যৌথ বাহিনীর অভিযান জোরদারের নির্দেশ
লুট হওয়া অস্ত্র-গোলাবারুদের ২৫ শতাংশ উদ্ধার হয়নি
প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
গাফফার খান চৌধুরী
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের শতকরা ২৫ ভাগ এখনো উদ্ধার হয়নি। যার অধিকাংশই ভারী আগ্নেয়াস্ত্র। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিবেচনা করে যৌথ বাহিনীকে আরও জোরালো অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বাড়াতে বলা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সারাদেশের পাঁচ শতাধিক থানায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট হয়। যার মধ্যে চার শতাধিক থানার অধিকাংশ অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং নথিপত্র লুট হয়ে যায়। সারাদেশ থেকে লুট হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৮১৮টি। যার এখন পর্যন্ত ৪ হাজারের কিছু বেশি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। ২ লাখের বেশি গোলাবারুদের এখনো হদিস মেলেনি।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকেই বারবার লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ থানায় বা স্থানীয় মসজিদে জমা দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছিল। এমনকি সারাদেশে পুলিশের লুণ্ঠিত মালামাল ফেরত দিতে মাইকিং করা হয়েছে। অস্ত্র জমাদানকারীদের নাম-পরিচয় গোপন রাখা হবে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না বলেও বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। অন্যের মাধ্যমে নাম-পরিচয় গোপন রেখে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছিল। তাতেও আশাতীত সাড়া মেলেনি।
সূত্র বলছে, এখনো দেশের যেসব এলাকার থানাগুলো থেকে বেশি লুটপাট হয়েছে, ওইসব এলাকার মসজিদগুলোতে শুক্রবার জুমার নামাজের আগে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার বিষয়ে ইমামের তরফ থেকে মানুষকে সচেতন করা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি
থানা পুলিশ, অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা প্রচারণা চলছে। এমনকি কোনো কোনো মসজিদে এখনো প্রতি ওয়াক্ত নামাজ শুরুর আগে ও পরে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার জন্য ইমামের মাধ্যমে সরকারি নির্দেশনার কথা মুসলিস্নদের মাধ্যমে মানুষকে জানানোর কার্যক্রম চলছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, থানার পরিবর্তে এখনো ইমামদের কাছে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। অনেকভাবেই নানা সুযোগ রাখা হয়েছে। যদিও এমন সুযোগ রাখার পরেও অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে আশাতীত সফলতা দেখা যাচ্ছে না। সচেতনতার পাশাপাশি চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে সারাদেশে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান চলছে।
দায়িত্বশীল একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যায়যায়দিনকে বলেন, সরকারের শেষ সুযোগ দেওয়ার পরেও আশাতীতভাবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা না পড়ায়, সেগুলো পেশাদার অপরাধীদের হাতে চলে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। এরপরই চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ বাহিনীর অভিযান চলছে। অভিযানে বেশ কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার হয়েছে। তবে তা আশাতীত বলা যাচ্ছে না। এখনো উদ্ধার হয়নি প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র। এ ছাড়া হদিস নেই ২ লাখের বেশি গোলাবারুদের।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ পুলিশের মুখপাত্র সহকারী মহাপরিদর্শক ইনামুল হক সাগর যায়যায়দিনকে বলেন, বারবার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তারপরেও আশাতীত হারে পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা পড়েনি। এখন পর্যন্ত লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগই পাওয়া গেছে। ফেরত পাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে অধিকাংশই মানুষ ফেরত দিয়েছে। বাকিগুলো যৌথ বাহিনীর চলমান অভিযানে উদ্ধার হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে শতকরা ২৫ ভাগ উদ্ধার হয়নি। উদ্ধার না হওয়া অস্ত্রের মধ্যে অত্যাধুনিক অটোমেটিক চাইনিজ রাইফেল, শটগান, অত্যাধুনিক পিস্তল, গ্রেনেড, বন্দুকসহ নানা ধরনের ভারী আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে। এখনো উদ্ধার হয়নি লুণ্ঠিত নানা ধরনের প্রচুর তাজা বুলেট।
পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের দায়িত্বে থাকা এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, এখনো কেউ লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দিলে সরকার অবশ্যই জমাদানকারীর বিষয়ে নমনীয় মনোভাব দেখাবে। দেরিতে লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেওয়ার যৌক্তিক কারণ থাকলে জমাদানকারীর বিষয়ে অবশ্যই পুলিশ সর্বোচ্চ ছাড় দিবে। শতকরা ২৫ ভাগ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার না হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক কারণেই যথেষ্ট আতঙ্কের। যত দিন লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার শেষ না হবে, তত দিন বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হিসেবে বিবেচনা করে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে। এমনকি এটিকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে অভিযান চলছে। সেই সঙ্গে সারাদেশে সব গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে নজরদারি অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান আরও জোরালো করার নির্দেশনা এসেছে সরকারের তরফ থেকে।
এদিকে সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র মুহাম্মদ তালেবুর রহমান যায়যায়দিনকে বলেন, গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে শাহ আলী থানা পুলিশ ঢাকার শাহ আলী মাজার শরীফ আড়ত কমপেস্নক্সের ১১ নম্বর শেডের ৯৭ ও ৯৮ নম্বর আড়ত এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানকালে আড়তের সামনের পাকা রাস্তার ওপর একটি পস্নাস্টিকের বাজারের ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ব্যাগে তলস্নাশি চালালে সেখানে পয়েন্ট টু টু বোরের ৬ রাউন্ড তাজা বুলেট, শটগানের ২ রাউন্ড তাজা কার্তুজ, ২টি মটোরোলা কোম্পানির ওয়্যারলেস সেট, ১টি সিসি ক্যামেরা, চাকু ও কিছু মাদক পাওয়া যায়।
উদ্ধারকৃত তাজা বুলেট, শটগানের কার্তুজ ও ওয়্যারলেস সেট দুটি পুলিশের লুণ্ঠিত অস্ত্র ও গোলাবারুদ কিনা সে বিষয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে যায়যায়দিনকে জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. ওবায়দুর রহমান।