শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১

চালকের ঘুমে প্রাইভেটকার খালে, ঝরল আট প্রাণ

নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
  ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা ভ্রমণ শেষে পিরোজপুরে যাওয়ার পথে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের খালে পড়ে যায় -সংগৃহীত

কুয়াকাটায় ভ্রমণ করে পিরোজপুরে যাওয়ার পথে চালকের ঘুমে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে গেছে। এতে দুই পরিবারের আট জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বুধবার রাত ৩টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার নূরানী গেট এলাকায় পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামের শাওন মৃধা (৩২), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (২৫), ছেলে আবদুলস্নাহ (৩) ও শাহাদাৎ (১০) এবং শেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার মোতালেব (৪৫), তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার (৩০), মেয়ে মুক্তা (১২) ও ছেলে সোয়াইব (২)।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুকিত হাসান খান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে ওই ৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন। এর মধ্যে মোতালেবের সঙ্গে পাওয়া আইডি কার্ড থেকে তাদের পরিচয় জানতে পারেন তারা। মোতালেব সেনাবাহিনীতে সিভিল স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।'

স্থানীয়রা জানান, নিহত শাওন মৃধা পরিবারসহ ঢাকায় বসবাস করেন এবং ব্যবসা করেন। শাওন ও তার বন্ধুর পরিবারসহ কুয়াকাটা ভ্রমণ করে বুধবার সন্ধ্যায় মামা বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেয়। রাত ৩টার দিকে তাদের প্রাইভেট কারটি পিরোজপুরের নূরানীগেট এলাকায় পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়ে যায়। এতে শাওন ও তার বন্ধুর পরিবারসহ ৮ জনই মারা যায়। শাওন নিজেই তার নিজস্ব গাড়ি চালাচ্ছিলেন।

নিহত শাওনের মামাতো বোন রিমা আক্তার জানান, 'শাওন ভাই আমাকে সন্ধ্যায় ফোন করে কুয়াকাটা থেকে আমাদের বাড়িতে আসার কথা বলেন। তখন তার সঙ্গে ভাবি ও ভাইয়ার বন্ধুসহ ৮ জনের খাবার রান্না করার কথা বলেন। আমরা খাবার রান্না করে রাত আড়াইটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। আমার সঙ্গে তাদের রাত ১টায় কথা হয়। এরপর আর কথা হয় নাই। সকালে ঢাকা থেকে বড় ভাই ফোন করে তাদের নিহতের কথা জানান।'

নিহতের বড় মামা বাবুল ফকির বলেন, 'আমরা ফজরের আজানের সময় শুনেছি, ও (শাওন) গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করেছে।'

শাওনের বড় মামি বলেন, 'যখন বাড়িতে আসত শাওন, তখন বলত কি রান্না করছো? রাতে কিন্তু খাব। ওরা (শওনরা) পরিবারসহ ঢাকা থাকে, ঢাকা ওদের বাড়ি আছে। ওর ছোট মামি বাজার করে রান্না করেছিল।'

নিহতের ছোট মামি রেবা জানান, 'শাওনের বউ আমেনা বলেছিলেন, তারা কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে। সেখানে সারাদিন কাটানোর পর বুধবার রাতে তাদের আসার কথা ছিল আমাদের বাড়িতে। বৃহস্পতিবার আমাদের বাড়িতে থাকার পর রাতে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। শাওনের জন্য রুই মাছ, দেশি মুরগি ও করলা ভাজি করে রেখেছি। কিন্তু সকালে শুনতে পারি তাদের মৃতু্যর কথা।'

নিহত শাওনের খালা কান্নাজাড়িত কণ্ঠে বলেন, 'আলস্নাহ কি দেহালো, একটা মানুষও বাইচা নাই যে কি দিয়ে কি হলো বলবে, কোনো কিছু বলার নাই। আলস্নাহ আহতও করে নিহতও করে আলস্নাহ সবগুলো মানুষ নিয়ে গেল।'

জেলা সিভিল সার্জন মিজানুর রহমান জানান, 'সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের ৮ জনের মৃতু্য হয়। প্রাথমিক ধারণা গাড়িটি পানিতে পড়ার কারণে ডুবে তাদের মৃতু্য হয়। আটজনকে মৃতু্য অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়।'

পিরোজপুর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবদুস সোবাহান জানান, 'আমরা রাতে খবর পেয়ে ঘটনাস্থালে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় একে একে ৮টি মরদেহ উদ্ধার করি। তাদের মধ্যে চারজনের বাড়ি নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামে।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে