একাত্তরের রণাঙ্গনের অকুতোভয় যোদ্ধা মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী বীর উত্তম আর নেই। সোমবার প্রথম প্রহরে, ১২টা ৮ মিনিটে রাজধানীর একটি স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী 'কমল সিদ্দিকী' নামে পরিচিত। নড়াইলের হবখালী গ্রামে জন্ম হলেও পরবর্তীতে তিনি মাগুরায় স্থায়ী হন। তার বড় ভাই মে. জে. (অব.) এম. মজিদ উল হক ছিলেন জিয়াউর রহমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী।
তার কর্মজীবন শুরু হয় তখনকার ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটির সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যোগ দেন প্রতিরোধ যুদ্ধে। পরে ভারতে গিয়ে তিন মাস বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক কাজে যুক্ত থাকেন। এরপর ফের সশস্ত্র যুদ্ধে যোগ দেন।
প্রথম বাংলাদেশ ওয়ার কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে যশোর, নড়াইল ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেন কমল সিদ্দিকী। ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব সেক্টরে রেইড, অ্যাম্বুশ ও গেরিলা যুদ্ধে তিনি বীরত্বের পরিচয় দেন। তার যুদ্ধকৌশলে নড়াইলে নবগঙ্গার পাড়ের যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে মুক্তিবাহিনী। ৭ ডিসেম্বর নড়াইল শহরে তিনিই প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ান।
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় অবস্থানরত পাকিস্তানিরা তখনো আত্মসমর্পণ করেনি। সেক্টর কমান্ডার আবুল মঞ্জুরের নির্দেশে ভাটিয়াপাড়াকে শত্রম্নমুক্ত করতে যান কমল সিদ্দিকী। ১৮ বা ১৯ ডিসেম্বর ভাটিয়াপাড়ার যুদ্ধে তার চোখে গুলি লাগে। সেদিন যুদ্ধের পর আত্মসমর্পণ করে সেখানে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনারা।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকীকে বীর উত্তম খেতাব দেয় বাংলাদেশ সরকার। মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকীর স্ত্রীর নাম সৈয়দা রোকেয়া সিদ্দিকী। তাদের দুই মেয়ে রয়েছে।