বিএনপি নেতা রবির দায় দেখছে পুলিশ
তামিম হত্যার নেপথ্যে ফ্ল্যাটের ভাগাভাগি
প্রকাশ | ১২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
রাজধানীর হাতিরঝিল মহানগর প্রজেক্ট এলাকায় দীপ্ত টেলিভিশনের সম্প্রচার বিভাগের কর্মকর্তা তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার সকালে এই হত্যার ঘটনা ঘটে। বাড়ি নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বিরোধের জেরে জমির মালিকের ছেলেকে হত্যা করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহতের পরিবার ১৬ জনকে আসামি করে যে মামলা করেছে, তাতে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শেখ রবিউল ইসলাম রবিকে।
শেখ রবিউল পিস্নজেন্ট প্রোপার্টিজ নামের একটি ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওই কোম্পানি নিহত তামিমের বাবার জমিতে চুক্তির ভিত্তিতে একটি ভবন তৈরি করে। সেই ভবনের ফ্ল্যাট ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ডেভেলপার কোম্পানির লোকেরা বাড়িতে ঢুকে তামিমকে পিটিয়ে হত্যা করে বলে অভিযোগ।
একই ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনের প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ। মামুন তার শ্বশুরের নামে ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাট কিনেছিলেন।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে পিস্নজেন্ট প্রোপার্টিজের কর্মীসহ পাঁচজনকে। তারা হলেন- আব্দুল লতিফ (৪৬), কুরবান আলী (২৪), মাহিন (১৮), মোজাম্মেল হক কবির (৫২) ও বাঁধন (২০)।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার রুহুল কবির খান।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে হাতিরঝিল থানার ওসি সাইফুল ইসলামকে
দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তা রুহুল বলেন, ওই জমির মালিক হচ্ছেন নিহত তামিমের বাবা। সেখানে ভবন নির্মাণের সঙ্গে পিস্নজেন্ট প্রোপার্টিজের সঙ্গে তাদের যে চুক্তি হয়, তাতে জমির মালিককে পাঁচটি ফ্ল্যাট দেওয়ার কথা ছিল।
এ পর্যন্ত ডেভেলপার কোম্পানি দুটি ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেছে, বাকি তিনটির মধ্যে একটি ফ্ল্যাট মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মামুনের শ্বশুরের কাছে বিক্রি করে পিস্নজেন্ট প্রোপার্টিজ। এ নিয়েই গত তিন বছর ধরে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল।
এর জের ধরে পিস্নজেন্ট প্রোপার্টিজের ব্যবস্থাপক আব্দুল জব্বার, মাদক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মামুনসহ কয়েকজন বৃহস্পতিবার সকালে ভবনে ঢুকে অতর্কিতে হামলা করলে দীপ্ত টিভির কর্মকর্তা তামিম গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এক প্রশ্নে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার রুহুল বলেন, 'আমরা রাজনৈতিক পরিচয় দেখছি না। আমরা অপরাধ দেখছি, তাদের অপরাধী হিসেবে দেখছি। সে যেই হোক, দায় থাকলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আমরা চার্জশিট দেব। আমরা প্রাথমিকভাবে তার (রবি) সম্পৃক্ততা পাচ্ছি।'
'এ ঘটনায় কার কী ভূমিকা ছিল তা তদন্তে উঠে আসবে। এছাড়া মাদকের ওই কর্মকর্তাকে মামলার ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। আমরা তার সম্পৃক্ততার বিষয় তদন্ত করে দেখব।'
বিএনপি নেতার দায় কতখানি, এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'জমির মালিকের সঙ্গে ডেভেলপার কোম্পানির দ্বন্দ্ব। সুতরাং তার (কোম্পানির এমডি) তো দায়ই থাকবে। বাকিটা তদন্তে উঠে আসবে।'
এই ঘটনায় রাজনৈতিক প্রভাব থাকায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি- এমন অভিযোগের বিষয়ে উপ-কমিশনার রুহুল বলেন, 'আমরাও প্রাথমিকভাবে তার (ওসি) অবহেলা পেয়েছি। দায়িত্বে অবহেলার জন্য হাতিরঝিল থানার ওসিকে এর মধ্যেই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।'
ঘটনার বিষয়ে বিএনপি নেতা রবি বা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মামুনের বক্তব্য জানা যায়নি।