মন্ডপে সংগীত-বিতর্ক সাতজনকে আসামি করে মামলা
প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
চট্টগ্রাম নগরে একটি পূজামন্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্যসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বাদী হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন।
চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, নুরুল ইসলাম, আবদুলস্নাহ ইকবাল, মো. রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নগরের রহমতগঞ্জের জেএম সেন হলে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে গান করেন। মামলায় এই ছয়জনের সঙ্গে তাদের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ করা চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ?যাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকেও (ঘটনার পর বহিষ্কৃত) আসামি করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে দুজনকে রাতে নগরের পৃথক স্থান থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলেন- তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক শহীদুল করিম এবং দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক নুরুল ইসলাম।
মামলার বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফজলুল কাদের চৌধুরী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, গানের ভাষায় শব্দচয়নের মাধ্যমে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে,
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে জেএম সেন হল প্রাঙ্গণে মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি স্থানীয় বিভিন্ন শিল্পীগোষ্ঠীর মাধ্যমে সন্ধ্যার পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন পূজামন্ডপে আসতে শুরু করেন এবং অনুষ্ঠান উপভোগ করতে থাকেন। ইতিপূর্বে পূজা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত (ঘটনার পর বহিষ্কৃত) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার কথা বলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়) চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পী অনুষ্ঠানে আসেন এবং দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গানের ভাষার শব্দচয়নে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত আনার মতো মনে হওয়ায় পূজা উদযাপন কমিটি তাৎক্ষণিক গান বন্ধ করতে গিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা চিন্তা করে বন্ধ করেনি। ইতিমধ্যে পরিবেশন করা একটি গান (গজল) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্নভাবে বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। বর্তমানে ওই গজলকে ঘিরে চট্টগ্রামের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। আসামিরা একই উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসাবশত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও অনূভূতিকে অবমাননা করে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গোলমাল সৃষ্টি করতে বিদ্বেষমূলক শব্দচয়ন করে গজলটি পরিবেশন করে। যার ফলে সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
জানতে চাইলে মামলার বাদী মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বলেন, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন, তা সজল দত্ত তাদের জানাননি। অনুষ্ঠানসূচিতেও এটা ছিল না।
আসামিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান সুকান্ত বিকাশ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। সবাই যেন মিলেমিশে চলা যায়, সেই পরিবেশ তৈরি করার জন্য এটা করতে হবে।
এর আগে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আটক দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ঘটনার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল কি না, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।
বৃহস্পতিবার ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্য দুর্গাপূজার মঞ্চে দুটি গান পরিবেশন করেন। এর মধ্যে একটি গান ছিল 'শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম'। সংগঠনটি জামায়াতে ইসলামী-সমর্থিত বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বৃহস্পতিবার রাতে পূজামন্ডপটিতে যান। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি।