, ডাকাতসহ নানা ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। অভিযানটি হবে সম্মিলিত বা যৌথভাবে। পুলিশ ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীও অভিযানে থাকবে।