আদানির সঙ্গে চুক্তি 'অব্যাহত রাখতে পারে' বাংলাদেশ
রয়টার্সের প্রতিবেদন
প্রকাশ | ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
দাম নিয়ে আপত্তি থাকলেও সরবরাহ নিয়ে উদ্বেগ আর আইনি জটিলতার ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ভারতের আদানি পাওয়ারের সঙ্গে করা বিদু্যৎ চুক্তি বহাল রাখতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে।
সংবাদ সংস্থাটি লিখেছে, বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন দুটি সূত্র তাদের এমন আভাসই দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসা অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার তার পূর্বসূরির সময় করা বিদু্যৎ ও জ্বালানি চুক্তিগুলো পর্যালোচনা জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্যে আদানির সঙ্গে করা চুক্তিও রয়েছে।
আদানি গ্রম্নপের কোম্পানি আদানি পাওয়ার ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (পিডিবি) বিদু্যৎ দিচ্ছে। গত বছরের মার্চ থেকে ভারতের ঝাড়খন্ডের গড্ডায় আদানির ১৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে এই বিদু্যৎ বাংলাদেশে আসছে।
তবে স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দামে আদানির কাছ থেকে বিদু্যৎ কেনা নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে গত আওয়ামী লীগ সরকারও অস্বস্তিতে পড়েছিল। ২০১৭ সালে ওই
\হচুক্তি করার ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ যথাযথভাবে রক্ষা করা হয়েছিল কি না, তা এখন খতিয়ে দেখবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের পর্যালোচনা কমিটি।
একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, ঝাড়খন্ডের আদানির বিদু্যৎকেন্দ্র থেকে চাহিদার প্রায় এক দশমাংশ বিদু্যৎ পাচ্ছে বাংলাদেশ। সে কারণে ওই চুক্তি রাতারাতি বাতিল করে দেওয়া সরকারের জন্য 'কঠিন'।
তাছাড়া বড় ধরনের অনিয়মের প্রমাণ ছাড়া চুক্তি বাতিল করলে আদানি বাংলাদেশ সরকারকে আন্তর্জাতিক আদালতে নিতে পারে, সে কথাও সরকারকে ভাবতে হচ্ছে।
দ্বিতীয় সূত্রটি রয়টার্সকে বলেছে, চুক্তি থেকে সরে আসা যদি সম্ভব নাও হয়, বিদু্যতের দাম কমাতে আদানির সঙ্গে আলোচনায় বসা হতে পারে সরকারের জন্য একমাত্র বিকল্প।
এ বিষয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের হ পৃষ্ঠা ২ কলাম ৫
জবাবে অন্তর্র্বর্তী সরকারের বিদু্যৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, 'কমিটি বর্তমানে বিষয়টি পর্যালোচনা করছে, তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা সময়োচিত হবে না।'
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সর্বশেষ অডিট রিপোর্টের বরাত দিয়ে বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট বিদু্যতের জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রায় ১২ টাকা করে নেয়।
এই দর ভারতের অন্যান্য বেসরকারি উৎপাদকদের দরের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি এবং ভারতীয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেন্দ্রগুলোর তুলনায় ৬৩ শতাংশ বেশি।
আদানি ছাড়াও ভারতের অন্যান্য উৎপাদকের কাছ থেকে আরও ১১৬০ মেগাওয়াট বিদু্যৎ কেনে বাংলাদেশ।
আদানির একজন মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশ যে চুক্তি পর্যালোচনা করছে, সে বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
'তিনি বলেন, দিন দিন বকেয়া বাড়ছে, তারপরও তো আমরা বাংলাদেশে বিদু্যৎ সরবরাহ চালিয়ে যাচ্ছি। বকেয়ার বিষয়টি দিনকে দিন আমাদের উদ্বেগ বাড়াচ্ছে, বিদু্যৎ কেন্দ্রের কার্যক্রমকেই এটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।'
রয়টার্স লিখেছে, আদানির বিদু্যৎ বিল বাবদ বাংলাদেশের বকেয়ার পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর অন্য ভারতীয় কোম্পানিগুলো মিলিয়ে বকেয়ার পরিমাণ বিলিয়ন ডলারের বেশি। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশকে ওই অর্থ পরিশোধে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।
আদানি পাওয়ারের মুখপাত্র বলেন, 'আমরা বাংলাদেশ বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড এবং সরকারের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। তারা আমাদের শিগগিরই বকেয়া পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছেন।'
তবে আদানির সরবরাহ করা বিদু্যতের দাম কেন অন্যদের চেয়ে বেশি, সে প্রশ্নের উত্তর দেননি মুখপাত্র।
বিদু্যৎ কেনার জন্য আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদু্যৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এ চুক্তি করেছিল ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর।
শেখ হাসিনার আমলে এ চুক্তি করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়েছিল, বিনা বিনিয়োগে স্বল্পমূল্যে বা স্থানীয় বাজারমূল্যে বিদু্যৎ পাওয়া যাবে। এর ফলে বিনিয়োগের ধকল পোহাতে হবে না, বরং অনেক অর্থ সাশ্রয় হবে।
চুক্তি হওয়ার পর ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের গোড্ডায় ২০২০ সালে বিদু্যৎকেন্দ্র স্থাপন শুরু করে আদানি। কিন্তু সেই চুক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা বা তথ্য-উপাত্ত বাংলাদেশের মানুষের হাতে ছিল না।
ভারতের আদানি শিল্পগোষ্ঠীর নানা কেলেঙ্কারির তথ্য প্রকাশের মধ্যে বাংলাদেশের কাছে বিদু্যৎ বিক্রির চুক্তিটিও ফাঁস হয়ে যায়। সেখানে দেখা যায়, স্বল্পমূল্যে নয়, বরং স্থানীয় বাজারের চেয়ে বেশি দামে বিদু্যৎ আসবে আদানি থেকে। কয়লার দামও বেশি দিতে হবে। এছাড়া উৎপাদন না করলেও বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে দিতে হবে সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলার।
সক্ষমতা থাকার পরও দেশের বিদু্যৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে আদানির বিদু্যৎ আমদানি করা নিয়ে সে সময় প্রশ্ন ওঠে। এ বিদু্যৎ আমদানি করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে ফাঁস হওয়া চুক্তির তথ্য না মেলায় ব্যাপক সমালোচনা হয়।
অন্তর্র্বর্তী সরকার ওই চুক্তি পর্যালোচনার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাকে স্বাগত জানিয়েছে বিএনপি।
দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, 'আদানির কাছ থেকে বেশি দামে বিদু্যৎ কেনা নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ছিল। সরকার ওই চুক্তি পর্যালোচনা করছে, এটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই আমি আশা করি।'